6.6 C
Toronto
বুধবার, মার্চ ১৯, ২০২৫

ট্যাটু

ট্যাটু - the Bengali Times
ট্যাটু

রফিক দোয়া ইউনুস পড়ে মিরপুরে ঢুকছে। তাকে খালেদ ভাই বলেছে
বুঝছো পারতপক্ষে মিরপুরের দিকে যাবে না। এ জায়গায় সুন্দরী পরীদের বসবাস। জায়গাটাকে পরীস্তান বলা চলে। এই আকর্ষণ বড়ই তীব্র আকর্ষণ। ঘরে আর ফিরতে ইচ্ছে করবে না।

খালেদ ভাইয়ের মধ্যে একটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার আছে। চোখে সুরমা দেয়। সবাই তাকে বেশ সমীহ করে।

- Advertisement -

রফিক রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। বিভিন্ন জায়গায় কাজ হচ্ছে। হটাত সে দেখতে পেলো সে এক অন্ধকার গুহায় ঢুকে পরেছে। গুহার মধ্যে একটা আলো জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে পরীর চোখ। সে ফিসফিস করে বললো
দেখুন আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। যদি আমাকে নিয়ে যান তবে একেবারে নিয়ে যান কিন্তু ফেরত দেয়ার ইচ্ছে থাকলে নিয়ে যাবেন না প্লিজ।

এক পুরুষ কণ্ঠ শুনা গেলো। গায়েবী আওয়াজের মতো
ভাইজান কি বেশি টানছেন নাকি? উপরে মেট্রো-রেলের কাজ হচ্ছে। তাই এই জায়গাটা অন্ধকার। আমি বিড়ি টানতেছি এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছি। আপনাকে কে নিয়ে যাবে? আমার সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ সারেন। একলা মজা পাচ্ছি না।
রফিক দ্রুত হেটে গুহা থেকে বের হয়ে আসে। খালেদ ভাই ঠিকই বলেছে। জায়গায় জায়গায় ভূতদের আড্ডাখানা মনে হচ্ছে।

ঠিক তখনি একটা কালো রঙয়ের মাইক্রোবাস রফিকের পাশে এসে থামলো। তিনজন ষণ্ডামার্কা ভূত গাড়ি থেকে নেমে রফিককে টেনে তুললো। ইতিহাসে ভূতদের কর্তৃক প্রথম মানব সন্তান অপহরণের ঘটনা ঘটলো।
ভূতদের চেহারা মানুষের মতো। রফিক পাশের জনকে জোরে চিমটি দেয়। পাশের লোক উহু বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।

রফিক তখন নিউটনের মতো আবিষ্কার করে
চিমটি দিলে ভূতেরা ব্যথা পায়। ইহা নিউটনের আপেল গাছের নীচে বসা মধ্য-আকর্ষণের শক্তি আবিষ্কারের চাইতে কোন অংশে কম নয়।

স্যার আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? রফিক ভেবে ঠিক করে ভূতদের স্যার বলাই ভালো।
মুখ বন্ধ। শাট ইউর মাউথ।

ভূতদের মুখে ইংলিশ শুনে রফিক অভিভূত। বুঝা যাচ্ছে শিক্ষিত ভূত।
হটাত সে দেখতে পায় খালেদ ভাই রাস্তার পাশে এক মহিলার সঙ্গে বসে ফুচকা খাচ্ছে। সে বুঝে উঠতে পারছে না তাদের মিরপুরে আসতে মানা করে খালেদ ভাই এখানে কি করছে। পরীস্তানের পরীদের সঙ্গে বসে কেন ফুচকা খাচ্ছে?
রফিককে এক বাসায় ঢুকানো হয়েছে। সেখানে দুইজন অতি শুকনা লোক তাকে আপাদমস্তক পরখ করছে। একজনের নাম দেয়া যায় বোতল শুকনা আরেকজনকে দেয়া যায় পাইপ শুকনা।

বোতল শুকনা পাইপ শুকনাকে বলেছে
একে রুমি আপা পছন্দ করছে?
পাইপ শুকনা বললো
কি আর বলবো বল। এটা কোন পছন্দ হইলো? তার চাইতে আমি খারাপ ছিলাম কি?

রফিক বুঝে উঠতে পারছে না। এরা কি বলছে। রুমি আপা নামে কেউ তাকে পছন্দ করেছে। এবং তার জন্য একে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। এই রুমি আপা হচ্ছে পরী। কিন্তু দুষ্ট পরী মনে হচ্ছে। ভালো পরী হলে প্রেমে ফেলে আনতো।
পাইপ শুকনা বলছে
কিছু করার নাই। তুই তোর কাজ শুরু কর। রফিকের গলা শুকিয়ে আসছে।

ভূত মহোদয়। আমি জানি না আমাকে কেন ধরে আনা হয়েছে। তবে যিনি ধরে নিয়ে এসেছেন তিনি বড় ভুল করেছেন। আমি একজন বিবাহিত পুরুষ। একজন বিবাহিত পুরুষ এবং একজন মৃত মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। উনাকে বুঝিয়ে সুঝায়ে আমাকে ফেরত পাঠান।

দুই ভূত একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। ভূত সমাজে বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে প্রেম এলাউড কিনা বুঝা যাচ্ছে না।

বোতল শুকনা বললো
এটা আমাদের ইস্যু না। এটা রুমি আপার ইস্যু। আমাদের ইস্যু হইলো আপনার গায়ে ট্যাটু আঁকা। তবে সমস্যা হচ্ছে নামটা বড়।

পাইপ শুকনা রফিকের শরীরের মাপ নিয়ে মাথা নাড়তে থাকে।

লিখতে গেলে গলার নীচ থেকে পেটের নীচ পর্যন্ত চলে যাবে।

ভাই কি লিখবেন?

মোসাম্মৎ উম্মে কুলসুম হাফসা খাতুন অরফে রুমি
ভাই এটা কয়জনের নাম?
একজনের। রুমি আপার পুরা নাম। উনার দাদা রেখেছে।

এরা ট্যাটু আঁকার সরঞ্জাম বের করে।

ভাই সুই দিয়ে কি করবেন?
রফিকের দুই হাত পিছমোড়া করে বেঁধে ট্যাটুর কাজ শুরু হয়।
রফিক আহা, উহু করতে থাকে।
ভাই আপনারা বড় ভুল করছেন। রুমি আপার সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
তারা মনোযোগ দিয়ে নাম লিখছে।
ভাই ছোট করে লিখেন। আপনারা যেভাবে লিখছেন এটাযে কই গিয়ে শেষ হবে আল্লাহ মাবুদ জানে।
নাম লেখা শেষ। রফিকের অবস্থা খারাপ। সে ব্যথায় কোকাচ্ছে।

এরমধ্যে অতীব সুন্দরী একটা মেয়ের প্রবেশ। রফিকের দিকে তাকিয়ে তার চোখে কষ্টের ছাপ ফুটে উঠে।
আপনার কি খুব কষ্ট হয়েছে?
মেয়েটাকে দেখে মুগ্ধতায় রফিকের ব্যথা গায়েব।

না না। কবি বলে গিয়েছেন কুছ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা পরতা হ্যায়। কিছু পেতে হলে কিছু কষ্ট সহ্য করতে হয়। কবিগুরু বলেছেন অবশেষে আমি ইহাকে পাইলাম। যার জন্য শত জনম অপেক্ষা করেছি। আচ্ছা পরীর সঙ্গে মনুষ্যের সম্পর্ক মানে বিয়ে শাদির পদ্ধতি কি? জানা থাকলে ব্যাপারটা সহজ হতো।

দুঃখিত রফিক ভাই। আসলে ওরা এত বোকা মানে একজনকে ধরে নিয়ে আসতে গিয়ে আপনাকে ধরে নিয়ে এসেছে।
রফিক অধিক শোকে পাথর হয়ে তাকিয়ে আছে।

জী? আমাকে ধরে নিয়ে আসার কথা ছিলো না? এখন এই যে আমার গলা থেকে নীচ পর্যন্ত যে আপনার নাম লেখা তার কি হবে?
আন্তরিকভাবে দুঃখিত রফিক ভাই। এসিড দিয়ে ঘষে এটাকে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে।

রফিক দৌড়ে বের হয়ে আসে। তার থেমে থেমে পানির পিপাসা পাচ্ছে। সে দিব্য দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছে অন্ধকার ঘরে ডাক্তারদের মতো টর্চ নিয়ে নীলা তার ট্যাটু পরখ করছে। আর বলছে
বাহ মেয়েরাতো ভালবাসার মানুষের জন্য গর্ভবতী হয়। তার প্রমাণ নিয়ে ঘুরে। আর তুমি ট্যাটু-বতী হয়েছো। তোমার ভালবাসার মানুষের স্মৃতি নিয়ে ঘুরছো
মোসাম্মৎ উম্মে কুলসুম হাফসা খাতুন অরফে রুমি
এখন এটা তোমার এখান থেকে মোছার উপায় হচ্ছে এসিড দিয়ে ঘষা। ইনফ্যাক্ট তোমার পুরো শরীরটাই এসিড দিয়ে ঘষা উচিত।

রফিক দোয়া দুরুদ পড়ছে। বিপদ থেকে উদ্ধারের দোয়া মনে আসছে না।
প্রয়োজনের সময় কিছু মনে আসে না।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles