
জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে যেতাম খুব ছোটবেলা থেকে।তখন নামাজ এর প্রতি কতটুকু যত্নশীল ছিলাম জানিনা তবে মসজিদে গিয়ে ছোটদের দুষ্টুমি করাটা বুঝতাম খুব ভালো।এতে শরিক হতো আমাদের পাড়ার আরো অনেকে।মাঝে মাঝে বাড়ীতে নালিশ আসতো।ধীরে ধীরে নামাজের গুরুত্ব বাড়তে লাগলো।স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজ পেরিয়ে চাকুরীতে চলে এলাম। যেখানেই থাকিনা কেন শুক্রবার জুম্মার সময় মসজিদে যাওয়া চাই।সমস্যা হলো শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় জরুরী বিভাগের ডিউটি।সদর হাসপাতালে যখন ছিলাম তখন অধিকাংশ শুক্রবারে জরুরী বিভাগের ডিউটি আমিই করতাম।তাই হাসপাতালের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তাম।
মসজিদে ঢোকার পথেই দরজার পাশ ঘেসে বসে পড়তাম। ভিতরে অনেক মুসল্লি তার মধ্যে আমাদের কনসালটেন্ট এবং অন্যান্য ডাক্তার ও ষ্টাফরা।আমি বসে কারো দিকে তাকাতাম না তবুও মাঝে মধ্যে একটু দেখতাম।ষ্টাফদের দুএকজন একটু উসখুস করতো। বুঝতাম তারা ভাবছে তাদের আর এম ও স্যার সবার পিছনে কেন বসেন। কোন ভাবান্তর নেই আমার।নামাজ পড়েই আবার ডিউটিতে ফিরে আসি।তবে নামাজের সময় একটু আধটু চিন্তাও হতো যে কোন মুমূর্ষ রোগী হাসপাতালে এলো কিনা।
আমার একজন ষ্টাফ প্রায়ই জানতে চাইতেন আমি সামনের কাতারে নামাজ পড়িনা কেন।একটু হেসে বলতাম-কেন সামনের কাতারে নামাজ পড়লে কি বেশী সওয়াব? উনি জিহ্বা বের করে বলতেন না স্যার তা নয়।এরপর আর কিছু বলতেন না।এভাবে চলতো আমাদের কথোপকথন। একদিন বললাম আমি এখান থেকে যখন অন্যত্র বদলী হবো তখন যাওয়ার আগে বলবো।ততদিন রহস্য থাক।উনি আর জানতে চাইতেন না।
বদলীর জন্য তৈরী হচ্ছি একদিন তাকে ডাকলাম। বললাম অনেক কথা। একসময় তুললাম পুরানো কথা।ওই শহরের পাশ দিয়ে হাইওয়ের মতোই ব্যস্ত সড়ক চলে গেছে সেখানে প্রায়ই সড়ক দূর্ঘটনা হতো আর তাতে হতো mass casualty। তাই যখন তখন হাসপাতালে হৈচৈ পড়ে যেত।এ্যাম্বুলেন্স ষ্টাফ সব ব্যস্ত হয়ে পড়তো।আর এম ও হিসাবে আমাকে আগেই সেখানে হাজির থাকতে হতো।এ কারনেই আমি কখনও মসজিদের ভিতরে গিয়ে বসতাম না। দরজার কাছে বসতাম এই ভেবে যেন জরুরী প্রয়োজনে রোগীদের স্বার্থে আমি মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।তিনি নিরবে আমার কথা শুনলেন, দোয়া করলেন।
ইনুভিক, কানাডা