14.2 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

প্রতারণায় বন্ধুত্বের ফাঁদ!

প্রতারণায় বন্ধুত্বের ফাঁদ!
বিপুল সংখ্যক মানুষকে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্রের হোতা প্রতারক বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীরা

ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসের মাধ্যমে পরিচয়। অল্প কয়েকদিনের পরিচয়ে বন্ধুত্ব। এরপর বিদেশি বন্ধু আপনার জন্য দামি উপহার পাঠানোর গল্প ফাঁদবেন। উপহার পেতে কাস্টমস ফির নামে টাকা দিলেন, তো ফাঁদে পড়লেন। একবার ফাঁদে পড়লে ধাপে ধাপে বাড়ে টাকার অঙ্ক। এভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষকে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্রের হোতা প্রতারক বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীরা। প্রতারণার ঘটনার একটি মামলায় সম্প্রতি আদালতে বিপ্লব লস্কর ও তার পাঁচ সহযোগীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গত ১৯ জুলাই দেওয়া সিআইডির অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপসে বন্ধুত্বের মাধ্যমে প্রতারণা, জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীরা। সেই জালিয়াতির টাকায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। বিপ্লব লস্করের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জালিয়াতি করে আত্মসাতের ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনেদেনের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।

- Advertisement -

সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানান, অভিযোগপত্রে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলোÑ বিপ্লব লস্কর, তার প্রধান সহযোগী হামিদুর রহমান, রুমা আক্তার, আলাল হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও হেলাল মিয়া। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক রুহুল আমিন।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষের সহযোগিতায় বিপ্লব লস্কর ও তার সহযোগীরা একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অবৈধ টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে প্রভাবশালী অপরাধী চক্রটি কয়েকশ জনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেয়। জালিয়াতি ও প্রতারণার টাকায় তৈরি করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে বিলাসবহুল তিন কোটি টাকার বাড়ি। বিপ্লব লস্করকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ভাড়া করতে সহযোগিতা করত তার অন্যতম প্রধান সহযোগী হামিদুর রহমান।

এই চক্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের পর প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ খুইয়েছেন এমন শতাধিক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাশিদুল হক নামে এক ব্যক্তি খুইয়েছেন ৪৮ হাজার টাকা, ইতি রানী দেবনাথ ডাচ্্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, নুর আজিম রুমি নামে এক ব্যক্তি খুইয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, পারভীন আক্তার ২ লাখ টাকা, আরিফুল ইসলাম ১ লাখ ৪৫ হাজার, রুহুল আমিন ৩ লাখ টাকা, ফখরুল ইসলাম দেড় লাখ টাকা খুইয়েছেন এই চক্রের হাতে।

জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা বিপ্লব লস্করের (৪৩) বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরে, সেখানে একসময় কুলি হিসেবে কাজ করত। ২০০০ সালে ঢাকায় এসে মিরপুরে ফুটপাথে ভ্যানের ওপর গার্মেন্টসের ব্যবসা করাকালে কয়েকজন নাইজেরিয়ান নাগরিকের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। ২০০৭ সালের দিকে তাদের মাধ্যমেই প্রতারণায় জড়িয়ে পড়ে বিপ্লব।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় কাপড়ের ব্যবসা করতেন হামিদুর রহমান। কাপড়ের ক্রেতা হিসেবে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে বিপ্লব লস্কর। দ্রুত ধনী হওয়ার লোভ দেখিয়ে বিপ্লব লস্কর হামিদুরের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ছবিসহ কাগজপত্র নিয়ে নেয়। প্রতি এক লাখ টাকা লেনদেনে ১৫ হাজার টাকা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ভাড়া দেওয়ার চুক্তি হয়।

হামিদুরের স্ত্রী রুমা আক্তার নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের ফোন দিয়ে বলতেন, আপনার নামে দামি উপহার এসেছে। এই উপহার নেওয়ার জন্য টাকা পরিশোধ করতে হবে। সরল বিশ্বাসে কিংবা লোভে পড়ে কেউ ভুয়া কাস্টমস ফির টাকা পরিশোধ করলে জানানো হতো তাতে অবৈধ মালামাল আছে। টাকা না দিলে পুলিশকে জানানো হবে। এভাবে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল অর্থ ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles