0.2 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

ইউনুসনামা!

ইউনুসনামা!
সরকার আরো কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে আপাতত সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে

বঙ্গবন্ধুর পর এই একজন মানুষই এখন জীবিত আছেন যিনি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বাদে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও বাংলাদেশের অমুল্য সম্পদ। দু’জন দুই সময়ের। একজনের সাথে অপরজনের তুলনা চলে না। বয়স ৮৪, গুরু দায়িত্ব কাঁধে। দয়া করে তাকে কাজ করতে দিন। রাষ্ট্র সংস্কার মুখের কথা নয়। ১/১১ ফেইল করেছে। তত্তাবধায়ক পদ্ধতি ফেইল করেছে, পরিবারতন্ত্র ফেইল করেছে, স্বৈরতন্ত্র, রাজা রানি তন্ত্র এদেশের মানুষ পছন্দ করে না। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য যে এরকম একটা বিশাল সংকটময় মুহুর্তে ডক্টর ইউনুস দায়িত্ব নিয়েছেন।

এখন তার মুল কাজ হলো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র সংস্কার করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। সেটা করতে হলে রিকনসিলিয়েশন দরকার। কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে একটা ইনক্লুসিভ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে দেশ বার বার রক্তক্ষয়ী পরিস্হিতির সম্মুখীন হবে। সংক্ষেপে বলি, যদিও এ সময়ে কেউ কারো কথা শোনার মত অবস্হায় নেই, তবুও বলছি জাষ্ট রেকর্ড রাখার জন্যে। আগে যেমন বলেছি দেশের কোটি কোটি মানুষকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে, পাকিস্তান পাঠানোর হুমকি দিয়ে দেশ চালানো যাবে না, এখন ঠিক তেমনি বলছি, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করে, দেশের কোন রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে গনতন্ত্র কায়েম সম্ভব নয়।

- Advertisement -

গনতন্ত্রে কাউকে নিষিদ্ধ করে, মাইনাস করে আগানো যায় না। তবে অপরাধী যে দলেরই হোক আইনের মুখোমুখি করার সক্ষমতা রাষ্ট্রের থাকতে হবে এবং সব রাজনৈতিক দলকে সেটা মেনে নিতে হবে। বহুবার বলেছি, জয়বাংলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান, এটাকে দলীয় শ্লোগান বানাবেন না। বঙ্গবন্ধু যদি জাতির পিতা হন, সেই জাতি যদি বাঙালী জাতি বা বাংলাদেশী জাতি হয় তবে জাতির সকলকে গণনায় নিতে হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাত বা হেফাজত ইসলাম কিংবা যারা দল করেন না সকলে মিলেই এই জাতি। কাজেই কাউকে বাদ দিয়ে জাতি হয় না।

সকলকে আস্থায় নিয়েই সকল জাতীয় বিষয় ঘোষণা দিলে সেই ঘোষণা টেকসই হয়। কোনকিছু চাপিয়ে দিয়ে সেটাকে টেকসই করা যায় না। সেজন্যেই বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু, মহান মুক্তিযুদ্ধ, জয়বাংলা শ্লোগান ইত্যাদি বিষয়গুলিকে কখনই কোন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে বিজয়ের কিংবা ক্ষমতার হালুয়া রুটি বন্টনের অথবা জনগণের উপর স্টিম রোলার চালানোর হাতিয়ার করবেন না। কিন্তু করা হয়েছে এবং সে কারণেই যখন একটা অস্বাভাবিক কায়দায় সরকার পতন হয়েছে, সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুকে অমর্যাদাকর অবস্হার শিকার হতে হয়েছে যার জন্যে প্রধানত দায়ী সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ভুলনীতি, দুর্নীতি, জুলুম, নির্যাতন। আর দ্বিতীয়ত দায়ী ক্ষুদ্র একটি সুযোগ সন্ধানী স্বাধীনতা বিরোধী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ তৃতীয় পক্ষ।

কিন্তু আমার ধারণা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে সচেতন আছেন তবে এ মুহুর্তে তাদের কিছু লিমিটেশন আছে। সরকার আরো কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। আপাতত সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। বিগত সরকারগুলো সব সময় চেষ্টা করেছে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সবকিছু নিজেদের দখলে নিতে, মেধাকে বাদ দিয়ে নানাভাবে দলীয়করণ করে ক্ষমতাকে চিরস্হায়ী করতে। সর্বশেষ সরকার দীর্ঘ ষোল বছর ক্ষমতায় থাকলেও তাদেরকে যে অবস্হায় চলে যেতে হলো এটা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। কেউ একজন ঘৃণা ছড়িয়েছে বলেই আপনাকেও ঘৃণা ছড়াতে হবে, এরকম হলে আপনার পরিণতিও একই বা আরো খারাপ হতে পারে। আসুন আইন নিজের হাতে তুলে না নেই। অপরাধী যেন বিচারের মুখোমুখি হয় সেই সমাজ কায়েম করি। মানুষকে যেন তার মতামত প্রকাশের কারণে অযথা ট্যাগিং না করি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles