মাসখানেক লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পর বরখাস্ত হতে হলো চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে। তার জনসমক্ষে না আসা নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ল। বেশ কিছুদিন ধরে গুঞ্জন, মার্কিন এক টিভি উপস্থাপিকার সঙ্গে প্রেম চলছে কিনের। এ কারণেই তার এমন আড়ালে চলে যাওয়া কি না, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
আজ মঙ্গলবার কিন গ্যাংকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওয়াং ইকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছে চীন সরকার। তবে কিনকে সরানোর কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের খুব কাছের মানুষ ছিলেন কিন। তারপরও তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, গুরুতর কোনো অপরাধ করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে মার্কিন নারী সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টিই সবার ওপরে রয়েছে।
প্রায় মাস খানেক ধরে জনসমক্ষে নেই কিন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তার সম্পর্কে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। ৫৭ বছর বয়সী এই নেতার সবশেষ আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি ছিল গত ২৫ জুন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বৈঠক হয়েছে, যেখানে তার উপস্থিতি আবশ্যক ছিল। কিন্তু তাকে সেখানে দেখা যায়নি। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাতিলও হয়েছে। বরখাস্তের পরও কিন প্রকাশ্যে আসেননি। কোনোরকম মন্তব্যও করেননি। এতে করে আলোচনা ও সন্দেহের ঝড় উঠেছে দেশটিতে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা ফু জিয়াওটিয়ানের সঙ্গে কিনের সম্পর্ক চলছিল বলে গুঞ্জন ছিল। কিনের আড়ালে চলে যাওয়ার পর থেকে খোঁজ মিলছিল না ফুয়েরও।
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরেও দাবি করা হয়েছে, কিন যখন থেকে লাপাত্তা ছিলেন, একই সময়ে ফুয়েরও কোনো খোঁজ মিলছে না। মার্কিন নাগরিক হলেও ফু জিয়াওটিয়ানের জন্ম চীনে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা ফু প্রায়ই চীনের বড় কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ২০২২ সালের মার্চে তিনি কিনের সাক্ষাৎকার নেন। সেই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়। তাদের মধ্যে অন্যরকম এক সম্পর্ক চোখে পড়েছিল সবার। এরপর থেকেই শুরু হয় জল্পনা ও আলোচনা।
চীনা মানবাধিকার কর্মী লিন শেংলিাং বলেন, কিন ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালন করেন। আলোচিত ওই সাক্ষাতকারটি নেওয়া হয় ২০২২ সালের মার্চে। তখন থেকেই তাদের সম্পর্ক হয়ে থাকতে পারে।
ডেইলি মেইল জানায়, সাক্ষাৎকারের বছরই নভেম্বরে ফু-এর ছেলে সন্তান হয়। সবশেষ সেই সন্তানকে নিয়ে একটি বিমানে বসে থাকা সেলফি প্রকাশ করেন তিনি। এরপর থেকে তারও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
চীনে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের এমন হুটহাট নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। অনেক সময় পরে দেখা যায় তারা অপরাধ তদন্তের আওতায় রয়েছেন। আবার অনেক সময় তারা আড়ালে চলে যান ও পরে ফিরে আসেন জনসমক্ষে। কিন্তু দৃশ্যপটের বাইরে থাকার কারণ সম্পর্কে তারা কিছু বলেন না। শি জিনপিং নিজেও ২০১২ সালে চীনের নেতা হওয়ার আগে প্রায় দু সপ্তাহ জনসমক্ষে আসেননি। তখন তার স্বাস্থ্য এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিষয় আলোচনায় এসেছিল।