
হেডিংটার সঙ্গে লেখাটার মিল খুঁজে পাবেন হয়তো শেষের দিকে। সেজন্য আবার কেউ গালি দিয়েন না প্লিজ ।
আপনারা হয়তো আমার পোস্টের মাধ্যমে জেনেছিলেন যে আমি অটোয়ায় গিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ অটোয়া থেকে গতকাল শনিবার চার ঘণ্টা ড্রাইভিং করে টরন্টোতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে এসেছি। জীবনের প্রথম এত দূরে একা ড্রাইভিং করা। সাহস ছিল প্রচুর। যাওয়ার সময় একটু নার্ভাস লাগলেও তা আর ধোপে টেকে নি আসার সময়। চার গুন সাহস বেড়েছিল। আসার সময় মনে হয়েছে আমি পৃথিবীর সব জায়গাতেই ড্রাইভিং করে যেতে পারব অনায়াসে। অথচ আগে অন্যদের বিভিন্ন প্রভিন্সে ড্রাইভিং করে ঘুরে বেড়াতে দেখলে মনে হতো তারা কতোই না সাহসী। এখন নিজের কাছে এসব কিছুই মনে হচ্ছে। দেখেছেন তো সাহস থাকাটা কিছু অর্জন করতে সাহায্য করে?
যাই হোক, জিপিএস যে সময়টা বেঁধে দিয়েছিল তার চেয়ে এক বিন্দু বিলম্ব হয় নি পথে। চালানো ছিল দারুণ স্মুথ।
বাড়িতে পৌঁছালাম ঠিক বিকেল চারটার দিকে। তারপর গাড়ি থেকে ঘরে ঢোকার আগে গাড়িটা ভালো করে আগে পরিস্কার করে নিলাম। তারপর বাড়ির মধ্যে ঢুকলাম। রেখে গিয়েছিলাম ছোট তিনজনকে। বুঝতেই পারছেন তারা ঘর-বাড়ি কীভাবে রাখতে পারে! দেরি না করে পটাপট সব সাফ করে ফেললাম। আমার husband ঘুমাচ্ছিলেন। আমি ফেরার পর ওনার আর কোনো চিন্তা নেই। আমি সবাইকে এটা-সেটা খাবার দিয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। তারপর ছোট দুইজন মেয়েকে নিয়ে ছুটলাম আমাদের ব্যাক ইয়ার্ডে। সেখানে সবজি বাগানে চেকিং করতে ঢুকলাম। যাওয়ার সময় দেখে গেছে অনেকগুলো লাউ হওয়ার সম্ভাবনা। সেগুলো চেক করলাম। হলুদ পাতা কাটলাম। ম*রা লাউ ফেললাম। আগে এগারোটা লাউ খাওয়া হয়েছে। বর্তমানে আরো প্রায় পনেরোটার মতো হবে ইনশাআল্লাহ। সেসব করার পর আসল পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করলাম।
আসল পরিকল্পনাটা কী?
মাথায় সারাক্ষণ বন্যা পরিস্থিতির কথা। গতকালই আমার মেজভাইয়ের কাছে আপাতত $200 CAD এর সমান টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। উনি নিজে গিয়ে টিএসসিতে ছাত্রদের হাতে দিয়ে এসেছেন। তিনি আবার ছবিও পাঠিয়ে দিয়েছেন আমাকে যে তিনি কাজটা ঠিকঠাক মতো করেছেন তার প্রুভ।
অনেকেই অনেক বেশি টাকা দিচ্ছেন। আবার যে যা পারছেন তাই দিচ্ছেন। মোট কথা সবাই এত বেশি করছেন তা ভাবা যায় না।
বাড়িতে ফেরার পর যে পরিকল্পনাটা করেছি সেটা হলো আমার বাড়ির সামনে আমি আজ রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে একটা ‘Garage sale’ এর আয়োজন করেছি। এদেশে garage sale টা অনেক বেশি পপুলার। সব প্রভিন্সেই হয়। এটা হলো নিজেদের জিনিসপত্র কম দামে বিক্রি করা। যে কোনো জিনিস হতে পারে। আমি কখনোই এটা করি নি। বাড়ির অসংখ্য জিনিস ডোনেট করি কিন্তু garage sale এ বিক্রি করি নি। এসব কে করতে যায় এই ভেবে।
যাই হোক, বাড়িতে ফিরে ভাবলাম, রোববারে একটা garage sale দিলে খারাপ হয় না। আমার অনেক কিছু আছে যা সেলের জন্য সাজানো যাবে। উদ্দেশ্য এসব সেলের প্রত্যেকটা টাকা বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য দেশে পাঠাব।
তাই গতকাল বিকেলেই আমার শেডের মধ্য থেকে অনেক কিছু নামালাম। একটা ব্রান্ডের প্রসার কুকার দেশ থেকে অনেক দিন আগে এনেছিলাম। তখন দাম নিয়েছিল চার হাজার টাকা। সেটা ইনটেক। এক মিনিটের জন্যও ইউজ করি নি। সেটা সেলে রেখেছি। তারপর আছে আমার কিছু ভালো ব্লেজার, বাচ্চাদের ব্লেজার-জামা-প্যান্ট। আরো আছে ব্রান্ড নিউ টেবিল ল্যাম্প, সেরামিকে প্লেট-পিরিচ, কেক-স্ট্যান্ড উইথ লিড, দুইটা টিভি আছে। একটা 60 ইঞ্চি আরেকটা ছোট। এদের রিমোট নেই। রেমোট কিনলে চলবে। তাছাড়া অনেক জোড়া জুতা নাইকি, পোমা ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু শো-পিস। যেগুলো কিনেছিলাম $20 এমন দাম দিয়ে সেগুলো বিক্রি করব $7-8 cad দিয়ে।
তারপর চলে গেলাম dollarama তে। সেখান থেকে কিনলাম হার্ডবোর্ড পেপার, জাম্বু মারকার, স্টিকি পেপার ইত্যাদি। বাড়ি এসে আটখানা পোস্টার বানালাম। লিখলাম Garage sale। Sunday Aug. 25. 9:30 am-6:00 pm.
money is going to donation. তারপর ঠিকানা দিয়ে দিলাম। এসব পোস্টার বানানোর পর আমার ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে চলে গেলাম রাস্তায় বিভিন্ন জায়গাতে লাগাতে। সবগুলো লাগিয়ে দিতে রাত আটটা বাজল। যদি শনিবার সকালেও পোস্টার লাগাতে পারতাম তাহলে কাস্টমার হয়তো বেশি হতো। মেরেছি তো সন্ধ্যায়। যাই হোক, ফোন করে কাউকে কাউকে বলেছি এসে কিনতে যেহেতু ডোনেশনে যাবে। দেখা যাক কতোটা কী হয়।
আজ সকাল আটটা থেকে এসব করতে লেগে যেতে হবে। সব জিনিসের গায়ে মূল্য লাগাতে হবে। অনেক কাজ।
বাড়ির ভাড়াটিয়াদের অনুরোধ করেছি গাড়িগুলো যেন ড্রাইভওয়েতে না রাখেন। সেখানেই সেল হবে। এসব করা যখন শেষ তখন বারোটা বাজে। মানে শনিবার শেষ। রবিবারের যাত্রা শুরু।
মনের মধ্যে অনুভূতির গভীরতা অনুযায়ী মানুষের বিকেক কাজ করে। এটা আমার অনুভূতি। যেভাবেই হোক অনুভূতি দিয়েও যে কোনো পরিস্থিতিতে পাশে থাকি। এটাও কিন্তু নেহাতই কম না।
আল্লাহ আপনাদের নিরাপদ রাখুন।
টরন্টো, কানাডা