-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

কেলগেরি ও পেনটিংটন

কেলগেরি ও পেনটিংটন
মারিয়ার কাছ থেকে রাস্তার খবরা খবর নিয়ে আমরা আরেকটু এগিয়ে গেলাম ভেনকুভারের বর্ডার এর আরেকটু কাছে

সাত
আমরা এই বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে নিজেদের রুমে যেতে চাইলাম। মারিয়া আমাদের জানালো তার এখানে আফ্রিকার সাজে, ইন্ডিয়ান সাজে এবং চাইনিজ সাজের ঘর আছে আমাদের কি পছন্দ? আমি এক কথাতে আফ্রিকান রুমটা নিয়ে নিলাম। মুন্নি আবেদিন ভাই নিলেন ভারতীয় রুমটা । রুমে ঢুকেও আমাদের অনেক চমক। আমাদের মনে হচ্ছিল আমরা আফ্রিকা এবং ইন্ডিয়ান কারো বাড়ীতেই এসেছি। আমরা নিজেরাই বললাম মহিলা সত্যিই ক্রেয়েটিভ । যা হোক মুন্নির নিয়ে আসা খাবার দিয়ে আমরা লাঞ্চ শেষ করলাম। আমাদের দুই রুমের পাশেই সাজিয়ে রাখা লিভিং রুম খাবার ঘর, ফ্রিয, টেলিভিশন সব কিছুর ব্যবস্থা আছে। রান্নার সব সরঞ্জাম ও আছে। সাধারনত বেড়াতে এসে এ কাজে মহিলারা নামতে চায় না । যদিও সকালের নাস্তা দেবার দায়িত্ব বাড়ি ওয়ালার ছিলো । আমরা নাস্তা শেষ করে মহিলার কাছে শহরটি সম্পর্কে জেনে একটা ম্যাপ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম । শান্ত সুন্দর ছোট শহর । এই দেশে ছোট শহরের পরিবেশটা দারুন লাগে আমার। সেদিন কি উপলক্ষে যেনো মেলা বসেছে নানা রকমের সুন্দর সুন্দর জিনিস নিয়ে। আমি শপিং ক্রেযি মহিলা কতো কিছু কিনে ফেললাম। বাইরে খাওয়া দাওয়া করে কিছু খাবার জিনিস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ঘরে ফিরলাম । আমাদের পরের দিনের ট্রিপটা ছিলো অনেক আনন্দের।

মারিয়ার কাছ থেকে রাস্তার খবরা খবর নিয়ে আমরা আরেকটু এগিয়ে গেলাম ভেনকুভারের বর্ডার এর আরেকটু কাছে। দু পাশে একরের পর একর কৃষি জমি। জমির এক পাশে বিশাল বাড়ি । জমিতে ঘুরা ঘুরি করতে দেখলাম সেলয়ার কামিজ পরা মহিলারা হাঁটাহাঁটি করে তাদের ফসল দেখা শুনা করছে। এ রকম অনেক গুলো কৃষি জমি মাইলের পর মাইল। এবং সব কটা জমির পাশে তাদের বিশাল আকারের বাড়ি । এই বাড়ি গুলোতে জমির মালিকদের পুরো পরিবার থাকে। পাঞ্জাবী পরিবার সবাই। ওরা অনেক আগে এখানে এসেছে। একরের পর একর জমি কিনে নিজেদের ফার্ম বানিয়েছে, ফসল ফলাচ্ছে। ওদের স্ত্রী রাও স্বামীদের সহযোগিতা করে। ওরা অনেক ধনী । প্রচুর টাকা ওরা উপার্জন করে ফসল ফলিয়ে। তাদের বাবা মা ভাই বোন সবাইকে এরা নিয়ে এসেছে এই দেশে।

- Advertisement -

ভালো লাগলো এই দৃশ্য দেখে। বিশেষ করে ভারতীও পোশাক পরে মহিলাদের জমিতে কাজ করতে দেখে।

আমাদের ফিরে যাবার সময় এসে গেলো । যাবার আগে একদিন আমরা মর্তে নেমে আসা স্বর্গে কাটালাম । চারপাশটা ঘুরে ঘুরে উপভোগ করলাম। সমুদ্রের পাশে বসে হাওয়া খেলাম, সূর্য অস্ত দেখলাম। নানা রকম ছবি উঠালাম । পরের দিন সকালের নাস্তা খেয়ে মারিয়া ও স্বামীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়ীতে উঠলাম । এতো সুন্দর একটা জায়গা ছাড়তে মন খারাপ হলো । কিন্তু ফিরতেতো হবেই। তারপর কেলগেরি হয়ে আমাদের ফিরতে হবে টরোন্ট । ফিরে এসে আবেদিন ভাই ও মুন্নিদের ওখানে দুদিন থেকে রওয়ানা হলাম টরোন্টর দিয়ে এক রাশ মন খারাপ নিয়ে। আসা যাওয়া টাই জীবনের নিয়ম। আবার ফিরে এলাম রুটিন জীবনে ।

আবার শুরু হলো সংসার, ঘরে বাইরে কাজ, ছেলেমেয়েদের আসা যাওয়া , ওদের শুন্য রুমে মন উদাস করে বসে ঘুঘুর ডাক শোনা । অদ্ভুত একটা পাখি এই ঘুঘু তার কণ্ঠে সারাক্ষণ একটা সুর বাজে। যা শুধু বুকের ভেতর হাহাকারের সুর বাজিয়ে দেয়। তার কণ্ঠে যেনো কোনো আনন্দ নেই শুধুই বিরহ বেদনা। এই বেদনার সুরটাই কখনো কখনো আমাকে ডেকে নিয়ে যায় কোন সুদুরে।

ম্যালটন, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles