6.2 C
Toronto
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

জীবন থেকে নেয়া -৩৩

জীবন থেকে নেয়া -৩৩

অতি সম্প্রতি আমার একটি ছবি দিয়েছিলাম পোষ্টে। ১০০ এর উপর শুভানুধ্যায়ির নজর এসেছে ছবিটিতে। আমার ভালো লেগেছে। একজন লিখেছেন এমন থাকা যায়না যদি থাকা যায় তাহলে যেন আবার অমন হই। এমন হওয়ার গল্পটি আজ লিখবো তবে শরীরকে এমন রাখা সম্ভব যেটা করতে হবে সেটা হলো আহার নিয়ন্ত্রণ ।
কানাডার ইনুভিকে আমি ছিলাম প্রথম দফায় ২০১৫-২০১৯ এবং ২য় দফায় ২০২১-২০২২। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের এক নতুন সহকর্মী নিয়ে স্থানীয় একটি হোটেলে আমরা ৩ জন ডিনার খেতে বসেছিলাম। সেখান থেকে ফিরেই রাতে পেটে সমস্যা দেখা দিল। কতবার যে টয়লেটে সে রাতে গেলাম তা মনে নেই তবে রাতে ঘুমাতে পারিনি সেদিন। পর দিন একজন ডাক্তারের সাথে কথা বললাম যাকে আমি চিনি এবং তিনিও জানেন যে আমি একজন ডাক্তার।

- Advertisement -

ফ্লাজিল ট্যাবলেট ছাড়া আর কোন ঔষধ দিলেন না সাথে প্যাথলজি রিকুইজিশন ধরিয়ে দিলেন। ক দিন পর সব রিপোর্টে ভালো এলো, কোথাও কোন রোগ জীবানু নেই কিন্তু ডাইরিয়াতো বন্ধ হয়না। আমি কিছু খেলেই শুরু হয় টয়লেটে যাওয়া। বিকালে অফিস থেকে এসে কিছু খাই আর সাথে সাথেই শুরু হয় টয়লেটে যাওয়া আসা। রাতে পেটের মধ্যে গড় গড় শব্দ হয় মনে হয় পেটের মধ্যে কেউ হেটে বেড়াচ্ছে। রাতে পরনের কাপড় খুলে ঘুমালাম ক দিন কারণ সব সময় তৈরী থাকতে হতো টয়লেটে যাওয়ার জন্য।
একদিন জোর করে আমার বন্ধু ডাক্তারকে দিয়ে এনটিবায়োটিক লেখালাম। ৭ দিন ভালো ছিলাম সেটা খেয়ে কিন্তু আবার যা তা অবস্থা। আবার ফ্লাজিল। ডোজ বাড়ানো হলো কিন্তু কোন কাজ হলোনা। সকালে না খেয়েই কাজে আসি কারন এ অবস্থায় পেটে ঝামেলা কম হয়। আমার ওজন ধীরে ধীরে কমছে। আমি শুকিয়ে যাচ্ছি। আমার সুপারভাইজার দেখে বললেন আয়নায় চেহারা দেখিস? তুই শুকিয়ে যাচ্ছিস।

আমি ব্লাড প্রেসারের ও ডায়াবেটিসের ঔষধ নিয়মিত খাই। এ সময় অফিসে মনে হতো আমি হাইপোগ্লাইসিমিক ( রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়া) হয়ে যাচ্ছি তখন একটা জুস খেলেই আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতাম। একদিন সকালে ফটোকপিয়ার মেশিনে জরুরী কিছু অফিস কাগজ ফটোকপি করছি ঠিক ঐ সময় বমি বমি ভাব। সোজা অফিসের টয়লেটের বেসিনে চলে গেলাম। সেখান থেকে কিছু সময় পর জরুরী বিভাগে নিজের পরিচয় দিয়ে একটি বেডে শুয়ে পড়লাম।

নতুন একজন কম বয়সী মেয়ে ডাক্তার আমাকে দেখতে এলো। সে আমার রোগের বিবরণ নিচ্ছে। আমি তাকে খেয়াল করছি আর সে আমার কথা খেয়াল করছে। ব্লাড প্রেসার খুব কম পেল। এক পর্যায়ে তাকে বললাম-আমি বাংলাদেশী ডাক্তার, এবার সে চুপচাপ। -তোমার কথা আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছি আর ভাবছি এতো গুছিয়েতো কোন রোগী কখনো কথা বলেনি। এখন বুঝছি।
কিছুক্ষন পর তার ট্রেইনার ডাক্তার এলেন-কি ব্যাপার? তুমি ডাক্তার তা তো কোন দিন বলোনি।– আমি সব ভুলে গেছি কি বলবো।-তা কি হয় আমি তো পাইলট ছিলাম পরে মেডিকেল পড়ি কিন্তু প্লেন চালানোর সব কিছু এখনো মনে পড়ে। আমি হাসলাম। সিনিয়র ডাক্তার চলে গেলেন। জুনিয়র ডাক্তার আবার এলো।-কিছুক্ষণ আগে নেয়া তোমার রক্তের রিপোর্ট ভালো এসেছে। -এখন কি করবো। সে আমাকে বাসায় যেতে বলার চেষ্টা করছে।-একটা নরমাল স্যালাইন পুশ করতে পারো? সে তাই করলো।
স্যালাইন শেষ হওয়ার পর ব্লাড প্রেসার চেক করে নরমাল পাওয়া গেল। এবার আমি নিজেই বললাম-বাসায় যাবো। এভাবে এক মাস পার হয়ে গেল। ধীরে ধীরে ডাইরিয়া ভালো হতে শুরু করলো। আমি কিছু খেলে বমি হতো এখন আর হয়না।

রুটিন চেক আপে পাওয়া গেল ওজন কমেছে ১২ কেজি। ৩৬ ঘেরে প্যান্ট ছেড়ে ৩৪ ঘেরের প্যান্ট পরতে হচ্ছে। শরীরের চামড়ার নীচের ফ্যাট অনেক আগেই সরে গেছে তাই গলার চামড়া কুচকে গেছে, মুখ শুকিয়ে গেছে। ব্লাড সুগার ৫.০ তে চলে গেছে। ডাক্তার আমার সব ঔষধ বন্ধ করে দিলেন। আমি সেই ভাবেই চলেছি। এর পর ২০১৮ সালে ধীরে ধীরে ওজন রিকভার করতে শুরু হলো। মাত্র ৬ মাস ঔষধ ছাড়াই চলেছি।ওজন বাডছে, ব্লাড প্রেসার ও ব্লাড সুগার লেভেল ধীরে ধীরে বাড়ছে দেখে ডাক্তার এ দুটি রোগের ঔষধ আবার চালু করে দিলেন।
এই ছবিটি ২০১৮ সালের মার্চে তোলা। তখন শরীরে কোন মেদ নেই। সমান পেট ফুরফুরে শরীর মনে হতো আমি বাতাসে ভাসছি। আমি সেদিন দেখতে গিয়ে ছবিটি ভালো লাগলো সাথে সেই দিনগুলির কথা মনে পড়লো। ডাক্তার হিসাবে জানি আর নিজের শারীরিক অভিজ্ঞতার আলোকেই বলি ওজনই আমাদের সুস্থ্য শরীরের প্রধান শত্রু। একাকী জীবনের ঐ দিনগুলি ছিলো অনেক কষ্টের।
ইনুভিক, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles