১৫০ বর্গফুটের অফিস কক্ষে টাঙানো হয়েছে পাঁচটি বৈদ্যুতিক পাখা। আছে দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) যন্ত্র। শুধু তাই নয়, সেই কক্ষের সঙ্গে থাকা বাথরুমেও ঘোরে বৈদ্যুতিক পাখা।
এভাবেই নিজের অফিস ঠাণ্ডা রাখছেন গাজীপুরের শ্রীপুরে মিজানুর রহমান খান মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ নাজমা আক্তার। প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ার পরই শুরু হয় তার ‘আয়েশি জীবন’।
শেখ নাজমা আক্তার দায়িত্ব নিয়ে কলেজে বসিয়েছেন ১৬টি সিসি ক্যামেরা। এতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কলেজের দেয়ালে লাগানো চারটি ঘড়ির দাম ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা, যা বাজারমূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
এসব কর্মকাণ্ডে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ নাজমা আক্তারকে সরিয়ে দিয়েছে কলেজের ম্যানেজিং কমিটি। বিধি অনুযায়ী কলেজের উপাধক্ষকে গত ১২ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, রবিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানায়, কলেজের জ্যৈষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে না থাকায় শেখ নাজমা আক্তারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো সুযোগ নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে কলেজের উপাধ্যক্ষ অথবা জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া ও আগামী ৬ মাসের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বলা হয়।
কলেজ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, কলেজের নিয়মিত অধ্যক্ষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাওয়ায় পর পরিচালনা পরিষদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শেখ নাজমা আক্তারকে দায়িত্ব দেন। তিনি কলেজের প্রতিষ্ঠাতাপ্রয়াত মিজানুর রহমানের পুত্রবধূ। দায়িত্ব পেয়েই স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে কলেজের যাবতীয় কাজ শুরু করেন তিনি। কলেজের ক্রয় কমিটিকে উপেক্ষা করে স্বামীকে নিয়ে নিজেই নানা কেনাকাটা শুরু করেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, সেচ্ছাচারিতার কারণে পরে পরিচালনা পরিষদ গত ১২ সেপ্টেম্বর তাকে অব্যহতি দিয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন আকন্দকে দায়িত্ব দেন। গত ১০ দিন ধরে শেখ নাজমা আক্তার কলেজে অনুপস্থিত আছেন।
কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন আকন্দ বলেন, ‘অধ্যক্ষ কলেজে না আসায় শিক্ষাকার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষকদের বেতনও আটকে আছে, কলেজের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরে আমাকে পরিচালনা পরিষদ দায়িত্ব দেয়। তবে কলেজের কেনাকাটার বিষয়ে সব ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ক্যাশ খাতা ও ভাউচার সবই ছিল তার নিয়ন্ত্রণে।’
কেনাকাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাদের কিছুই অবহিত করেননি। তবে শুনেছি, বিভিন্ন ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে কেনাকাটায় অনিয়ম করেছেন। কেনাকাটায় অনিয়ম হয়ে থাকলে পরিচালনা পরিষদ যদি আমাকে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখতে বলে, তাহলে আমরা তা খতিয়ে দেখব। অনুমতি ছাড়া নিজ কক্ষে দুটি এসি, পাঁচটি পাখা—এগুলো বিলাসিতা। এতে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’
এ বিষয়ে জানতে কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ নাজমা আক্তারকে ফোন দিলে তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন খান ধরেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আদালতে গিয়েছি। আদালত জেলা প্রশাসককে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। এ সংক্রান্ত কোনো চিঠিও তিনি পাননি।
কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নিগার সুলতানা ঝুমার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য (অভিভাবক প্রতিনিধি) আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের সভাপতি মহোদয় কলেজের উন্নয়ন ও লেখাপড়ার মান বৃদ্ধিতে খুবই আন্তরিক। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সবসময় অসহযোগিতা করে আসছেন। নানা অনিয়মের কারণে ও বিধি মোতাবেক না হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ মোতাবেক পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তে উপাধ্যক্ষকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি যদি কোনো অনিয়ম করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র : আমাদের সময়