11.6 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

বাবা প্রবাসে, মা ‘লাপাত্তা’! শুধু কাঁদে ১৭ মাসের আইয়ুব

বাবা প্রবাসে, মা ‘লাপাত্তা’! শুধু কাঁদে ১৭ মাসের আইয়ুব
ছবি সংগৃহীত

হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টে গেল। ১৭ মাস বয়সী শিশু আইয়ুবের আগমনে ভারি হয়ে উঠল পরিবেশ। সবার অপলক দৃষ্টি তার দিকে। দাদির কাছ থেকে আইয়ুবকে কোলে নিলেন নানি। উপস্থিত স্বজনদের চোখে জল। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আইয়ুব।

আইয়ুবের বাবা প্রবাসে। এক সপ্তাহ ধরে মা রিয়া মণির খবর নেই।

- Advertisement -

আইয়ুবের ঠাঁই কখনো দাদার বাড়ি, কখনো নানার বাড়ি। তার ‘মা মা’ ডাক সবার হৃদয়ে দাগ কাটে। মাকে খুঁজতে থাকা অবুঝ ওই শিশুর কান্না থামানো কখনো দায় হয়ে পড়ে। খাওয়াদাওয়া এক প্রকার বন্ধ করে দিয়েছে আইয়ুব।
তাকে নিয়ে দুই পরিবারে নানা চিন্তা।

পরিবারের দাবি, আইয়ুবের মা রিয়া মণিকে তার প্রতিবেশী এক শিক্ষক অপহরণ করে নিয়ে গেছেন। বিষয়টি জানাতেই বুধবার দুপুরে রিয়া মণিদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের বড় কুড়িপাইকা গ্রামের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এ সময় নানা-নানিকে সঙ্গে করে আইয়ুব উপস্থিত হতেই অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রিয়া মণির মা বিলকিছ বেগমের পক্ষে তার স্বামী বিল্লাল ভূঁইয়া।
লিখিত বক্তব্যে ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অভিযোগ করা হয়, নিকটতম প্রতিবেশী পার্শ্ববর্তী হীরাপুরের মৃত জানু মিয়ার ছেলে মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির মাস্টার (৩৭) একসময় রিয়া মণিকে পড়াতেন। রিয়া মণির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করেন মনির। এ বিষয়ে মনিরকে নিষেধ করা হলেও তিনি কথা শোনেননি। মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে খুব কম বয়সেই রিয়াকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে তার স্বামী প্রবাসে রয়েছেন। তার একটি ১৭ মাস বয়সী ছেলেসন্তানও আছে।

বক্তব্যে তিনি বলেন, কিন্তু বিয়ের পরও মনির মাস্টার আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চাইলে আবার নিষেধ করা হয়। এ কারণে সে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে। গত ২০ জুলাই ওই মামলার হাজিরা দিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গেলে ফেরার সময় মনির মাস্টার ও তার সঙ্গীরা আদালত গেটের সামনে থেকে রিয়া মণিকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। এর পর থেকে রিয়া মণির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে সে প্রবাসী স্বামী পলাশ ভূঁইয়াকে তালাক দিয়ে কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে মনিরের ভয়ে এখন রিয়া মণি নানা কথা বলে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে ভিডিও পোস্ট করাচ্ছে। মূলত রিয়া মণি এখন মনিরের হেফাজতেই আছে। এ সময় রিয়া মণিকে উদ্ধারে স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, শিক্ষক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা মিথ্যা বলে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। আরেকটি অপহরণ মামলা নথিভুক্তই করা হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশের কাছে বলেও লাভ হয়নি। অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে মনিরের সখ্য রয়েছে। তার ভাইয়েরাও বেশ প্রভাবশালী।

কান্নাজড়িতে কণ্ঠে রিয়া মণির মা বিলকিছ বেগম বলেন, ‘১৭ মাস বয়সী আমার নাতিটি মাকে না দেখে কান্নাকাটি করে। কিছু খেতে চায় না। দিন দিন না খেয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তিন দিন আমাদের এখানে অনেক কষ্ট করে রেখেছি। এর পর থেকে সে দাদির বাসায় আছে।’

এদিকে বুধবার রিয়া মণির একাধিক ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রিয়া মণি দাবি করে, সে পরিবারের লোকজন তথা শ্বশুর ও বাবার বাড়ির লোকজনের অত্যাচারে আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। এ ঘটনায় মনির মাস্টারসহ কয়েকজনের নামে মিথ্যা রটনা রটানো হচ্ছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি বিবাহিত। রিয়া মণি তার বাড়িতে এসে প্রাইভেট পড়লেও তার স্ত্রীই বেশির ভাগ সময় পড়িয়েছেন। ছাত্রী হিসেবে কিছুদিন আগে একটি রেস্টুরেন্টে বসে বার্গার খাওয়া নিয়ে মিথ্যা তথ্য রটানো হয় এবং মামলাও দেওয়া হয়। তবে পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়নি। মূলত তার বাবা জানু ভূঁইয়ার নামে বাড়ির সামনে একটি মার্কেট করা হলে ওই পক্ষ হিংসা শুরু করে। এর পর থেকেই তারা নানা কথা বলতে থাকে। রিয়া মণিকে আমি বিয়ে করেছি কিংবা রিয়া মণি আমার কাছে আছে- এমন সব কথা ডাহা মিথ্যা।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles