
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের পর সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তৎকালীন স্বাধীনতা আন্দোলনের মুল সংগঠক ও মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বের ছাত্র যুবকদেরকে দেশ গঠন ও সরকারের অংশ না করা। এই ভুলটা ড. ইউনুস করেন নি। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু বৈষম্যের বিরুদ্ধেই ছিল না, ছিল গনতন্ত্র, মুক্তি সাম্য ও স্বাধীনতারও।
কিন্তু সেই চেতনাকে কুক্ষিগত করে একটি দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে শুধুই তাদের পারিবারিক রাজত্ব কায়েমের লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে একশ্রেণীর মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বললেই আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের দিনগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামনে নিয়ে আসার প্রবণতা দেখা যায়।
এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় ছিল একটা পর্যায় পর্যন্ত। কিন্তু এটা যেন লিমিট ক্রস করে না যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন নয়। ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্ত, হাজারও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়েই শুধু আমাদের স্বাধীনতা নয়, দীর্ঘ ২৩ বছরের পাকিস্তানি শোষকদের বন্চনা, লান্চনা ও নিগ্রহের বিষয়টিও রয়েছে।
এত ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভুখন্ড বদলানোর বা খামচে ধরার যে কোন অপপ্রয়াস আরো একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবতারণা করবে যা মুলত সদ্য পতিত স্বৈরশাসকদের হাতকেই শক্তিশালী করবে, সংগঠিত হবার সুযোগ দিবে এমনকি ক্ষমতায় ফিরে এসে পুনরায় ফ্যাসিবাদ কায়েমের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে।
অতএব আগুন নিয়ে ছিনিমিনি না খেলে গণ-অভ্যুত্থানে নিহত হাজারো শহীদদের স্বপ্ন বৈষম্যহীন গনতান্ত্রিক, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসনের বাংলাদেশ কায়েমের দিকে সংশ্লিষ্ট সকলে মনযোগ দিলে সঠিক কাজটি করা হবে। লিমিট ক্রস করার ফল যেমন বিগত ফ্যাসিস্টরা পেয়েছে, ভবিষ্যতেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে যদি কেউ নুতন করে লিমিট ক্রস করার চেষ্টা করে। প্রকৃতি বড়ই কঠিন ও নিষ্ঠুর। প্রকৃতির আচরণ সকলের জন্যেই সমান হতে বাধ্য কথাটি যেন আমরা ভুলে না যাই।
স্কারবোরো, কানাডা