
আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়া দুর্নীতির রাজকুমার পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন দেশ ঘুরে এখন থিতু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, পর্তুগাল—কোথাও যেন শান্তি নেই! তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখনকার মতো অস্ট্রেলিয়ায়ই আবাস গেড়েছেন। রূপকথাকেও হার মানিয়ে দুর্নীতিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন একসময়ের অত্যন্ত পরাক্রমশালী এই পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর। প্রচার আছে, পোশাকি সৎ মানুষের আড়ালে তিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঘুষের রেট বদলাতেন।
বেনজীরসবার চোখে ধুলা দিয়ে ওই টাকায় ধন-সম্পদের বিপুল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনই তাঁর এই অবৈধ ধন-সম্পদের কাল হয়ে উঠেছিল। সারা দেশে শোরগোল পড়ে যাওয়া ওই প্রতিবেদনের এক ধাক্কায় ভেঙে পড়ে দুর্নীতিবাজ বেনজীরের সম্পদের পাহাড়। গোপালগঞ্জের সাভানা পার্ক, রূপগঞ্জের বাংলো, মাদারীপুরের ফসলি জমিসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য এক ঝটকায় ক্রোক করে সরকার।
এ জন্য করা হয়েছে তদারকি কমিটি। পরে বেনজীর সব ফেলে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন।
সরকারের হাতে যাওয়ার পর কী অবস্থায় আছে বেনজীরের এই বিপুল বাড়ি, ফ্ল্যাট, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা? মানুষের মধ্যে এখনো এই নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। দুর্নীতির খবর চাউর হওয়ার পর বেনজীরকে গোপনে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।
তখন খবর হয়েছিল যে সরকারের আশীর্বাদে থাকার পরও তাঁকে দেশত্যাগ করতে হওয়ায় তিনি বিক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে পরে আকস্মিক ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠরা যখন হত্যা, খুন, দুর্নীতি, লুটপাটের দায়ে একে একে জেল-জরিমানার মুখে পড়ে, তখন গুঞ্জন ওঠে, আগেই পালিয়ে গিয়ে বেঁচে গেছেন বেনজীর। তা না হলে এখন তাঁকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার রোষানলে পড়তে হতো।
বেনজীরের বর্তমান অবস্থান ও সম্পদের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ করেছে কালের কণ্ঠ। জানা যায়, রাজধানীর গুলশানের সেই বিলাসবহুল চার ফ্ল্যাট তালাবদ্ধ রয়েছে।
সেখানে কেউ থাকে না। একবার এসে সরকারি লোকজন দেখে গেছেন।
এদিকে বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের দুই মেয়ের মোট ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫২ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদের হদিস পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন শুধু কমিশনের অনুমোদন পেলেই মামলাটি করা হবে। তবে গত মাসে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন বেনজীর আহমেদ। ফলে পলাতক অবস্থানে থেকে তাঁর সম্পদ বিবরণী দাখিল গ্রহণ করা হবে কি না তা নিয়ে আইনি মতামতে আটকে আছে অবৈধ সম্পদের মামলা দায়ের কার্যক্রম। আর কমিশন বেনজীরের সম্পদ বিবরণী গ্রহণ করলে তা যাচাই-বাছাই করতে প্রয়োজনীয় সময় প্রয়োজন হবে। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বেনজীর : গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পরপরই স্ত্রীর চিকিৎসার নামে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমায় বেনজীর এবং তাঁর পরিবার। সেখান থেকে তাঁরা ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের অধীনে বেনজীরের কেনা মালয়েশিয়ার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরপর মালয়েশিয়া থেকে সপরিবারে চলে যান দুবাই। সেখানে পরিবারের সদস্যদের রেখে তিনি পর্তুগালে পাড়ি জমান। সর্বশেষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে তিনি সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনিতে অবস্থান করছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিডনিতে তিনি একটি ঘরোয়া মিটিং করেছেন। সেখানে সেই দেশের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন—এমন কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেই আলোচনার একটি ছবি কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে। এ ছাড়া ওই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি জনগণ অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেনজীরের পালিয়ে আসার বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে বলে জানা গেছে।