
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছবি সংগৃহীত
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতার মধ্যেই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখন অনেকটাই প্রকাশ্যে। গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভায় যার বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গেছে; এদিন মতবিনিময় সভা রূপ নেয় গালমন্দ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ প্রকাশের সভায়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের তোপের মুখে পড়েন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে থাকেন, ‘শুধু দুঃসময়ে ডাকবেন। সুসময়ে ভাই-ভাতিজা, শালা-বোনজামাইকে ও প্রটোকল বাহিনীকে মূল্যায়ন করবেন? এসি রুমে বসে থাকেন, দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের চেনেন না, মূল্যায়ন করেন না। দুঃসময়ে আর কত থাকব?’
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া’, ‘ভুয়া’ স্লোগান দেওয়া হয়। কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা বলতে থাকেন, ‘মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন। তাহলে আমাদের ডাকলেন কেন? আগে আমাদের কথা শুনবেন, আলোচনা করবেন, তারপর ব্রিফ করেন। তা না করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করে দিলেন…।’
জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের দিকনির্দেশনা দিতে মতবিনিময় সভা ডেকেছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এদিন বেলা ১১টার পর অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকেন তিনি। এরপর সাবেক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় না করেই বক্তব্য শুরু করে দেন।
ওবায়দুল কাদের যখন বলতে শুরু করেন, ‘এখন দুঃসময়। এই দুঃসময়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে…।’ তখনই ফুঁসে ওঠে পুরো মিলনায়তন। একে একে সবার কণ্ঠস্বরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ ঝরে পড়ে। গালমন্দ করেও ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা। সেই পরিস্থিতি আর সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। বক্তব্য শেষ না করেই মঞ্চ ছাড়তে বাধ্য হন ওবায়দুল কাদের।
নাম প্রকাশ না করে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘ডেকেছেন মতবিনিময় সভা করবেন। তা না করে উনি কেতাবি বক্তব্য শুরু করে দিলেন। আরে ভাই, বক্তব্য অনেক শুনেছি, আর কত!’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলের একাধিক নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে দলের মধ্যে বঞ্চিতদের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের সবাই দুর্দিনের নেতাকর্মী। মূল্যায়ন হয়নি তাদের এ অভিযোগ মিথ্যা নয়। সুতরাং তাদের অভিযোগ সবার মাথা পেতে নেওয়া উচিত। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ নেতারা আরও বলেন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রকাশ ঘটবে। তবে কোনো কিছুই অতিরঞ্জিত করা যাবে না।