
গতকাল ছিলো কালি দা’ অর্থাৎ কালিকৃঞ্ষ এর জন্মদিন। এবার কলকাতা বইমেলার জ্বলজ্বল স্মৃতিগুলো বার বার নাড়া দিচ্ছে। জন্মদিনে মনে পড়ছে প্রথম দেখার স্মৃতি। একটু আগে কালি দা’র সাথে ফোনে কথা হলো। কি অদ্ভূত! গলা শোনের বলে উঠলেন, দুলাল! কেমন আছো?
তাঁর সাথে প্রথম দেখা ট্রেনে। ১৯৮৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর দুইদিনব্যাপী পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে প্রতিষ্ঠান বিরোধী লেখকদের এক বড় সমাবেশ হয়- শতজল ঝর্ণার ধ্বনি। সে সমাবেশে ভারতের নানা অঞ্চল থেকে বাংলা ভাষাভাষী প্রায় দুই থেকে আড়াইশো কিংবা তারও বেশি হতে পারে, কবি-লেখক-সম্পাদক যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলাম আমি, তুষার দাশ, ফরিদ কবির, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, হারুন রশিদ এবং দারা মাহমুদ।
সম্মেলনে কালিকৃষ্ণ গুহ, জয় গোস্বামী, মৃদুল দাশগুপ্ত, গৌতম চৌধুরীরা যোগ দিয়েছিলেন। আমরা কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলাম ট্রেনে। আমাদের কামড়ায় ছিলেন কালি দা। তাঁর আড্ডা আজো মনের আয়নায় জ্বলজ্বল করছে। তাঁর জন্ম ফরিদপুর। সেই স্মৃতিচারণ করে এভাবেই বলেছিলেন—ফরিদপুর আজো আমার মনের আয়নায় জ্বলজ্বল করছে। কালি দা’র ‘ছকু খানসামা লেন’ কবিতা পড়ে থমকে যাই। অতি সহজ সরল ভাষায় কি গভীর, ত্বাত্তিক, অসাম্প্রদায়িক এবং অসাধারণ অনুভুতি! এতো আমাদের সকলের কথা, সবার ব্যথা! যদি তাঁর কবিতাটির রূপান্তর, দেশান্তর, স্থানান্তর, ভাবান্তর অথবা বাংলাদেশ সংস্করণ করি; তাহলে কী দাঁড়ায়:
………………………………………
একসময় ইন্দিরা রোড়ের শান্তির ভিতর দিয়ে হাঁটতাম।
আজ কল্যাণপুর, সিদ্ধেশ্বরী রোড, অনেক পথ ঘুরতে ঘুরতে
একসময় দেখলাম কালিবাড়ি মন্দির থেকে জগন্নাথ রোড দিয়ে হাঁটছি।
বুড়িগঙ্গা দেখে তারপর এসে পড়লাম ফরাশ গঞ্জে, সূত্রাপুরে, গেন্ডারিয়ায়।
আরও পরে লক্ষী বাজার, শাঁখারী বাজার, কাপ্তান বাজার, বাবু বাজার।
শীতের দুপুর।
অন্ধকার পটুয়াটুলী লেন, নারিন্দা রোড, ঢাকেশ্বরীর গলিগুলিতে দ্রুত ছাপা হচ্ছে
কত মায়ামমতাভরা কবিতার বই!
একদিন স্বামীবাগ, রামপুরা, শ্যামপুর, কায়েতটুলি, টিকাটুলি, মাহুতটুলি, দিয়ে হাঁটব-
স্মৃতি বিস্মৃতির এই শহরের একজন ধর্মহীন নাগরিক হিসেবে
এইটুকুই উচ্চাকাঙ্ক্ষা।
কিন্তু মহাপুরুষদের জন্য জায়গা করতে গিয়ে
এই শহরের গ্রহরত্নশোভিত টাকার কুমির কর্তারা
এঁদের নামগুলি মুছে ফেলবে না তো?
বিলুপ্ত বিক্রমপুরের মত নারায়ণগঞ্জ, ধলেশ্বরীর সর্বনাম
ভয়ে ভয়ে থাকি।
ভাবতে ইচ্ছে হয়, ইন্দিরা গান্ধী একজন
মহান মানুষ ছিলেন।
ইস্টইয়র্ক, কানাডা