
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তোপখানা রোডের একটি আবাসিক হোটেল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদনান সাকিবের ঝুলন্ত মরদেহের কাছেই একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। যেটি উদ্ধার করে ঘটনার আলামত হিসেবে সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। ওই চিরকুটে নিজ স্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন কিছু লিখে গেছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে হোটেল কর্ণফুলীর একটি কক্ষ থেকে ২৫ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানান শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুল হক ভূঁইয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র আদনান সাকিবের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার উত্তর সোনাখুলী গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল মালেক। হোটেল কক্ষের দরজা ভেঙে সাকিবের ঝুলন্ত লাশ পাওয়ার কথা জানিয়ে পরিদর্শক মাহফুজ বলেন সে আত্মহত্যা করেছ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমরা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সাকিব বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার রাতে যোগাযোগ করতে না পেরে এবং মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তার স্ত্রী বুধবার সকালে থানায় জিডি করেছিলেন।
পুলিশ আরও জানায়, আদানান সাকিব ওই হোটেলে উঠেছিল গত মঙ্গলবার। বুধবার রাতে হোটেলের লোকজন ডাকাডাকি করে সাড়া না পাওয়ায় পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে রাত ১২টার দিকে দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে।
ওই কক্ষে একটি চিরকুট পাওয়ার কথা জানিয়ে পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ বলেন, সেখানে স্ত্রীকে পৃথিবীর শুদ্ধতম মানুষ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না, মানসিক চাপের কথা বলা হয়েছে।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলেও সাকিবের মানসিক চাপের মধ্যে থাকার কথা জানতে পেরেছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, গ্রাম থেকে সাকিবের পরিবারের সদস্যরা আসছেন। তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
একই বিষয়ে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ সাহা বলেন, গত বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত ৯টায় তার স্ত্রী নুসরাত আফরিন থানায় এসে জানান তার স্বামী আদনানকে দুই দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। পরশুদিন দুপুরে শেষ কথা হয়, এরপর আর পাওয়া যায়নি। তিনি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং- ১৯৫৪) করেন। আমরা সাকিবের মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করি। সেখানে দেখা যায়, সেগুনবাগিচা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে তার অবস্থান দেখাচ্ছে। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া গেল না। পাশের কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে খোঁজ নিলে তার সন্ধান মেলে। আমরা ১০৭ নম্বর কক্ষে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করলেও সে দরজা খোলেনি। পরে দরজা ভেঙে দেখি তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, সাকিব একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছে। সেখানে লিখেছে-তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। তার স্ত্রীকে দোষারোপ না করার কথা লিখেছেন। সুইসাইড নোটে ১২ বছরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার কাছে ১ সেকেন্ড ১ বছরের মতো মনে হয় বলেও লেখা আছে।