
১
আমি ছোটবেলা থেকেই সিনেমা পাগল। এসব নিয়ে আমি আগেও লিখেছি। আমার ছোট মামা একবার আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলেন। আমার মামারা যখনই আসেন একটা ঈদ ঈদ আমেজ শুরু হয়। মা তার ভাইদের জন্য যে কি করবেন ভেবে পান না। আজকাল ভাইবোনদের জন্য বোধহয় সেই মমতার জায়গাটা নষ্ট হয়ে গেছে। ছোট মামা পঞ্চাশের দশকের ম্যাট্রিক পাশ। তাই বেশ দাপুটে। সবাই তাকে ভয় পেলেও আমি পেতাম না। একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে মামা বললেন, জসিম সিনেমা দেখতে যাবি! তখন আমি মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ি। তখন থেকেই সিনেমার পোষ্টার দেখে ভাবতাম কি সুন্দর পোষ্টারের মানুষরা! তারা বাস্তবে দেখতে কেমন হবে! আমি লাফিয়ে উঠে বললাম যাব মামা। কবে নিয়ে যাবেন! কবে মামা! কবে!!
২
আমার ছোট মামার স্বভাব হচ্ছে এখন যেটা ভাববেন সেটা কবে করবেন তা কেউ জানে না। আমাদের বাড়িতে যখনই আসেন তার তিনমাস আগে থেকে প্রিপারেশন চলে। অথচ মাত্র চার ঘন্টার লঞ্চ জার্নি। ঢাপরকাঠি থেকে বরিশাল। সিনেমা দেখতে যাব এই উত্তেজনায় রাতে আমার ঘুম হয় না। স্কুলে অমনোযোগী। পড়ালেখায় মন নাই। আমি কল্পনায় কবরীকে দেখি, শবনমকে দেখি, সুজাতাকে দেখি..। সকাল হলেই মামার চারপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করি। মনে হয় মামা বলবেন চল আজকেই যাই। দিন যায়। মামা কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ান। এদিকে আমার অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। তারপর একদিন স্কুল থেকে এসে শুনি মামা চলে গেছেন! আমাকে সিনেমা না দেখিয়েই মামা চলে গেলেন!
৩
সাজু ছিল আমার পিঠাপিঠি বোন। লুকিয়ে লুকিয়ে ববিতার স্টাইল ফলো করে। ববিতার চুল, তার ভ্রু, গ্রীবা ভঙ্গিমা এসব। একদিন সাজুকে বললাম, চল আমরা সিনেমায় যাই। সাজু লাফিয়ে উঠে বলল, সত্যি যাবি! আমিও যেতে চাই। কিন্তু কিভাবে যাব! মা কি রাজী হবে! পয়সাই বা পাব কোথায়! সাহস করে মাকে গিয়ে বললাম, মা আমরা সিনেমা দেখতে যাব। মা রাজী হলেন না। আমি হতাশায় ভেঙ্গে পরি। একদিন সাজু কিভাবে যেনো মাকে রাজী করালো। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল আমার বড় ভাইকে নিয়ে। সে খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ। ধরা পরলে খবর আছে। তা সত্ত্বেও আমি আর সাজু একদিন ম্যাটিনি শোতে রাজ্জাক ববিতার স্বরলিপি ছবিটি দেখে ফিরছি, দেখি বড় ভাই লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে…। আজ মা নাই, বড় ভাই নাই, সাজু নাই, মামাও নাই! শুধু সাজুর প্রিয় গান আছে ’গানেরই খাতায় স্বরলিপি লেখে..’