
আশির দশকে ডাইরি লিখতাম। নিজের চিন্তা চেতনা, রাজনৈতিক ভাবনা, সামান্য বিশ্লেষণ, আচার আচরণ লিখে রাখি। এই আশায় লিখি যে আমার ফেসবুক বন্ধু, শুভাকাংখি এবং ভিজিটররা আমার প্রোফাইল ভিজিট করলেই কিছুটা বুঝতে পারবেন আমি মানুষটা কেমন। দেশ নিয়ে দেশের মানুষ নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা কী! আমি যখন থাকবোনা, যদি কখনো কারো জানতে মন চায়, আমার ফেসবুকের পাতা তুমি দেখে নিও!
আমি দেশ ছেড়ে চলে আসার পর অনেকেই মন খারাপ করেছেন, অনেকেই সমালোচনামূখর হয়েছেন এবং এখনো সুযোগ পেলেই এই একটি বিষয় নিয়ে হাতে গোণা দু একজন খোঁচা মারেন। অথচ আমি বিশ্বাস করি একজন মানুষের কখনো দু বারের বেশী একই পদে থাকা গনতন্ত্রের পরিপন্হী। একই পরিবার থেকে একজনের বেশী এমপি বা চেয়ারম্যান হওয়া উচিত নয়। পরিবারতন্ত্র দেশের জন্যে মঙ্গলজনক নয়।কাজেই আমি দেশে থাকলেও, জয়লাভের সম্ভাবনা থাকলেও আমি নিজে বার বার একই পদে নির্বাচন করতাম না। আর আমার পরিবার থেকেও কাউকে নির্বাচন করতে দিতাম না। কাজেই আমার ভোট করার ৩৪ বছর পরেও যদি আমার এলাকার কেউ নির্বাচনে ভোট চাইতে যান, সেখানে একটি গ্রামের একটি লোকও যদি এখনো আমার কথা স্মরণ করেন তাতে কারো অসন্তুস্ট হওয়া উচিত নয়, হিংসা করা উচিত নয়। কারণ আমি জীবনে কারো কোন ক্ষতি করি নি, পারলে উপকার করেছি, এখনো এই দীর্ঘ প্রবাস জীবনেও সেটা করে চলেছি। আলহামদুলিল্লাহ।
সংক্ষেপে বলি, আমি আসলে কখনোই জনপ্রতিনিধি হতে চাই নি, ১৯৯০ সালে একবার হয়েছিলাম বাধ্য হয়ে, সত্যি সত্যিই জনগণের প্রবল চাপে। অনেকেই বলে থাকেন আমি প্রশাসন ক্যাডারে থাকলে ভাল হতো! আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, আহা, আমি যদি ম্যাজিষ্ট্রেট রোকন উদদৌলার মত হতে পারতাম, বাংলাদেশকে ভেজালমুক্ত খাদ্যের দেশ বানাতে বিরাট অবদান রাখতে পারতাম। যাহোক, যে কারণেই হোক জনপ্রতিনিধি হলাম কিন্তু সরকার পরিবর্তনের কারণে বেশীদিন থাকতে পারলাম না। আমার নামে কোন মামলা মোকদ্দমা ছিল না, ছিল না কোন চাপ। তবুও কেন প্রবাসী হলাম? সত্যি কথা বলতে বিদেশে গিয়ে পড়শোনা করার ইচ্ছা ছিল সেই ছোটবেলা থেকে। ১৯৮১ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারী আমার প্রিয় অশোক চাচার চিঠিটি মনযোগ দিয়ে পড়লে পাঠক বুঝতে পারবেন বিদেশে পড়ার ব্যাপারে আমার উৎসাহ ঠিক কতটা ছিল। থাইল্যান্ডের নামকরা এআইটি বা এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ইন্জিনিয়ারিং পড়ার প্রোসপেক্টাস পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে যাওয়া হয় নি বিএসসি পাস করে যেতে হবে বলে। বিএসসি পড়তে হলে আমার আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া হতো না।
অশোক চাচার চিঠিতে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্হিতির কিছু নমুনাও রয়েছে, পড়লে রাজনীতির ছাত্ররা কিছুটা ধারনা লাভ করতে পারবেন। একই চিঠি কিছুটা জুম করে তিনটি ছবি দিলাম যাতে পড়তে সুবিধা হয়। আমি আমলা হব বা বিদেশে পড়াশুনা করে দেশে ফিরে দেশ সেবা করবো সেরকমটাই মনোবাসনা ছিল। ছাত্র রাজনীতি করলেও রাজনীতি সম্পর্কে আমার ধারনা তখনো খুবই খারাপ ছিল যা আমার তৎকালীন ডাইরীগুলোতে বেশ ভালভাবেই লিপিবদ্ধ করা রয়েছে।
স্কারবোরো, কানাডা