-0 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

মায়া রিভারা

মায়া রিভারা
মায়া রিভারা

প্রথম পর্ব
প্রতি বছর ব্যস্ত একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুটা অবসর নেবার জন্য বেড়িয়ে পরতাম দূরে বা কাছে কোথাও বেড়াতে । সংসার, কর্ম ব্যস্ত জীবন যখন হাঁপিয়ে তোলে তখন মনে হয় সময় এসেছে নিজের দিকে ফিরে তাকাবার, নিজেকে ভালোবাসার, নিজেকে আপ্যায়ন করার। সে উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরতাম জীবনটাকে অন্য ভাবে দেখার জন্য । এবারো সে ভাবনাটাই আবার মাথায় এলো ।

এবার আমি আর আমার জীবন সঙ্গী ঠিক করলাম এমন কোথাও যাবো যে দিকটাতে আমাদের আগে যাওয়া হয়নি কখনো এবং উড়োজাহাজে বেশী সময় বসে থাকতে হবে না। কম্পিউটার খুলে বসে গেলাম দুজনে । খুঁজে বের করলাম আমাদের মনের মতো একটি জায়গা । ম্যাক্সিকোর উপসাগরের তীর ঘেঁষা একটি রেজোটে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ম্যাক্সিকোর রেজোট শহর রিভারা মায়ার ‘মায়া কারিবা’ রেজোটে আমরা যাবো এবার। যেই ভাবা সেই কাজ । টিকেট বুক করে ফেললাম। রেজোটেও বুকিং দেয়া হয়ে গেল। সব কিছু ঠিক করে টিকেট কেনার পরে ছেলে মেয়েদের জানালাম আমাদের বেড়াতে যাবার কথা। ছেলে মেয়ে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকলো আমাদের দিকে। আমাদের ছেলে মেয়েরা হোল ভেকেশান মাষ্টার । কতো জায়গাতে ওরা ঘুরে বেড়ায় । কিছুমাস পর পর ভেকেশান না নিলে ওদের জীবনই বরবাদ ।

- Advertisement -

এইতো গত সাপ্তাহে মেয়ে তার পরিবার নিয়ে ঘুরে এলো কেরেবিয়ানের একটা রেজোট থেকে। বুঝলাম ছেলে মেয়ে খুবই অপমানিত বোধ করছে ওরা এতো অভিজ্ঞ এসব ব্যাপারে অথচ তাদের কোন পরামর্শ উপদেশ কিছুই নিলাম না আমরা। আমি হাসলাম আর মনে মনে বললাম, তোমরা যখন ছোট ছিলে তখন দুধের বোতল আর ডায়পার ব্যাগ নিয়ে কতো দেশ ঘুরেছি। তোমরা ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে সারা ইউরোপ ঘুরে বেড়িয়েছি তখনতো আমরা কারো পরামর্শ নেইনি । তোমাদের কিশোর বয়েসেও ঘুরে বেড়িয়েছ কত জায়গাতে আমাদের সাথে। আর এখন কিনা তোমরা ভাবছো তোমাদের সাথে কথা না বলে কি করে টিকেট কিনে ফেললাম? তবে অনেক খুশি হলাম ছেলে মেয়েদের আমাদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়া দেখে। মুখে বললাম, সত্যি অনেক ভুল হয়ে গেছে- আমাদের উচিৎ ছিলো টিকেট কেনার আগে তোমাদের সাথে কথা বলে নেয়া । তারপর ছেলে মেয়ে ইন্টারনেট খুলে দেখতে বসে গেলো এই রেজোটটা আমাদের জন্য কতোটুকু আনন্দদায়ক হবে? ওরা কথা বলে সিদ্ধান্তে পৌছালো আমাদের পছন্দ ঠিকই আছে । ওদের কর্ম কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছিল ওরা আমাদের বাবা মা আর আমরা তাদের সন্তান । আমরা ওদের সাথে যা করেছি ওরা ঠিক সেটাই করছে আমাদের সাথে।

যাই হোক অবশেষে মেয়ে মেয়ের জামাই মিলে আমাদের বীচ ব্যাগ গুছিয়ে দিল। সূর্যের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার লোশান, তাপে পুরে গেলে সেটা নিরাময়ের লোশান, পোকা মশা কামড়ানো থেকে নিজেকে বাঁচাবার ক্রিম । তারপরও যদি কামড় দিয়ে ফেলে সে জন্য আফটার বাইট ক্রিম। সুইমিং পুল বা সাগরে সাঁতার কেটে উঠার পর যে গাউনটা দিয়ে নিজেকে জড়াতে হবে সেটাও মেয়ে বীচ ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলো । পই পই করে আমাদের হাজারটা উপদেশ দিয়ে দিল। মেয়ে বারবার জিজ্ঞাস করে নিশ্চিত হতে চাইলো, আমরা পাঁচ তাঁরা হোটেল বুক করেছি কিনা? ছেলে মেয়ে চলে যাবার পরে আমরা দুজন মিলে অনেক আনন্দের হাসি হাসলাম আমাদের সন্তানদের বাবা মায়ের প্রতি এতটা খেয়ালী দেখে ।

যাবার দিন ছেলে আমাদের এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলো। ছেলে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবার আগে আমাদের জড়িয়ে ধরে বলে গেলো, ভ্রমনের প্রতিটি মুহূর্ত যেনো আমরা উপভোগ করি ।

বিমান বন্দরে ঢুকে চেক ইন করলাম তারপর এগিয়ে গেলাম। নিরাপত্তা প্রক্রিয়া কাজ শেষ করে হাঁটতে শুরু করলাম আমাদের নির্দিষ্ট গেটে পৌছাবার উদ্দেশ্য নিয়ে। গেটে এসে যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসলাম । আরো অনেকটা সময় হাতে আছে আমাদের। আমার পাশে এসে বসলেন একজন মধ্যবয়েসই কিংবা তার চাইতে একটু বেশী বয়েসি মহিলা। খুবিই হাসি খুশি মনে হোল মহিলাকে দেখে। আমাকে বললো, জানো আমি জীবনে কখনো একা বেড়াতে যাইনি । এবার আমি একা যাচ্ছি । আমি নিজেকে নিজে ট্রিট করতে যাচ্ছি। আমি মৃদু হেসে জিজ্ঞাস করলাম, আগে কার সাথে যেতে? এখন কেন যাচ্ছ না তাদের সাথে ? মহিলা খুব স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলেন, আগে যেতাম বয়ফ্রেন্ডের সাথে তারপর গেছি নিজের হাসবেন্ডের সাথে । আমাকে জিজ্ঞাস করলো তুমিও কি একা যাচ্ছ ? আমি মাথা নেড়ে বললাম না আমরা দু’জনে যাচ্ছি? আমি জিজ্ঞাস করলাম কোথায় যাচ্ছ তুমি? মহিলা জবাব দিলো রিভারা মায়া ।

তাইনাকি? আমি বেশ উৎফুল­ হয়ে উঠলাম, আমরাওতো ওখানে যাচ্ছি । তবে জানা গেলো আমরা এক শহরে গেলোও আমাদের রেজোট ভিন্ন । এত কথার পরে আমরা খেয়াল করলাম আমাদের কেউ করো নাম জিজ্ঞাস করা হয়নি । আমাদের মাঝে নাম বিনিময় হল। মহিলাটির নাম অলিভিয়া। আমার নামও জানালাম তাকে । আমরা দু’জনই জানি ভবিষ্যতে আমাদের দেখা আর কোনদিনও হবে না । এমন এয়ারপোর্ট বন্ধু উড়োজাহাজ বন্ধু আমার জীবনে অনেক হয়েছে কিন্তু পরবর্তী কালে কখনো তাদের সাথে দেখা হয়নি। অলিভিয়া প্রান খুলে তার মনের কথা আমাকে খুলে বলতে বসলো । অলিভিয়া জানে আমি আর সে এক গোত্রের, এক সমাজের, এক ধর্মের, এক রঙের মানুষ না । কাজেই আমাকে বলতে কোন সমস্যা কোথায়? তাছাড়া এতদিন এদেশে থেকে বুঝতে পেরেছি তারা বাক্তিগত কথাগুলো বিনা দ্বিধাতে বলে যেতে পারে। অলিভিয়ার ভাই আসার সময় তাকে একটা আই ফোন দিয়েছে ব্যাবহারের জন্য । কিন্তু অলিভিয়া সব কিছু বুঝতে পারছিল না ফোনটির। আমার হাতে আই ফোন দেখে আমার কাছে জানতে চাইলো কিছু জিনিষ ফোনের ব্যাপারে । আমিও মহাপণ্ডিত সেজে বসে গেলাম তাকে সব কিছু বুঝাতে । অলিভিয়া আনন্দে আটখানা।

ম্যাল্টন, কানাডা

- Advertisement -
পূর্ববর্তী খবর
পরবর্তী খবর

Related Articles

Latest Articles