কানন বড়ুয়া আমার প্রিয়জন। সাফল্যে উজ্জ্বল একজন মানুষ। টরন্টোতে আমি তার উথ্থান দেখেছি। শহরে আরো বাংলাদেশি ফার্মাসিস্ট আমি চিনি,তবে অন্যতম কানন বড়ুয়া অগ্রগামী। বৈভ সাফল্য আর ঔষধ বাণিজ্যে ভালো জ্ঞাণ আছে বলেই তার এই অবস্থান। আঠারো কি পনেরো বছর আগে যখন প্রথম তিনি টরন্টোর বাঙলা টাউন ডেনফোর্থে ফার্মিসী দোকান খোলেন। ঠিক একই সময় আমি আর রনি ডি রোজারিও গ্রাফিক ডিজাইন ও প্রিন্টিং এর অফিস ‘ইনডিজাইন’ খুলি। সেটিই ছিলো টরন্টোর বাংলা টাউনে প্রথম ডিজাইন-প্রিন্টিং এর বাঙালির প্রথম ফার্ম। যথারীতি অন্যসব বাঙালিদের মত আমরাই কাননের যতসব ডিজাইন ও প্রিন্টিং এর কাজ করতাম। বাড়তি ব্যাপার ছিলো তাহলো কাননের ফার্মিসীর লিফলেট রাতে বাসায় ফেরার সময় বাংলা টাউনের ঘেটো চব্বিশ ত্রিশ তলা বাঙালি ভর্তি দানব বিল্ডিং গুলো যেমন ক্রিসেন্ট কিংবা মেসী গুলোতে ঢুকে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে টপ ফ্লোর পর্যন্ত ঘরের ডোরে গুঁজে দিয়ে যেতাম। পরিচিত দেখা হলে বলতাম – ভাই,কাননের ফার্মেসী থেকে লাগলে ঔষধ নিয়েন।
অনেকে পাল্টা প্রশ্ন করতো-কেন?আমাদের দীর্ঘদিনের জানা ফার্মেসী আছে! বুঝিয়ে বলতাম তারাতো আর বাঙালি নয়। ।একজন বাঙালি হয়ে আরেক বাঙালির দিকে হাত বাড়ালেইতো কমিউনিটি বড় হবে। কাননের ব্যবহার ছিলো মধুর চেহেরাও অমায়িক। তাই ফার্মেসী ক্লিক করতে দেরি হয়নি। বংলা টাউনে ফার্মসী যখন জমজমাট হয়ে উঠলো তখনি কানন চড়া মূল্যে তা বিক্রী করে দিয়ে দূরে তুলনামূলক নিরিবিলি এগলিন্টন এন্ড মার্খাম রোড তাজমহল ফুডের বিপরীতে মেট্রো কমপ্লেক্সে বিশাল জায়গা নিয়ে ফার্মেসী খুল্লেন।তখন প্রিয় কাননের সিদ্ধান্ত বোকামী মনে হয়ে ছিলো। সম্ভবত আমার ব্যবস্যা বাণিজ্যে মেধা শূণ্যতার জন্যে। আজকে কাননের ফার্মেসী আগের চেয়েও বেশি জমজমাট।পাশে ফাঁকা জায়গায় যুক্ত হয়েছে টরন্টোর বাংলাদেশি ডাক্তারদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় নাসরুল্লাহ তরুণের বিশাল মেডিক্যাল ক্লিনিক।
কানন ও ফার্মেসীর গোড়াপত্তন করেছেন টরন্টোর বাইরে অন্যান্য আরো শহরে,লন্ডন ওন্টারিওর কথা জানি আরো আছে কিনা জানিনা। একমই ভালো হবে যেহেতু আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি বাঙালিদের অনেক হাঙ্কিপাঙ্কি থেকে বড়ুয়াগণ দূরে থাকেন। এই বড়ুয়াপ্রজাতী শুধু চট্টগ্রাম ও আসামে জন্মান পরে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েন। চকমাদের মত সবার যে নামই হোক শেষে বড়ুয়া থাকে। তিন বড়ুয়ার প্রভাব হয়তো আমর মধ্যে কাজ করে প্রথমত সুদর্শন বড়ুয়া । আমার বাল্যকালে বাড়ি ধনিওয়ালা পাড়া থেকে রেল লাইন ধরে হেঁটে ব্রিটিশ আমলের লাল ইটের চট্টগ্রাম রেল স্টেশান পার হয়ে কোর্টহীলের নিচে মিউনিসিপাল স্কুলে যেতাম। স্টেশানের ভেতরে বুকস্টলের মালিক ছিলেন এই সুদর্শন বড়ুয়া।
সেই ছোট বেলা থকে তিনি পয়সা ছাড়া বই দিতেন। পড়ে ফেরত দিতাম আবশ্যই। পড়ার নেশা তিনিই তৈরী করে দিয়ে ছিলেন আমার মধ্যে। প্রথমে দীপক কুমার সিরিজের চটিবই ‘বানরের হীরা রহস্য’টাইপের বই পরে দস্যু মোহন,বাহরাম,মাসুদ রানা কালেক্রমে শরৎচন্দ্র,সুনীল রাহাত খান ওয়ালীউল্লাহ পর্যন্ত ঠেলে দিয়ে ছিলেন তিনি। সুদর্শনদার হাতেই প্রথম আমি ‘দেশ’ পত্রিকার মুখ দেখি। দ্বিতীয়ত স্বাধীনতার পরবর্তি কালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যখন ফ্যাফ্যা করে ঘুরতাম।গল্প লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তখন বাংলা একাডেমির সুব্রত বড়ুয়া কাছে ডেকে বুঝিয়ে ছিলেন গল্প লিখতে বাস্তব ভিত্তি কি করে তৈরী করতে হয়।
তৃতীয়ত এই গল্পের বস্তব থেকে গল্প ছেকে নেয়ার পদ্ধতী বোঝাতে সাথে নিয়ে জেলে নৌকায় উত্তাল সাগরে ভেসে পড়ে ছিলেন বিপ্রদাশ বড়ুয়া। বিপ্রদা ও রাহাত ভাই এরাই আমার গদ্য লেখার মেন্টর। কাননের স্ত্রী যে কোনো মৌসুমে সুন্দর! হয়তো তাই নাম মৌসুমি বড়ুয়া।। আমর সৌভাগ্য বেশ আগে মিসিসাগায় আমার ১৬তম একক প্রদর্শনী থেকে তিনি আমার একটি ছবিও কিনেছেন। কানন আরো উড়বেন,উড়ুক! আমি ছাড়া প্রায় চট্টগ্রামের মানুষ জন্মগত উড়ুক্কু। যেহেতু ছোট থেকে তাদের প্রবাদ বাক্যে শেখানো হয় –চাঁটগাঁইয়া ফোয়া ম্যাডিৎ পইড়লে লোহা! (চট্টগ্রামের ছেলে মাটিতে যত পড়ে হয়ে ওঠে লোহা)