
হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ওয়াজনবি শেখ
‘আমি কোনো দিন আল্লাহ, ভগবানকে দেখিনি। তবে আল্লাহর পাঠানো ফেরেশতার দেখা পেয়েছি। আর তার জন্যই আমি ওই কামরা থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছি।’
আজ শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই কথাগুলো বলছিলেন কাটোয়ার সুদপুর গ্রামের ওয়াজনবি শেখ (২৯)। তিনি দেশটির ওড়িশা রাজ্যে ঘটা ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, প্রায় ১২ বছর ধরে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন ওয়াজনবি। বাড়িতে তার বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। দুই মাস আগে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসার পর ফের কেরালায় যাচ্ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনাকবলিত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন ওয়াজনবি।
ওয়াজনবি বলেন, ‘ইঞ্জিনের কাছেই আমাদের বগি। আমাদের কামরায় আমার পরিচিত কেউ ছিল না। আমার সামনেই বসেছিলেন কল্পনাদিদি। শুধু নামটা জানতে পেরেছি। চেন্নাইয়ে দিদির স্বামীর দোকান আছে। সঙ্গে দিদির ছেলেও ছিল। ট্রেনে আলাপ হয়।’
ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে শিউরে উঠছেন এ রাজমিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘একবার বাথরুম ঘুরে এসে মাত্রই সিটে বসেছি, দিদি তখন রড ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। তখনই বিরাট ঝাঁকুনি। আমার মাথায় যেন কেউ বিদ্যুতের শক দিল মনে হচ্ছে। আটকে পড়েছিলাম। কিছুতেই বের হতে পারছিলাম না। তখন দিদির পা দুটো সামনে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বলি, ‘‘দিদি আমাকে বাঁচান। আমার দুটি মেয়ে আছে। আমি বাঁচতে চাই।’’ দিদি তখন আমাকে টেনে বের করেন। জানালা দিয়ে ঠেলে বাইরে বের করেন। এরপর যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি হাই রোডের পাশে শুয়ে রয়েছি।’
ওয়াজনবি বলেন, তখন ওই কামরার অনেকেই মারা গিয়েছেন। কারও হাত কাটা পড়েছে, কারও পা। জ্ঞান ফিরে আসার পর কল্পনাই তাকে বাসে করে নিজের ভাড়ায় হাওড়া নিয়ে আসেন। সেখান থেকে রেলপুলিশের সহায়তায় আসেন কাটোয়ায়।
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমার ব্যাগ, মোবাইল ফোন সব হারিয়ে যায়। পরনের পোশাক ছিঁড়ে যায়। কাছে টাকা ছিল না। সেই দিদিই আমাকে হাওড়া পর্যন্ত এনে ৫০০ টাকা দিয়ে জিআরপির হাতে তুলে দেন। দিদির মোবাইল নম্বরটা চেয়েছিলাম। কিন্তু জিআরপির তাড়াহুড়োতে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এখনও আমি বেঁচে রয়েছি কল্পনা দিদির জন্য। তার সঙ্গে আমার কোনো দিন দেখা হোক আর না হোক, দিদিই আমার জীবনের ফেরেশতা।’