9 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

নো-ফ্রিলসের সাতকাহন

নো-ফ্রিলসের সাতকাহন
জাভেদ ইকবাল

কর্ম শেষে বাসায় ফিরবার আগে “নো ফ্রিলস” দোকানে থামলাম। প্রবেশের মুখে বাইরে স্তুপ করে রাখা ‘পিট মস’ সারের বস্তার দামসহ ছবি তুলে নিলাম যাতে কিনতে সুবিধা হয়। তা না হলে পেইমেন্ট দেবার সময় ক্যাশিয়ার খাতা খুলে খুঁজতে থাকে, সময় নষ্ট হয়। ভেতরে ঢুকেই ঠিক ডান সাইডে রাখা সাতাত্তর সেন্টস করে একটা গোলগাল হেড লেটুশ তুলে নেই। বেছে নিতে হলো, সস্তার তিন অবস্থা। গত সপ্তাহেও তিন ডলার দিয়ে কিনেছিলাম। বাচ্চাদের স্কুল খুলে গেছে। প্রতিদিন টিফিনের হট ডগ কিংবা বার্গারের সাথে লেটুশ মাস্ট।

এক কেজির কাঁচা আস্ত রশুনের প্যাকেট নিলাম। অনেক ছাড়, মাত্র চার ডলার। আগে কিনেছি সাত ডলার করে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে মেসেন্জার খুলে আবার লিস্ট দেখি। দোকানে ঢুকলে আমার মাথা আউলিয়ে যায়। আচ্ছা, আমার কি ডিমেনশিয়ার লক্ষণ শুরু হয়েছে? দ্রুত ভুলে যাই কেন?

- Advertisement -

ফিফটি নাইন সেন্টস পাউন্ড করে তিন পাউন্ডের মতো কলা নিয়ে গ্রোসারী স্ক্যান করতে করতে এগুতে থাকি। কিছু তিন ডলারের বেগল ফিফটি পার্সেন্ট ছাড়ে দিচ্ছে। এক্সপায়ারি ডেট চেক করে দেখি আর একদিন বাকি। এটা কিনলে এক সপ্তাহ টিকতে পারে, আবার কালকেই ছাতা পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে; বাদ। তাই চকচকে দেখে এক প্যাকেট নিলাম। সকালে সময় না থাকলে টোস্ট করে ভেতরে এক গাদা ক্রিম চিজ দিয়ে খেতে অসাধারণ। এরচাইতে সহজ, কুইক নাস্তা আর হয় না। অবশ্য এর ভেতর বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে ডিম ভাজা রেখে খেলেও তুখোড় লাগে।
.
বাচ্চাদের স্কুলে হটডগ বান লাগে অনেক; রেগুলার দামেই নিলাম দুই প্যাকেট। আর আট লিটার দুধ। দুধের দাম দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। এখন চার লিটারের বস্তা ছয় ডলার আট সেন্টস করে। নাক খপ্তা দিয়েছি, ছাড়ের দুধ জীবনেও নিব না; কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়, ফেলে দিতে হয়। আরও লস। সব সময় না জিতলেও চলে। এমনিতেই প্রায় দশ ডলার ছাড়ে জিনিস পেয়েছি।
.
পেছন থেকে এক বৃদ্ধা ডাকলো- এক্সকিউজ মি। আচ্ছা, কোকোনাট অয়েল কোথায় আছে জানো?
– আমাকে ফলো করো।- বললাম।
তিনি আমাকে ফলো করতে লাগলেন। আমি আইলে নিয়ে গিয়ে বললাম, এই যে!
– ওহ সরি, আমি ভেবেছিলাম তুমি নো ফ্রিলস এর কর্মী
– তাহলে তো ভালোই হতো! ব্যাপার না..
– আমি সত্যি খুব দুঃখিত
– তোমাকে সরি হতে হবে না। আমি খুশি হয়েছি তোমাকে হেল্প করতে পেরে।
.
আসলে আমার অফিসের গাড় খয়েরী জামা পরা দেখে উনি ভেবেছিলেন আমি কাজ করি এখানে। আগেও এরকম হয়েছে। আমি নিজেও অতীতে কয়েকজনকে কর্মী ভেবে হেল্প চেয়েছিলাম।
.
বিকাল পাঁচটা বেজে গেছে।
দখিনার ফোন- আব্বু তোমার লেইট হচ্ছে কেন?
– একটু নো ফ্রিলস এ ঢুকছি..
– একটু তাড়াতাড়ি আসবা প্লিজ?
– ওকে
– আই লাভ ইউ আব্বু!
– লাভ ইউ ঠু!
.
মেয়েটার গলা শুনে বুঝলাম সে এখন ঘুমাতে চায়। খুব টায়ার্ড। তাকে স্কুল থেকে ফিরে আধা ঘন্টা মতো ঘুমাতে হয়; তবে বাবার কোলে। কি মায়াবীভাবে কাছে এসে টলতে টলতে বলে, “বাবা আমাকে একটু ঘুম পাড়াবা?”
গ্রেড সেভেনে পরা কিশোরীর এ ধরনের কথা একজন বাবার জন্য বড় পাওয়া! সে কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার কোলের মধ্যে নাক ডাকা শুরু করে। তার মা তখন খুব আবেগে আমাদের দিকে চেয়ে থাকে..।
.
নারকেলের দুধ মাত্র চুয়ান্ন সেন্টস করে? বলে কি!
আমি ক্যানটা উল্টো করে তলার এক্সপায়ারী ডেট খুঁজে দেখি আর দুই মাস আছে, নভেম্বরে শেষ। বাসায় চিংড়ি আছে, গিন্নি ঠিকই রান্না করে ফেলবে। একটা নিলাম।
.
চার ডলার সাতাত্তর সেন্টস করে এক পাউন্ডের মাখন। বাহ! যেগুলোর রেগুলার প্রাইস সাত টাকা। দুইটা নিলাম; একটা লবণযুক্ত, আরেকটা লবন ছাড়া। মাখন খুব লাগে, র‍্যপ বানানোর সময় রুটিটা মাখনে ভেজে নিলে বেশ স্বাদের হয়। বিত্ত’র মুখে যে স্বাদ রে বাবা! তবে এদেশের মাখনের স্বাদ কম। মাখন হচ্ছে বাংলাদেশের; মিল্কভিটা কিংবা আড়ং এর মাখনের স্বাদ সেই রকম!
.
সকালে রুটির সাথে খাওয়ার জন্য নিলাম দুই পাউন্ড মতো বেগুন। প্রতি পাউন্ড দুই ডলার। সাথে তাইওয়ানের পাতাকপি এক ডলার করে পাউন্ড। বেশ ভালো কুয়ালিটির। ডিম নেয়া দরকার, তবে এখান থেকে না। ফুড ব্যসিকস দোকানে ছাড়ে দিচ্ছে।
.
এক ডলার সাতাশ সেন্টস করে ক্যাপসিকাম দিচ্ছে। পুরা পাংখা! যেগুলো সচরাচর তিন ডলার করে। লাল, হলুদ, কমলা; তিন রঙের তিনটা নিলাম। কি রঙের বাহার! মাশরুম এর সাথে ক্যাপ্সিকাম জমে বেশ।
.
ক্যশ কাউন্টারে দাঁড়ালাম।
আজও ভাগ্য খারাপ। সামনের লাইনে এক ভদ্রমহিলার কার্ড কাজ করছে না। ব্যাগ খুলে উনি ধীরে সুস্থে একটা একটা করে কার্ড ঢুকাচ্ছে আর পাসওয়ার্ড দিচ্ছেন। মিনিট পাঁচেক পরে সফল হলেন। আমার বিল বাহান্ন ডলার। পিট মসের বস্তাসহ। ঐ ভারী সারের বস্তা বাইরে থেকে তুলে নিতে হবে
গাড়িতে সদাই ভরে টান দিলাম, একটু জোড়েই। যদিও গাড়ির ফুয়েল একদম শেষ পর্যায়ে, কাল কোনোমতে হয়তো অফিস যাওয়া যাবে। মেয়েটা ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করছে। আর কোথাও যাবো না।
ড্যাডিস গার্ল।
.
রাস্তায় গিন্নীর ফোন- তুমি কি এখনও নো ফ্রিলস এ আছো? গরম মসলা লাগতো..
পিট মসের বস্তা যে তুলি নি?
ঠিক ডিমেনশিয়ার লক্ষণ!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles