
আনন্দ, ভয়, উদ্বেগ, শক্রতা, আলস্য- এ রকম কয়েকটি মানবীয় আবেগ নিয়ে তৈরী করা হয়েছে চমৎকার একটি এনিমেটেড মুভি “ইনসাইড আউট-২”। টরন্টোর মুভি থিয়েটারগুলোতে এখন প্রদর্শিত হচ্ছে।
গতকাল ছোটকন্যার জোরাজুরিতে ট্রিনিটি মলের মুভি থিয়েটারে গিয়ে দেখলাম মুভিটি। এটি একটি সিকুয়েল। প্রথমটা দেখা হয়নি। দ্বিতীয়টা দেখলাম।
হলে ঢোকার আগে দেখলাম আকাশ একদম পরিষ্কার। ঝকঝকে রোদ। ভাবলাম প্রকৃতির এই রুপ দেখতে বনবাদারে হাঁটাহাঁটি করাই ভালো ছিল। কয়েকঘন্টা আলোর সামনে খামোখা বদ্ধ ঘরে বসে থাকতে হবে। এটা এক ধরনের সময় নষ্ট। যদিও এক সময় খুব সিনেমা দেখতাম।
মুভি শেষ করে দুজনে থিয়েটার রুম থেকে বের হলাম। হলওয়েতেই কন্যা আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমি মুভিটি বুঝতে পেরেছি কীনা?
আমি বললাম, বুঝেছি। তবে আমার মত করে। কেন এটা জিজ্ঞাসা করছো?
সে বলল, না মানে তুমি তো প্রথমটা দেখোনি। তাই জিজ্ঞেস করলাম। সে বলল, তোমার ভালো লেগেছে?
আমি বললাম, খুব ভালো লেগেছে।
তার আবারও জিজ্ঞাসা, বলো, কী ভালো লেগেছে?
এ প্রশ্ন করার পর বুঝলাম, সে নিশ্চিত হতে চায় আমি আসলেই মুভিটি বুঝতে পেরেছি কীনা? কারন ইংরেজীতে ডায়ালগ। তারপর আবার এনিমেটেড মুভি। সেখানে ডায়ালগ বলে খুব দ্রুত। সাবটাইটেলও নেই। আবার থিমটাও একটু ভিন্ন ধরনের। সে জন্য তার ধারনা আমি হয়ত পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তার ধারনা একেবারে মিথ্যেও নয়। হলিউডের সাবটাইটেল ছাড়া অনেক মুভির ডায়ালগ আমি এখনো পুরোপুরি বুঝিনা। অথচ কানাডায় বসবাস করছি প্রায় চৌদ্দ বছর হয়ে গেল। দুর্বলতা স্বীকার করতে তো দোষের কিছু নেই। নিজের কন্যারাই যখন দ্রুত ইংরেজীতে কথা বলে সবটা বুঝতে পারিনা। তখন বলি, বাংলায় বলো। তোমার কথা বুঝতে পারিনি।
যাই হোক তাকে বললাম, দেখো মুভির মেকিংটা খুব সুন্দর হয়েছে। মুভিটা বেশি লম্বা না। ছোট। মাত্র দেড় ঘন্টার। আর ইমোশনগুলো একজন টিনএজারের বয়সের পরিবর্তনের সাথে সাথে কীভাবে কাজ করে তা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। টিন এজারদেরকে কোন ইমোশনটা বেশি প্রভাবিত করতে চায় তা মুভিমেকার সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কমিক স্টাইলে অভিনয় ও ও ডায়ালগ খুব ভালো লেগেছে। হাসতে হাসতে কেমন যেন দেড় ঘন্টা সময় কেটে গেল টের পাইনি।
সবচেয়ে বড় কথা হল মুভিটি থেকে বাচ্চাদের অনেক কিছু শেখার আছে। সাথে বাবামায়েদেরও। যাদের টিএন বাচ্চা আছে তাঁদের মুভিটি দেখা উচিৎ। বাচ্চাদের হ্যান্ডলিং করা সুবিধা হবে।
সে জন্যই তো তোমাকে মুভিটি তোমাকে দেখালাম। যাতে তুমি আমাকে বুঝতে পারো। কন্যার স্মার্ট জবাব।
বাসার দিকে রওনা দিলাম। আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পরা শুরু করল। বৃষ্টির জন্য রাস্তায় সামনে স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছিলনা। আমি বললাম, বাংলায় একে বলে মুষলধারে বৃষ্টি। মেয়ে বলল, ইন ইংলিশ ইট ইজ কল্ড ক্যাটস এন্ড ডগস্। আমি বললাম, জানি।
কীভাবে জানো?
ছোটবেলায় ইংরেজীকে Phrase মুখস্থ করতাম। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এর ট্রান্সলেশন হচ্ছে, ইট ইজ রেইনিং ক্যাটস এন্ড ডগস্।
কন্যা বলল, গুড। তুমি মুভিটাও বুঝতে পেরেছো।
স্কারবোরো, কানাডা