
বিষন্ন আকাশের সাথে মন বিষন্ন হয়। মন বিষন্ন হওয়ার কোন কারণ নেই তবু ঠিক কিছু করার উৎসাহ লাগে না। আট মাস শীতের শেষে একটু উত্তাপ বেশ আনন্দ দিচ্ছিল কিন্তু মেঘ কালো আকাশ নীল নবঘন সাজে সেজে উঠে সূর্যটাকে বন্দি করে ফেলেছে সাথে দিয়েছে এক রাশ বাতাস উত্তাল বয়ে যাচ্ছে। একটু আরামের উষ্ণতা হারিয়ে সিরসির একটা শীতের অনুভব গা জুড়ে। এই শীত পিঠ থেকে কাঁধে চলে আসে ইচ্ছে করে কুঁজা হয়ে বসে থাকি। গরম জামা কাপড়ের ভাড়ে শরীরটা ভাড়ি হয়েছিল অনেকদিন। এই তো তুলে রাখলাম সব। অথচ মনে হচ্ছে নামিয়ে পরি।
শীত কাটাতেই অবশেষে মাঠে কাজ করতে নেমে গেলাম , লেখালেখি বাদ দিয়ে। মাঠের কাজে বেশ গা গরম হয়ে উঠল। ভালোও লাগল পরিচর্চা করে সাজানো ফসল, ফুলের বাগিচায় কিছু কাজ করে। আদরে যত্ন লাগানো গাছ গুলো যতটুকু বাড়ে তারচেয়ে বেশি জলদি বাড়ে আগাছা। দূর্বা ঘাস আর কত রকমের জঙ্গল। এদের হাত দিয়ে টেনে তুলেই পরিস্কার করতে হয় বাগিচা। একটা ফুল যখন ফুটে কি আনন্দ হয় আর এখানে গাছ ভর্তি ফুল হয় । তারা মাথা নাড়িয়ে কথা বলে আমার সাথে আমিও কথা বলি তাদের সাথে। কি ব্যাপার তুমি বড় হচ্ছে না কেন।
তোমার কুড়ি গুলো দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আর যখন ফুল হয়ে অনেকদিন ফুটে থাকে তখন তাদের বলি তাড়াতাড়ি যেন ঝরে না পরে। আরো অনেক দিন আমার সাথে তাদের থাকতে হবে। মুগ্ধ হই তাদের সৌরভে। এখন শুধুই ফুল সব কিছুতে। কিছু ফুল ঝরে যাবে কিছু ফুল, ফল, সবজি হবে। তবে সব কিছুরই একটা সীমা রেখা টানা থাকে। একটা সময়ের পরে পাপড়ি গুলো একটা একটা করে ঝরে পরে । কিছু দিন আগে আপেল চেরি ফুলের সময় ছিল লক্ষ কোটি ফুল ফুটল আর যখন বাতাসে উড়ে উড়ে পাপড়ি ছড়িয়ে পরতে লাগল সে এক ভয়াবহ সুন্দর দৃশ্য। অতঃপর আমার হাঁটা চলা পাপড়ির গালিচা দিয়ে করতে হলো কদিন।
কিন্তু কখনো খুব জোড় বাতাস বা বৃষ্টি এসে সময়ের আগেই তাদের ঝরিয়ে দেয়। আবার কখনো কিছু পোকা অত্যাচার করে। পাতা খেয়ে ফেলে, ডিম পাড়ে গাছের পাতায়। আমি আবার সব ঠিকঠাক চিনতে পারি না। বুঝিনা কিভাবে তাদের পরিচর্চা করব। রক্ষা করব পোকার আক্রমণ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে। এমনটা হলে মন খারাপ হয়।

এবার লাইলাক গুলোর সাথে বেশি সময় কাটাতে পারলাম না। তারা অদ্ভুত এক সুগন্ধ দিয়ে বাড়ির চারপাশ যখন ভরিয়ে রেখেছে। মাত্র পাঁচদিন তাদের ঘ্রাণে মাতাল সময় কাটিয়েছি তারপরই বৃষ্টি এসে ধুয়ে নিল ঘ্রাণ আর ফুলগুলোও ঝরে গেল তারপর চটপট। ঘরের ফুলদানিতে একগুচ্ছো সাজিয়ে রেখেছিলাম। তারা শুকিয়ে গেলেও ঘর ময় লাইলাক ঘ্রাণ ছড়িয়ে রাখেছে, যখন গাছ থেকে আর ফুল তুলতে পারলাম না।
কখনো লেখক, কখনো রাধুনী, কখনো ড্রাইভার, কখনো মালি, কখনো গুরু গম্ভীর ভাবুক, কখনো উচ্ছাসে মুখর আনন্দিত বাচ্চা। কখনো, পাঠক, কখনো আঁকিয়ে। আবার কখনো ফেলে দেয়া জিনিস নিয়ে বসি, নতুন কিছু বানাতে।
মানুষ বলে ডিপ্রেসনে ভুগে, একা একা বিষন্ন। আমি তো দম ফেলারই সময় পাই না। এত কিছু সামাল দিতে গিয়ে। রাস্তায় মাইলের পর মাইল পার হতে হতে দেখি নতুন। দেখি মানুষের কোলাহল জীবন।
সব কিছুতেই খুঁজে পাই দারুণ সব ভালোলাগা । বোরড শব্দটাই নেই চারপাশে।
কাল বেশ রাত পর্যন্ত লেখার সাথে কথা বলার পর ঘুমাতে গেলাম, একটু আগেই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালায় চোখ গেল অদ্ভুত আলো জ্বলছে নিভছে। কি উৎসব আয়োজনে এমন আলোর বিচ্ছুরণ চলছে।
ঘুম ভাঙ্গা থেকে একটু ধাতস্থ হতেই বুঝতে পারলাম, জানালার কাঁচ জুড়ে হাঁটছে অনেক জোনাকি তাদের আলো যেন বিচ্ছুরণ ছড়াচ্ছে দারুণ প্রকৃতিক আলোকসজ্জা, চলছে উৎসব। অনেকটা সময় এই সুন্দর আলোর ঝলক দেখতে দেখতে আবার ঘুমিয়ে গেলাম। আর অনেক বিদ্যুৎ চমক আর বজ্রপাতের ঝংকারের গান শুনে জেগে উঠলাম আবার। পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ ছুটাছুটি করছে। সন্ধ্যা থেকেই ছিল অনেক বাতাস। এখন বিদ্যুৎ চমকাচ্চে ক্ষণে ক্ষণে। পিনাকেতে লাগে টঙ্কার–. বসুন্ধরার পঞ্জরতলে কম্পন জাগে শঙ্কার ॥
আকাশেতে ঘোরে ঘূর্ণি সৃষ্টির বাঁধ চূর্ণি,. বজ্রভীষণ গর্জনরব প্রলয়ের জয়ডঙ্কার ..দেখতে দেখতে..শুনতে শুনতে আবার ঘুমিয়ে পরলাম। কিন্তু চোখ লেগে আসতে না আসতেই জেগে উঠে বসলাম কি শব্দ টকাটক টক, দারুণ টঙ্কার জানালায় যেন মাদল বাজছে দারুন সুরে। তুমুল বৃষ্টি নেমেছে । বৃষ্টি খুব দরকার। মাটি ধুয়ে গাছ গুলোকে ভালো একটা স্নান দিক বৃষ্টি। বৃষ্টি নূপুর বাজিয়ে নেচে যাক আপন মনে আমি ঘুমাই আজ রাত, কাঁথা মুড়ি দিয়ে। দিন হলে আমিও নাচতাম বৃষ্টিতে ভিজে, বৃষ্টির ফোঁটার সাথে তালে তালে।
টরন্টো, কানাডা