10.1 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫

নিজের কাছে নিজের ছায়া

নিজের কাছে নিজের ছায়া - the Bengali Times
ছবিমার্টিনো ট্রিপোলি


আগে অনেক ব্যাপার নিয়েই মাথা ঘামাতাম, কখনও কখনও জড়িয়ে পড়তাম। কখনও প্রকাশ্যে কখনও মনে মনে। কেউ একটা অন্যায় করছে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়তাম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতাম। কেউ আমার সাথে খারাপ আচরণ করছে, অপমান করছে প্রতিক্রিয়া দেখাতাম। কেউ পিছনে কুৎসা রটনা করছে মেজাজ বিগরে থাকত। কেউ ভুল বুঝছে ভুল ভাঙ্গানোর জন্য চেষ্টা করতাম। সবার সাথে ব্যালেন্স করতে চাইতাম। কেউ একজন লেখা চাইছে পত্রিকার মান বিচার না করেই লেখা দিয়ে দিতাম। জগতের মানুষের যত সমস্যা সব যেনো আমার একলার। কেউ কাজ পাচ্ছে না তার জন্য কাঁজ খুজছি, নিজের জন্য না, অন্যের জন্য মানুষের কাছে রিকোয়েষ্ট করছি। সেটা কি দেশে কি বিদেশে। কেউ একজন বই প্রকাশ করবেন, প্রকাশক খুঁজে দেওয়ার কাজ করছি। কারো সাহায্য দরকার সাহায্য করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যাই, কারো চিকিৎসা দরকার সে চিন্তা আমার। কেউ বাসা ভাড়া দিতে পারছে না তাও আমার সমস্যা। কারো বাসা ভাড়া দরকার, বাসা খুঁজে দেওয়ার দ্বায়িত্ব আমার। এমনি অনেক কিছু আমি আমার উপর চাপিয়ে দেই। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় পাইনা।


কেউ একজন দেশ থেকে এসেছে তাঁকে এয়ারপোৰ্ট থেকে পিকআাপ করা, তাঁকে সময় দেওয়া, বেড়ানো, আপ্যায়ন করা এসব দ্বায়িত্ব আমার। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো, গিফট দেওয়া এগুলোও বাদ যায় না। যখন দেশে যাই গিফট কিনে নিয়ে যাই। কাৱ কি দৱকাৱ জানতে চাই। তাছাড়া নানা জনের নানা অনুরোধ থাকে। সবাইকেই খুশী করতে চাই। কিন্তু কেউই খুশী হয় না। দেশে গিয়েও মুক্তি নাই। সাবারই কিছু দাবী থাকে। যার আছে তারও থাকে। আমার চেয়ে ভাল আছে তারও থাকে। রেষ্টুরেন্ট খেতে বসলে প্রায়শই বিল আমি পরিশোধ করি, সেটা কি দেশে কি বিদেশে। যদিও এসব আমি আনন্দ নিয়ে করি। যখন স্কুলে পড়তাম তখন মালেক ভাইর মালাই আইসক্রিম খেতে পারতাম না, ঘটি গরম খেতে পারতাম না পয়সাৱ জন্য। সবাই খেতো আমি দেখতাম। তাই আমি খাওয়াতে ভালবাসি। আমি যে এতো ভাবি সবার ব্যাপারে কিন্তু অবাক হয়ে দেখি আমাকে নিয়ে কেউ তেমন ভাবে না, আমাকে কারো কিছু দিতে ইচ্ছে কৱে না। আমি কিছু প্রত্যাশাও করি না। প্রত্যাশা করলেই কষ্ট বাড়ে। প্রত্যাশাহীন প্রপ্তিতেই লুকিয়ে থাকে আনন্দ।

- Advertisement -


যাদের জন্য আমি কিছুই করি না, করার কথা মনেও থাকে না তারাই দেখি আমার জন্য ভাবে, আমার জন্য করে। আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে কেউ কেউ আমাকে শৰ্তহীন ভালবাসা দেয়। এরাই হচ্ছে প্রকৃত মানুষ। এই ধরণের মানুষের বড় অভাব আজকাল। একদল আছে শুধু পেতে চায়। মনে করে এটা তাদের প্রাপ্য, তাদের অধিকার। প্রকৃতপক্ষে মানুষ নিজেকে নিয়েই বেশি ভাবে। নিজের সুখটাই আগে দেখে। ত্যাগের মানুষিকতা বেশি মানুষের নাই। খুব অল্প মানুষের সাথে আপনার মনের মিল ঘটবে। সময়ের বিচারে প্রতিফলিত হয় কে আপন, কে পর। সামান্য কারণে বা সামান্য ভুলে যদি সম্পৰ্ক ভেঙ্গে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে সেটা কোনো সম্পৰ্কই ছিল না। সেই সম্পৰ্কে কোনো ফাঁক ছিল। ত্রুটি ছিল। বস্তুত মানুষ খুবই অসহায়। সে কারণে আমি আর আগের মতো সব ব্যাপারে মাথা ঘামাই না। নাক গলাই না। প্রতিক্রিয়া দেখাই না। যে যেভাবে বাঁচতে চায় বাঁচুক। যে যেভাবে সুখী হতে চায় হোক। সবাই স্বাধীন মানুষ। একক মানুষ। অনন্য মানুষ। আমি আমার পরিবারের লোকদের উপরও কখনও কিছু চাপিয়ে দেইনি। আমার উপরও কেউ কিছু চাপিয়ে দিক তা চাই না। আমাকে কন্ট্রোল করুক চাই না।


আমি কোনো পারফেক্ট মানুষ না। কেউই পারফেক্ট না। আমার অনেক ভুলত্রুটি আছে। সেগুলো মেরামতের চেষ্টা প্রতিনিয়ত করি আমি। পুরোটা পারি না। একদিকে সারাইকর কিছু কিছু মেরামত করে দিয়ে যায় অন্য দিকে আবার হারি পাতিলে টোল পড়ার মতো দাগ লেগে যায়। পৃথিবীতে কিছুই স্থায়ী না। কোনো কিছু নিয়ে বেশি বেশি ভেবে ফায়দা নেই। আকড়ে থেকে লাভ নেই। মোহ ত্যাগ করতে হবে। পৃথিবীতে কাৰ্যকারন ছাড়া কিছুই ঘটে না। সবকিছুর পিছনেই কোনো কারণ লুকানো থাকে। তাই যা কিছুই ঘটুক সেটা মেনে নিয়েই বাঁচতে হবে। সহজভাবে নিতে হবে। বিপদ আপদ যেমন থাকে, মুক্তিও থাকে। যত বড় বিপদ হোক সেটাকে ওভারকাম করতে হবে। নিজেকে নিজের সুখী করতে হবে। কখনও কখনও নিজেকে অনেককিছু থেকে সাসপেন্ড করতে হয়। প্রত্যাহার করে নিতে হয়। মনে রাখতে হবে সবকিছু আমাদের হাতে নেই, সবকিছু আমাদের কন্ট্রোলে নেই। শঙ্খ ঘোষের কবিতা দিয়ে শেষ করছি..

”আরো একটু মাতাল করে দাও।
নইলে এই বিশ্বসংসার
সহজে ও যে সইতে পারবে না।
এখনও ও যে যুবক আছে প্রভু।
এবার তবে প্রৌঢ় করে দাও-
নইলে এই বিশ্বসংসার
সহজে ওকে বইতে পারবে না”।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles