0.2 C
Toronto
মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০২৫

টাইটান নিয়ে কিছু কথা

টাইটান নিয়ে কিছু কথা
তথ্য থেকে জানা যায় ক্ষুদ্র ট্যাবলেট আকৃতির টাইটান ডুবোজাহাজটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ২২ ফুট লম্বা পাঁচ জন যাত্রী কোন রকমে এতে থাকতে পারে

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওশানগেট এক্সপেডিশনস-এর পর্যটকবাহী সাবমার্সিবল ‘টাইটান’ ডুবোজাহাজ আটলান্টিক মহাসাগরে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে গভীর সমুদ্রের তলদেশে বিস্ফারিত হয়েছে।এই দুর্ঘটনায় সাবমেরিনের ক্যাপটেন সহ পাঁচ জনই মৃত্যুবরন করেছে।

তথ্য থেকে জানা যায়, ক্ষুদ্র ট্যাবলেট আকৃতির টাইটান ডুবোজাহাজটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ২২ ফুট লম্বা। পাঁচ জন যাত্রী কোন রকমে এতে থাকতে পারে। এই ক্ষুদ্র সাবমেরিনটিকে নিয়ন্ত্রন করে সমুদ্রের উপর ভাসামান অন্য আরেকটি মাদার ভ্যাসেল। মাদার ভ্যাসেলের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র সাবমেরিনটি পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন কারনে এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অন্য কোন উপায় নেই টাইটানের সাথে যোগাযোগ করার।

- Advertisement -

এমন একটি ক্ষুদ্র সাবমেরিন সমুদ্রের প্রায় ৪০০০ ফুট গভীরে গিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়ার মধ্যে সব সময় রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি ছিল। বহুবার অনেকেই এই সাবমেরিনের ত্রুটিপূর্ণ safety -র বিষয়টি জানিয়ে সতর্কও করেছিল। এমনকি যে সব যাত্রী এর আগে এই সাবমেরিনে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিল তারাও এটি ঝুঁকিপূর্ন বলে সতর্ক করেছিল।
টাইটানিক ছবির নির্মাতা জেমস ক্যামেরন তার ছবি নির্মাণের পূর্বে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য অন্য ডুবোজাহাজ দিয়ে ৩৩ বার সমুদ্রের তলদেশে গিয়েছিলেন। তিনিও এই ধরনের যাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে বার বার সতর্ক করেছিলেন।

মেক্সিকান অভিনেতা অ্যালান এস্ট্রাডার দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। ডেইলি মেইল সূত্রে জানা যায়, এই অভিনেতা বলেছেন যে সকল ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকার পরেও তিনি ২০২২ সালের জুলাইয়ে ‘টাইটান’ সাবমার্সিবলে চড়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

এস্ট্রাডা জানান, তাদের অভিযান সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছিল যখন এই সাব এর শক্তির উৎস ৪০ শতাংশে নেমে এসেছিল।

তিনি বলেন, “এই সাবমার্সিবলের দুটি ব্যাটারি আছে, যখন দ্বিতীয় ব্যাটারিতে মাত্র ৪০ শতাংশ অবশিষ্ট ছিল, তখন দ্রুত আমাদের পানির উপরে তুলে আনা হয়। অর্থাৎ, তারা চার ঘণ্টা আপনাকে পানির নিচে রাখবে বললেও, তা সম্পূর্ণ হয় না।”

কিন্তু ওশানগেট এক্সপেডিশনস থেকে বরাবরই এই সব সতর্কগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তারা এই সতর্কবার্তাগুলিকে একেবারেই আমলে নেয়নি।

যতটুকু অনুমান করা যায়,সমুদ্রের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখানোর নামে এই ভয়াবহ এবং এডভেঞ্চার ট্যুরের উদ্দেশ্য ছিল বানিজ্যিক।প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ওশানগেট ২৫০,০০০ ইউএস ডলার নিয়েছিল। যাত্রার আগে প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে agreement সই করে নেওয়া হয়েছিল।

আসলে সেটা agreement তো নয়, একধরনের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করার মতো ব্যাপার। কারন, সেই চুক্তির মধ্যে রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি উল্লেখ করা ছিল।
এর অর্থ হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে এক ধরনের মুচলেকা নেওয়া এই বলে যে, তুমি স্বজ্ঞানে সব ঝুঁকিগুলি জেনে শুনেই এই সাবমেরিনের যাত্রী হতে চাচ্ছো। এটা অনেকটা অর্থ দিয়ে মৃত্যু কেনার মতো ভয়ংকর একটি চুক্তি।

বলাবাহুল্য, ওশানগেটের উদ্যোক্তরা আইনগত কোন ফাঁক রাখেননি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

কিন্তু এর পরেও কথা থেকে যায় এই ঝুঁকিপূর্ণ একটি সাবমার্সিবলকে কেন সরকার থেকে ট্যুর পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল?

অনুমতি দেওয়ার আগে কেন এর নিরাপত্তার ঝুঁকিগুলিকে আরো ভালোভাবে যাচাই করা হয়নি?
এই ঝুঁকিগুলি তো আর এমন না যে, ৯১১ কল করলে পুলিশ এসে সংগে সংগে কাউকে উদ্ধার করবে!!

সুবিশাল সাগরের তলদেশে হারিয়ে গেলে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা কি এতই সহজ?

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles