
আমার বন্ধু সাকিব। স্কুল জীবনে দুর্দান্ত ছাত্র ছিল। এখন ফার্মগেটে কলা বিক্রি করে। ওর স্ত্রী কাঞ্চন বাচ্চাদের স্কুলের সামান্য অঙ্ক টিচার। স্কুল জীবনের কথা শুনে ও উদাসীন হয় যায়। ভালো খায়, ভালো পরে এমন মিথ্যে বলে অভাবী জীবনকে আড়াল করে।
আরেক বন্ধু রবীন। সৎ বাবার ছেলে। এখন পাঁচটা গার্মেন্টসের মালিক। ইত্যাদি রকমের ব্যবসা বাণিজ্য করে। প্রতিবছর আমেরিকা কানাডায় চলে যায় ছেলেমেয়েদের সাথে ঈদ করতে। দশ বছর আগেও ঢাকাতে নিজস্ব কোন বাড়িঘর ছিল না ওদের। সেসব প্রসঙ্গ তুললে রবীন অতীতের কথা অস্বীকার করে।
বন্ধু শ্যামল ভালো সাঁতার জানত। খেলাধুলোতেও বেশ ভালো ছিল। এখন সূর্যমুখী পেট হয়েছে। উচ্চ পদস্থ সরকারী কর্মকর্তা বটে। ওর অগুনতি সম্পত্তির উৎস জানতে চাইলে আয়ের তথ্য গোপন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী সাবিনা। নাম করা টেলিভিশন ও পত্রিকার মালিক। চেম্বার-টেম্বারও করে। পাঁচ তারা হোটেলে রাতের জলপান নিত্যদিনের অভ্যাস। প্রাইভেট সেক্রেটারি ফজলের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে জনসম্মুখে মুখ লুকিয়ে হাঁটে।
সিদ্দীক ছেলেটা ছোট বেলা থেকেই দুরন্ত। বন্ধু না হলেও মহল্লার ছোট ভাই হিসেবে এখনো চিনি তাকে। তিনটি খুনের আসামি। ঘর দখল, চাঁদাবাজির মামলা আছে এক ডজন। ওমরা করতে গিয়ে সেলফি তুলেছিল। সেটা এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলে বন্দী থাকা আসামি কী করে ওমরা করতে যায়। এ ব্যাপারে সিদ্দীককে আদালতে ডাকা হলে সেলফির তোলার কথা সে অস্বীকার করে। বলে ফটো এডিটেড।
বন্ধুদের কাতারে আমিও দাঁড়িয়ে। অস্বীকার আমিও করি। আমিও গোপন করি সত্য। কিছু মানুষ জন্ম দাগ নিয়ে জন্মায়। কিছু মানুষ মনে দাগ নিয়ে বেঁচে থাকে। এখন তুমি ভীষণ সুখী, আমিও। গোপনীয়তার মলাটে লুকানো আমাদের বিচিত্র সুখ রহস্য। এ এক অনন্য শিল্প সাহিত্য।
স্কারবোরো, কানাডা