
ধনী হওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেকেই বিভোর থাকেন। তবে একদম জিরো থেকে বড়লোক হয়ে ওঠার, এই স্বপ্ন পূরণ করা কখনোই এত মসৃণ হয় না। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠলেই বড়লোক হয়ে ওঠা সম্ভব, সেক্ষেত্রে আর ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে হবে না কাউকে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক সংবাদমাধ্যম ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে এ সম্পর্কিত তথ্য জানা যায়।
বড়লোক হতে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা আর সাহসীকতার প্রয়োজন হয়। কারণ শূন্য থেকে ধনী হয়ে উঠাটা মুখের কথা নয়। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু জ্ঞান আর লক্ষ্য পূরণে অবিচল থাকলে, অবশ্যই অধরা স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব। এজন্য এই চ্যালেঞ্জিং কাজকে সহজ করে তুলতে সঠিক পরিকল্পনা আর কৌশল জানা জরুরি।
ধনী হওয়ার জন্য মনস্থির করা
যে কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা আর মনস্থির করাটা লক্ষ্য পূরণের প্রথম শর্ত। এজন্য নিজের ভেতরের দক্ষতা আর গুণাবলীকে খুঁজে বের করতে হবে। যেখানে সবাই বাঁধা-বিপত্তি দেখে পিছিয়ে যায়, সেখানে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সম্পদ গড়ার ব্যাপারে দৃঢ় মনোবল থাকতে হবে। তাহলেই অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জকেও সহজে মানিয়ে নিয়ে লক্ষ্য জয় করা সম্ভব।
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য নির্ধারণ করা
লক্ষ্য হতে হবে স্পষ্ট। কোনো ধরনের ভয় যাতে লক্ষ্য পূরণে বাঁধার সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য আগেই লক্ষ্য নির্ধারণে হতে হবে স্পষ্ট। পাশাপাশি লক্ষ্য অবশ্যই পূরণযোগ্য হতে হবে। অস্বাভাবিক কোনো বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন দেখা যাবে না। তাই আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, ধনী হওয়া বলতে ঠিক কত সম্পদের মালিক হওয়াকে বোঝায়। সেই পরিমাণ সম্পদ কতটুকু অর্জনযোগ্য, প্রাসঙ্গিক এবং কতটুকু সময় লাগতে পারে এতে।
অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা
নিজেকে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানী করে তুলতে হবে। বাজেট তৈরি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, লেনদেনসহ বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে যথেষ্ট জানাশোনা এবং পড়াশোনা করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাক্ষরতা থাকা প্রয়োজন এ যুগে। সহজভাবে অর্থনৈতিক স্বাক্ষরতা বলতে বোঝায়, নিজের অর্থ বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা।
সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ
নিজেকে আগে যে কোনো পরিস্থিতিতে সম্পদ সঞ্চয় করা শিখতে হবে। এরপর নিজের আয়ত্ত্বের মধ্যে সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়ে এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কৌশলের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ বলতে শুধু অর্থকেই বোঝায় না, বরং সময়ও একপ্রকার বিনিয়োগ হতে পারে। তাই যেখানেই বিনিয়োগ করা হোক না কেন, সে সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ও মনোবল থাকা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরি করা
শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট কাজ নিয়ে পড়ে থাকলে জীবনে বড়লোক হওয়া যাবে না। এজন্য নিয়মিত কাজের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও সময় বিনিয়োগ করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কেউ প্রতিদিনের অফিস বা পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে বাড়তি আয় করেন, তিনি সমাজের অন্য দশজন চাকরিজীবী বা শিক্ষার্থীদের তুলনায় এগিয়ে থাকবেন। তাই একাধিক বিষয়ে নিজেকে পারদর্শী করা এবং পার্ট-টাইম এইসব কাজকে চাপ মনে না করে, বরং শখ হিসেবে নিলে, বছর শেষে নিজের জন্য একটা বিশাল পরিমাণ সঞ্চয় হয়ে যাবে।
নেটওয়ার্ক তৈরি করা
প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের মানুষের সঙ্গে পরিচয় এবং যোগাযোগ রক্ষা করতে পারলে, কেউ কখনও কোনো কাজে আটকে থাকবে না। এজন্য একটা আর্থিক ক্ষেত্রের নেটওয়ার্ক এবং সহযোগীতা লাভের জন্য কাছের বন্ধু তালিকা তৈরি করে রাখতে হবে।
আয়ত্ত্বের মধ্যে ঝুঁকি গ্রহণ
শূন্য থেকে বড়লোক হতে অবশ্যই বিভিন্ন সময় ঝুঁকি নিতে হবে। এখন পর্যন্ত সব ধনীরাই জীবনের কোনো এক সময় ঝুঁকি নিয়েছেন। তবে এ ঝুঁকি অবশ্যই হতে হবে পরিমাপযোগ্য। এমন কোনো ঝুঁকি নেয়া যাবে না, যার ফলাফল কাউকে আবার শূন্য ঠেলে দেয়। বরং ঝুঁকি গ্রহণের ফলে কারো প্রাপ্তির খাতায় কোনো কিছু জমা হলে, তা পরবর্তী কাজের অগ্রগতিতে সাহায্য করবে।
ব্যর্থতাকে শিক্ষায় পরিণত করা
কোনো কাজের ব্যর্থতাই বাস্তব জীবনের প্রাপ্তির খাতার ব্যর্থতা নয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা একজনের মনোবলকে ভেঙে না দেয়। তাই ব্যর্থতাকে আলিঙ্গন করতে হবে শিক্ষা হিসেবে। প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শিখতে হবে এবং পরবর্তী সফলতার জন্য পূর্ণ উদ্যোমে এগিয়ে গেলেই সফল হওয়া সম্ভব হবে।
নিজের স্বাস্থ্য এবং চরিত্রের পরিচর্যা করা
শূন্য থেকে ধনী হওয়া অলৌকিক বিষয়বস্তু নয়। এটা পূরণযোগ্য। তাই পূরণ করতে একটা লম্বা সময়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। এসময়ের মধ্যে নিজের স্বাস্থ্য ও চরিত্রের দেখ-ভাল করতে হবে নিয়মিত। কারো স্বাস্থ্যহানি বা চরিত্রে কালিমা লেপন হলে, তার জন্য সফলতা অর্জন অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
ধনী হওয়াটা রাতারাতি কোনো ব্যাপার না, বরং লম্বা সময়ের পরিকল্পনার অংশ। এজন্য নিজেকেই নিজের ভুলগুলোর দিকে মনোনিবেশ করে, বারংবার ঠিক করে নিয়ে আরও নিখুঁত করে তুলতে হবে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া হাজারো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে হলেও লক্ষ্যচ্যূত হওয়া যাবে না কোনোভাবেই।