9.6 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

সাত পাগলে হলো মেলা

সাত পাগলে হলো মেলা
সাত পাগলে হলো মেলা

কানাডার টরন্টো শহর হলো দুনিয়ার অন্যতম বিশেষায়িত স্থান। এ শহরে কেউ একবার ঢুকলে তার মস্তিষ্কের সুতো ছিঁড়তে বাধ্য। হোটেল ক্যালিফোর্নিয়ার মতো, একবার প্রবেশ করলে আজীবনের জন্য ধরা। আমার মাথায় গন্ডগোল হবার পেছনে এ শহরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দশ বছর এখানে বাস করে প্রচুর বাঁশ খেয়ে উম্মাদ হয়ে এক বাঙালি ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে অটোয়া শহরে পাড়ি জমিয়েছি। তবে আশংকার বিষয় হলো, কোভিডের সময় জীবন বাঁচাতে বেশ কিছু মানুষ টরন্টো ছেড়ে কানাডার অন্যান্য এলাকায় চলে গেছে।

যাই হোক, পাগলামির উপর ভিত্তি করে টরন্টো শহরে সাত ধরণের পাগল সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া হলো:
.
১. দাওয়াত পাগল: এরা তিনশো পঁয়ষট্টি দিন টোই টোই করে ঘুরবে আর দাওয়াত খাবে, দিবে। কখনও ক্লান্ত হয় না। এরা কীভাবে জীবিকা চালায় কেউ জানে না। দাওয়াত না পেলেও কেউ এদের দাবায়ে রাখতে পারে না; রেস্টুরেন্টে গিয়ে পয়সা খরচ করে হলেও খাবে।

- Advertisement -

২. অনুষ্ঠান পাগল: এদের দায়িত্ব অনুষ্ঠানে আগে-ভাগে গিয়ে সামনের সিট দখল করে বসে থাকা। সুন্নাতে খৎনা, বিয়ে, চল্লিশা কিংবা সাহিত্য-সংস্কৃতি; তারা যাবেই। এরা না আসলে উদ্যোক্তারা মনোকষ্টে ভুগে; অনুষ্ঠান জমে না। এরা কিভাবে অনুষ্ঠানের খোঁজ পায়, সে রহস্যের কুলকিনারা নাই।

৩. সাহিত্য পাগল: এদের মুখে সাহিত্য ছাড়া কোনো কথা নাই; মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। খাবার খুঁজবে ভাত-মাছের সাথে সাহিত্যের সম্পর্ক, ডাক্তারখানায় গিয়ে ভাবে অসুখের সাথে সম্পর্ক। ডাক্তারের সাথে আলাপও করবে কবিতা গল্প নিয়ে। কমোডে বসেও..। সাহিত্য ছাড়া অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলাকে এরা খুব একটা ভালো চোখে দেখে না।

৪. বাড়ি পাগল: এদের মাথায় বাড়ি ছাড়া কোনো সাবজেক্ট নাই। কখন বাড়ি কেনা উচিত, কখন বেচা উচিত, কে বাড়ি বেচে জিতেছে, কে লস খেয়েছে; এসব ভাবনা নিয়েই এদের জীবন। পূর্ববর্তী বছরের দামের পার্থক্যের গবেষণালব্ধ গ্রাফ দেখতে দেখতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।

৫. বাগান পাগল: এরা দিন দুনিয়া ভুলে বাগান করবে। শীতকালে হাইবারনেশনে গিয়ে মাটির তলায় ঘুমায় টিউলিপ ফুলের পেঁয়াজের মতো কাঠবেড়ালীদের সাথে। বসন্ত আসলে মাটি ফুঁড়ে বের হয়। সারা গায়ে বিচি বেঁধে ঘুমায়; পকেটে বিচি, বগলতলায় বিচি, চিপায় বিচি, চুলের মধ্যে, মুখের মধ্যে বিচি নিয়ে তা দেয় ডিমের মতো। এদের মস্তিষ্ক খুবই উর্বর।

৬. ডাঁটের পাগল: এদের পকেটে নাই পয়সা, কিন্তু ভাবখানা এমন যেন এইমাত্র লন্ডন থেকে এসে টরন্টো পিয়ারসনে ল্যান্ড করে নাক সিঁটকিয়ে বলছে, “ঠোমড়া এঠো গরিবস খেনো?”। ব্র্যান্ডের জামা, জুতা, ঘড়ি, স্যুট ছাড়া পরবে না। দামি রেস্টুরেন্ট ছাড়া খাবে না। তবে এদের পয়সার উৎস, জীবিকা, ঠিকানা কেউ জানে না; রাতে কোথায় ঘুমায় খোদা মালুম!

৭. জব পাগল: এরা মনের আনন্দে দিন রাত বিশ ঘন্টা কামলা খাটে। নিজের ছেলেমেয়েরা তাদের চিনতে পারে না, চেহারা ভুলে যায়। বাকি চার ঘন্টা ঘুমায় (বাথরুম ইনক্লুডেড)। জীবনেও পার্কে বসে ভুলে একটা মিনিট সময় নষ্ট করবে না। এমন কি ঈদের দিনেও ড্যানফোর্থ ময়দানেও দেখা মিলবে না। নীরবে নিভৃতে পরকালে পাড়ি জমায়।
.
[বিঃ দ্রঃ: কারো সাথে মিলে গেলে আমার দোষ নাই। দীর্ঘ দশ বছর টরন্টোর থাকার ধক আমি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। তাই যারা আমার এসব কথা সিরিয়াসলি নেবে, তারা আসলেই পাগল। অটোয়ার ডাক্তার বলেছে আমার পাগলামি সারাতে হলে একদম উত্তরে ইয়েলো নাইফ, নুনাভুত কিংবা উকুন শহরে গিয়ে দশ বছর একাকী বাস করে প্রায়শ্চিত্ত করলে নাকি কিছুটা সুস্থ হলেও হতে পারি। তবে গ্যারান্টি নাই।

**উল্লেখ্য, এই ডাক্তার ভদ্রলোকও দীর্ঘ ত্রিশ বছর টরন্টোর স্কারবরো এলাকায় থাকতো]

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles