0 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

টরন্টোর মেয়র নির্বাচন

টরন্টোর মেয়র নির্বাচন
এবারের মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তিনি অলিভিয়া চাও

টরন্টোর মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ১০২ জন। কানাডা গনতান্ত্রিক দেশ, যে কেউ দাঁড়াতে পারেন। এর মধ্যে বাাংলাদেশী প্রার্থী ছিলেন সম্ভবত চারজন। শরীফ আহমেদ, আসাদুল আলম, ফাইজুল মাহী এবং মনোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে দুজনকে সামান্য চিনি, বাকী দু জনের নাম দেখে ধারনা করলাম তারাও হয়তো বাংলাদেশী। ১০২ জন প্রার্থীর মধ্যে শরীফ আহমেদ তুলনামুলকভাবে ভাল করেছেন। ৮১৪ ভোট পেয়ে তিনি ১৪তম স্হান অধিকার করেছেন। বাকী তিনজনের মধ্যে আসাদুল আলম ২৫৭ ভোট পেয়ে ৩৭তম, ফাইজুল মহি ২৫৫ ভোট পেয়ে ৩৮তম এবং মনোয়ার হোসেন ১৬৪ ভোট পেয়ে ৫৭তম হয়েছেন।

এদের কারো সাথেই আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, তবে একজন প্রার্থী কিছুদিন আগে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়েছিলেন। ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়ে বেশ ভারী কিছু ডিগ্রীধারী তিনি তা জানাতে ভুলেন নি। কিন্তু তখনো জানতাম না তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে তিনি কি মনে করে আমাকে খুদে বার্তা দিলেন যাতে তাকে আমি ভোট দেই। আমি বিনয়ের সাথে তাকে বললাম, আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন, এখন অলরেডি আমি ডিসাইড করে ফেলেছি। তখন তিনি কিছু তীর্যক বাক্য ছুঁড়ে আমাকে আনফ্রেন্ড করে বিদায় নিলেন। আমি কিছুটা অবাক হলাম এই ভেবে যে একজন পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার ইত্যাদি উচুঁ ডিগ্রীধারী ব্যক্তির জনপ্রতিনিধি হবার বাসনা অথচ ভোটের আগেই তিনি আমার সাথে এরকম রূঢ় আচরণ করলেন!

- Advertisement -

জনপ্রতিনিধি হবার সামান্য অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যিনি বা যারা ভোটে প্রার্থী হন, তাদের কখনোই উচিত নয় ভোটারদের সাথে খারাপ ব্যবহার করা। কারণ হলো, ইউ নেভার নো! ভোট দেবার আগ মূহুর্তেও ভোটারের মাইন্ড চেন্জ হয়ে যেতে পারে। এবং সত্যি বলতে আমারও হয়েছে। এইবার মেয়র নির্বাচনের প্রথম দিকে ভেবেছিলাম অলিভিয়া চাও এর কথা। কিন্তু পরবর্তীতে সবাই বলাবলি শুরু করলো, তিনি বিজয়ী হলে প্রপার্টি ট্যাক্স অনেক বাড়িয়ে দিবেন। তখন আমি অপেক্ষা করলাম এই বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি কি বলেন সেটা জেনে আমি ডিসাইড করবো। দেখলাম তিনি এ বিষয়ে সম্পুর্ণ নিরবতা পালন করলেন। টরন্টোর একজন হোম ওনার হিসেবে চিন্তিত হলাম। ফলে আমি মন পরিবর্তন করে ভাবলাম, ভোট দিব সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মিটজি হান্টারকে। সেটাই ঠিক ছিল কিন্তু একেবারে শেষ মূহুর্তে আমি সেন্টারে যেতে যেতে মন পরিবর্তন করে ভোট দিলাম এনা বাইলাওকে। কেন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম? পুরোটাই তাদের কর্মসুচী ও সম্ভাব্য জয় পরাজয়কে সামনে রেখে। ছোটবেলার মত গুয়ার্তুমিকে প্রশ্রয় দিলাম না। একবার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমি জেনারেল ওসমানীকে ভোট দিয়ে বলেছিলাম, আমার একটা ভোট পেলেও আমি জেনারেল ওসমানীকেই ভোট দিব। কে জিতলো না জিতলো সেটা আমার বিবেচনার দরকার নাই। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। জনবিচ্ছিন্ন থেকে কোন ভাল কিছু করা সম্ভব নয়। জনগণের সাথেই থাকতে হবে আবার একই সাথে নীতি ও আদর্শের সাথে বাস্তবতার সমন্বয় করেই সমাজ পরিবর্তনের লড়াইটা জারী রাখতে হবে।

তো টরন্টোর বাংলাদেশী প্রার্থী মনে রাখেন নাই যে একজন ভোটার শেষ মুহুর্তেও মন পরিবর্তন করতে পারেন। কাজেই কাউকে আঘাত না করে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া যারা মন থেকে সমাজ সেবা করেন, তারা নির্বাচনে কে ভোট দিল না দিল তা কখনোই কেয়ার করেন না। ভোট না দিলেই তিনি শত্রু হয়ে যান না। সকলকেই মন থেকে ভালবাসতে হবে। আপনি যখন নির্বাচিত হবেন, তখন আপনি সকল নাগরিকের মেয়র হবেন। শুধুমাত্র যারা আপনাকে ভোট দিবে, তাদের নয়। এবারের মেয়র নির্বাচনে যিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি অলিভিয়া চাও। আমার ভোট না পেলেও তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী এনা বাইলাওয়ের চেয়ে ৩৪,১৯৭ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ী হয়েই তিনি তার প্রথম ভাষণে প্রথম কথাটাই বলেছেন যারা তাকে ভোট দিয়েছেন কিংবা দেন নি, তিনি সকলেরই মেয়র, সকলকেই তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন। আমিও জানতাম অলিভিয়া চাও একজন সত্যিকার জনদরদী রাজনীতিক এবং সমাজ সেবক। তিনি এর আগে সিটি কাউন্সিলর ছিলেন, তার প্রয়াত স্বামী জ্যক লেটন ছিলেন কানাডার অন্যতম জনপ্রিয় জননেতা যিনি নিজেও সিটি কাউন্সিলর থেকে পার্লামেন্টে তার দলকে এক ধাক্কায় বিরোধী দলে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। সাইকেল চালিয়ে গণমানুষের মনের মনিকোঠায় পৌঁছে যাওয়া নেতা ছিলেন জ্যাক লেটন। আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত টরন্টোর নুতন মেয়র অলিভিয়া চাওকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। নীচের লিংকে সকল প্রার্থীর ভোটের ফল দেখে নিতে পারেন।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles