
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আওয়ামী লীগের। ওইদিনই পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে গত দেড় মাস ধরে ভারতেই অবস্থান করছেন তিনি।
আওয়ামী সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে বেশ কয়েকবারই ভারত নিশ্চিত করেছে যে তাদের আশ্রয়েই আছেন শেখ হাসিনা। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে সেই দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি এমনটাও জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
তবে বরাবরই শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত কোন তথ্য দেয়নি দেশটি। দিল্লির কোথায় এবং কিভাবে রয়েছেন শেখ হাসিনা সে বিষয়ে কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটি। আর তাই সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন কোথায় আছেন তিনি?
তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, দিল্লিতে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সাথেই আছেন শেখ হাসিনা। এমনকি দিল্লির পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরতে দেখা গেছে তাকে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে গণমাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, গত মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে নয়াদিল্লির নৈশভোজের অনুষ্ঠানগুলোতে যে ইস্যুটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে তা হলো: শেখ হাসিনা এখন কোথায়?
বিভিন্ন মাত্রার বিশ্বাসযোগ্যতার সাথে ভারতের আড্ডাবাজ ক্লাসের সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতীয় সরকারের একটি সেফ হাউসে রয়েছেন। তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সাথে থাকছেন তিনি। সায়মা ওয়াজেদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিল্লিভিত্তিক পদে নিয়োগ পান।
তাঁরা আরও দাবি করেছেন যে, শেখ হাসিনাকে তার দলবলের সাথে দিল্লির অন্যতম সেরা পার্ক লোদি গার্ডেনে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনার শীর্ষ বিদেশী সমর্থক ছিল ভারতের মোদি সরকার। হাসিনার আশ্রয়ের কথা স্বীকার করলেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান বা অন্যান্য বিষয়ে নীরবতা বজায় রেখেছে দেশটি। এছাড়া দিল্লির দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো ক্ষমতাচ্যুত-পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎকার পাবে এমন ধারণা করাও বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে এর পেছনেও কয়েকটি কারণ রয়েছে বলছে ফিনান্সিয়াল টাইমস। কারণগুলো হল, গত জুলাই-আগস্টে আন্দোলন-বিক্ষোভের সময় শত শত মানুষের হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা এব তাকে দায়ী করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে — যা ২০১৩ সালে হাসিনার নিজের সরকারের সময়েই স্বাক্ষরিত — যেটি তত্ত্বগতভাবে হাসিনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা যেতে পারে যদি বাংলাদেশের নতুন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে হাসিনার অবস্থানের সংবেদনশীলতার অর্থ হচ্ছে, অতি সতর্কতার কোনও আবরণ আপাতত এই বিষয়টিকে ঘিরে থাকতে পারে এবং সেটিও আবার নয়াদিল্লির নকশায়।