9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

কোটা ছেড়ে কলম ধরো

কোটা ছেড়ে কলম ধরো
কোটা ছেড়ে কলম ধরো

বীরের রক্ত প্রমান করবো, তবে ছাড় দিয়ে নয় ।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের বিচ্ছিন্ন বক্তব্য থেকে দেখা যায় তারা কোটা বাতিল নয় , সংস্কার চায় । আমিও তাই চাই । কিন্তু ফেষ্টুনে লেখা একটি স্লোগান আমার নজরে কেড়েছে –
“বীরের রক্ত প্রমান করো
কোটা ছেড়ে কলম ধরো “

- Advertisement -

এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা উত্তারাধিকারদের লক্ষ্য করে প্রত্যক্ষ একটি বিদ্রুপাত্মক বার্তা রয়েছে !

দেশের বীর শ্রেষ্ঠ সন্তান কারা ? যারা ‘৭১ এ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। তাদের কেউ শহীদ হয়েছেন , কেউবা বেঁচে আছেন। তাদের সন্তান বা উত্তারাধিকারদেরকে এখানে সরাসরি ব্যঙ্গ করা হচ্ছে যার ভাবার্থ – তোমরা নাকি বীরের বংশধর , তো কোটায় চাকুরী নিবা কেন , মেধার লড়াই করো !

১৯৭১ এ এরকম অধিকাংশ ধনী মেধাবী ছাত্ররাই পরীক্ষার হলে যাবার চেষ্টা করেছিল , যদিও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ছাড় দেন নাই । এখানে একটি সত্যিকারের উদাহরন দেয়া যেতে পারে – তখন তিনি কলেজ পড়ুয়া ছাত্র , পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মঞ্জুরুল হক ( সাবেক সাধারন সম্পাদক , বিমান শ্রমিক লীগ) । তারই এক সহপাঠী মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের একজন শক্তি , যিনি কলেজের মেধাবী ফার্স্ট বয় । মুক্তিযোদ্ধাদের চ্যালেঞ্জ করে পরীক্ষার হলে যান এবং মঞ্জুর তাকে গুলি করে হত্যা করেছেন ।

অতএব মেধাবীরা ( অধিকাংশ ) কালে কালে নিজেকে নিয়েই ভাবেন বেশী , তারা তুলনামূলক বেশী স্বার্থপর হয় , তারা ঝুকি নেয় না – তারা সারা জীবনে হয় ভোগী এবং মঞ্জুরেরা হয় যোগী !

এটা শুধু মানুষ নয় , সমগ্র প্রাণী জগতেরই নিয়ম । আপনারা ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে হয়ত দেখে থাকবেন একটা বা দুটি সিংহ জীবনের ঝুকি নিয়ে সকলের মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য শিকার ধরে , পরোক্ষনেই পালের ১০/১২ টা সিংহ এসে ঐ সংখ্যালঘিষ্ঠ ক্লান্ত শিকারীর কাছ সে শিকার কেড়ে নেয় । ওরাও হয়তো বলে – কোটা নয় , সমতার ভিত্তিতে খেতে হবে ! যেমন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠরা এমনটাই বলেন !

সরকারের হিসাব মতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা থাকলেও তাদের সন্তান বা নাতিদের দিয়ে মাত্র ৭ শতাংশ কোটা পূরন হয় । যেহেতু পাওয়া যায় না তাই বাকী ২৩ শতাংশ মেধাবীদেরকে ফেরত দেয়া হয় । ( যদিও সরকার বা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী বা সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা বিষয়টি জাতির কাছে বা ছাত্রদের কাছে সঠিক ভাবে ব্যপক ভাবে তা তুলে ধরতে পারে নাই বা ইচ্ছাকৃত ভাবে তুলে ধরেন না । কেননা ৯৩ শতাংশের মধ্যে তাদের সন্তানওতো রয়েছে )
মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারী এই ৭ শতাংশকেও প্রিলিমিনারি , লিখিত ও ভাইবা পরীক্ষায় মেধাবীদের মতোই পরীক্ষায় পাশ করতে হয়েছে । সাতজনের কেউ হয়তো সম্মিলিত মেধা তালিকায়ও রয়েছেন !

কথা হলো তারা সংখ্যায় এতো কমে গেল কেন ? প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা না হয় বাদই দিলাম , তালিকার সকল মুক্তিযোদ্ধা যদি ভুয়াও হয়ে থাকে তাহলে তাদের সন্তান-নাতির বর্তমান সংখ্যা মাত্র ৭ শতাংশে ঠেকেছে ! তারা লেখা পড়া করে না ? না , তাদের বাবা-দাদার মতোই তাদের মাথা মোটা , হুজুগে – যারা ‘৭১এ কলম ছেড়ে অস্র তুলে নিয়েছিল ?

অপর পক্ষে, মাত্র ৭শতাংশ কোটাই যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতিপুতি দ্বারা পূরণ হয় তাহলে কাগজে কলমে ৩০ শতাংশ কোটা লিখে রেখে কেন অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে ?

বঙ্গবন্ধুর অমর বক্তব্য – “ যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশী হলেও, সে একজনও যদি হয়, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো ”

সুতরাং সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, ন্যয্যতার ভিত্তিতে কোটা সংস্কার করা জরুরী ।

সংখ্যালঘিষ্ঠ ৭ শতাংশ মেধাবী মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তারাধিকারীগন আপনারাও ফেষ্টুনে লেখা স্লোগানটির কথা মনে রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন । শুধু গনিত পদার্থ রসায়নে ১০০ তে ১০০ পেলেই হবে না , রাষ্ট্র পরিচালনার রসায়নে আপনাদের কৌশলী বুদ্ধি টিপু সুলতানের তলোয়ারের চেয়েও ধারালো হতে হবে ! আপনার কলম হতে হবে আপনার বাপ- দাদার ‘৭১ এর অস্ত্রের চেয়েও অকুতভয়, কঠোর থেকে কঠোরতম !

সুতরাং ভোগী নয় , বাপ-দাদার মতো যোগী হয়ে গর্জে ওঠো , বীরের রক্ত প্রমান করো , কন্ঠে ধরো ——
“ আমি চির-বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!”
জয় বাংলা ॥

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles