
আজ বাবা দিবস। আমার বাবা বৈদ্যনাথ দাস এখন থেকে ৩২ বছর আগে ১৯৯২ সালে প্রয়াত হন। আমাদের কৈশোরে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ বছরগুলোতে বাবার উদ্যোগে আমার জন্মস্থান কামারখালীতে হরিনাম সংকীর্তন শুরু হয়। পাঁচদিন ধরে চল্লিশ প্রহরব্যাপী সে সংকীর্তন গত সাড়ে চার দশক ধরে কামারখালী বাজারে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।
কৈশোরকাল থেকেই হরিনাম সংকীর্তনের প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ। মনে পড়ে সেই ১৯৭৭-৭৮ সালে যখন কামারখালী বাজারে বিশাল নামযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতো দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকগুলো খ্যাতনামা সংকীর্তন দল কামারখালীতে আসতেন। যেহেতু আমি এই আয়োজনের উদ্যোক্তার সন্তান ছিলাম আমার সুযোগ ছিল সংকীর্তন দলগুলোর শিল্পীদের নৈকট্য লাভ করার।
দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে কীর্তন শুনতে আমি যেতাম। কিন্তু কীর্তনের মাহাত্ম্যকে বেশি করে অন্তর থেকে অনুভব করতাম প্রভাতকালে এবং গভীর রাতে। এই দুই প্রহরে যে রাগগুলোকে আশ্রয় করে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ উচ্চারিত হতো তা ছিল বড় মধুর। প্রভাতের ভৈরবী, আশাবরী বা ললিত আর রাতের মালকোষ বা দরবারি কানাডা যে কোনো হৃদয়বান মানুষের মতো আমাকেও অন্য জগতে নিয়ে যেত।
প্রবাসে আসার পরও যে কোনো মন্দিরে হরিনাম হলেই আমি যেতে চেষ্টা করি। আজ টরন্টোর বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু মন্দিরে উদয়াস্থ হরিনাম সংকীর্তন চলছে। বিকেল বেলায় কয়েক ঘন্টা সেখানে থাকলাম।
বাবা দিবসে মন্দিরটিতে হরিনাম সংকীর্তনের এই আয়োজন একটি কাকতালীয় ব্যাপার হলেও আমার কাছে তা অনেক স্মৃতিবহ এবং প্রীতিকর।
কীর্তন শুনলাম আর বাবাকে অনুভব করলাম।
ইষ্টইয়র্ক, কানাডা