-1.7 C
Toronto
বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

আমাদের মাফ করে দিস

আমাদের মাফ করে দিস
ভাবতাম বুদ্ধি হতে সময় লাগে বহু বছর বয়স হতে হয় কিন্তু এ তোরা কি দেখালি

ভাবতাম বর্তমান জেনারেশন মানেই তোরা শুধু মোবাইল টিপিস, প্রেম করিস, গেমস খেলিস আর শুধু দেশের বাইরে যাওয়ার ধান্ধা। ভাবতাম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পোলাপানরা আন্দোলন শিখেনি। এখন বুঝেছি, ছাত্র-ছাত্রিদের মধ্যে প্রাইভেট-সরকারি বলে কোনো ভেদাভেদ নেই।

মাফ করে দিস বর্তমান প্রজন্ম।

- Advertisement -

ভাবতাম, দেশ নিয়ে তোদের চিন্তা নাই, কিচ্ছু শুনিস না, বুঝিস না; সরকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, দ্রব্যমূল্য, ট্রাফিক জ্যাম, নিরাপদ সড়ক, দুর্নীতি, দুর্ভোগ নিয়ে তোদের কোনো মাথাব্যথা নাই, আমলে নিস না; ডোন্ট কেয়ার পাবলিক।

ভাবতাম বুদ্ধি হতে সময় লাগে বহু বছর, বয়স হতে হয়। কিন্তু এ তোরা কি দেখালি? তোদের উঠতি বয়সের চিন্তা ভাবনা, কথাবার্তা, মত প্রকাশ, ধৈর্য্য, সহনশীলতা; সবকিছুতেই মুন্সিয়ানা! স্মার্টনেস একেই বলে।

কে জানতো, তোদের সারা শরীরে মাছির মতো হাজারো চোখ? তোরা এক-একটা সাক্ষাৎ টাইম বোমা। মুরুব্বিদের ঘুনাক্ষরেও বুঝতে দিতি না যে তোরা কথায় না, কাজে বিশ্বাসী। তোদের ছায়ায় আমাদের মতো ভীতুর ডিমদেরও জায়গা করে দিয়ে আলিঙ্গন করে নিলি। যোগ্য-অযোগ্য সবাইকে নিয়েই তোদের বিজয়। তোদের পরিকল্পনা বাংলাদেশের সবাইকে নিয়ে একসাথে হাসবি, একসাথে কাদঁবি!

আর তোদের মা-বাবা; কি ভাগ্যবান তাঁরা! শ্রেষ্ঠ সন্তানের মাতা-পিতা। তাঁরা রাবনের চিতায় শুতেও রাজি, তবুও তোদের পাশে ছিলেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। আমরণ যন্ত্রনায় কাতরিয়ে ভালবেসে যাবে দেশকে।

তোরা মাফ করে দিস আমাদের মতো কাপুরুষদের; যারা রাস্তায় নামতে ভয় পাই। অথচ তোরা ঝটিকা আক্রমণ দিয়ে করে ফেললি অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান। এখনো মনে হয়, স্বপ্ন দেখছি না তো? বিজয়ের আনন্দ যে কি, সেটা বুঝলাম।

আমার মতো ব্যালাস্ট-স্টার্টার দেয়া মান্ধাত্বা আমলের রডলাইট কে মাফ করে দিস। তোদের দেখে সারা বিশ্ব সারপ্রাইজড, অভিভূত। বাংলাদেশ নিয়ে কটূক্তি করতে এখন তারা দ্বিতীয়বার ভাববে। বুঝিয়ে দিলি, চুপ করে থাকা মানেই আজীবন সহ্য করা নয়, অবজ্ঞা করা নয়। ভাবতাম স্বৈরাচার কে সহজে হটানো যাবে না। অথচ সারা বাংলাদেশের মানুষ কে একত্র করলি।

রিক্সারওয়ালা থেকে শুরু করে শিক্ষক। কোলের বাচ্চা পর্যন্ত শহীদ হয়েছে। কি নৃশংসতা! এখনও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। শত শত, হাজারো সন্তান আর কখনো ফিরবে না মায়ের বুকে। অফুরন্ত সাঈদ-মুগ্ধ ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। তাঁরা অমর হয়ে থাকবে বাংলায়।

এখন দেশ চালাচ্ছিস মূলত তোরা; ছাত্র-ছাত্রীরা। আমাদের চোখ খুলে দিয়েছিস; যুদ্ধে জেতা মানেই যুদ্ধের শেষ নয়। আজীবন স্বাধীনতাকে মাজা-ঘষা করে রাখতে হয়; বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নেই। স্বাধীনতা অর্জনের চাইতেও বড় পরীক্ষা ধরে রাখা। মৃত্যুকে তোরা বুড়ো আঙ্গুল দেখাস। বুলেটকে তোরা থোড়াই কেয়ার করিস। তোদের সাহসের কাছে মানবসৃষ্ট এমন কোনো অপশক্তি নেই, যে রুখতে পারে।

শুধু বিস্ময় আর বিস্ময়! কি একতা, জানের মায়া ভুলে কেউ দিয়েছে এক ঢোক পানি, কেউ দিয়েছে এক নলা ভাত। তোদের বিশ্বাস বুলেটের চাইতে মানুষ বেশি; তাই কতজনকে মারবে?

আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, তোরা আবার প্রমাণ দিলি। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হয়েছে নতুন করে।

আমরা তোদের ভালবাসি।

অনেক পথ এগুতে হবে সামনে, সবাইকে নিয়ে, ধৈর্য্য ধরে। নতুন বাংলাদেশের শুরু। সব হত্যা, অন্যায়ের বিচার হবে। সতেরো কোটি মানুষ আবার নতুন আশায় বুক বেঁধেছে। আগে সবাই শুধু দেশ ছাড়তে চাইতো। এখন উল্টা; ছাত্র-ছাত্রী, জনতা ফিরে আসতে চাইছে দেশ গড়তে। লক্ষ ডলারের চাকরি ছেড়ে। অভাবনীয়, যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা!

বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বিশ্বের দরবারে। নতুন শক্তি সঞ্চয় করে!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles