
বন্ধুকে ফোন দিলাম- দোস্ত একটা কথা ছিল
– বল
– কিছুদিন ধরে একটা আইডিয়া মাথায় চক্কর খাচ্ছে। আমরা যারা বহু আগে বিয়ে করছি, তাদেরও তো জীবনে শখ আহ্লাদ আছে..
– মতলব কী তোর!
– নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কতো কি খায়! বিরাট রুইমাছের মাথা, মোরগের রান..
– তো আবার বিয়ে করবি?
– ধ্যাত! দেশ থেকে দেশি মোরগ-মুরগি আনবো
– এই বিজনেস না আগে করলি? কাস্টমারের সামনে দেশি গরু জবাই করে টাটকা মাংস বেচলি, দেশ থেকে “মশলা বাটা স্কিল্ড ক্যাটাগরী”র বুয়া আনলি, কসাই আনলি, বাবুর্চি আনলি..
– গরু হ্যান্ডেলিং করা কঠিন; এক গুঁতায় জীবন শেষ।। এবার আনবো মুরগি। জবাই করে টাটকা গরম মাংস বেচবো। সিটির কাছ থেকে পারমিশন নিবো
– প্ল্যানটা কী তোর?
– ফার্ম দিবো। দেশি মোরগ, পাহাড়ি বনমোরগ, পাকিস্তানী, কোয়েল, তিতির সব থাকবে। টরন্টোর ড্যানফোর্থে দোকান দিবো। অটোয়া থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে আসবো। কাস্টোমারের সামনে মুরগি ছিলে, কেটে, ধুয়ে দিবো। মোরগের রেডিমেড মশলাও বেচবো। বাসায় নিয়ে জাস্ট চুলায় দিবে। এদেশের মানুষ গিলা কলিজা, মাথা পায় না। তখন থেকে পারবে। “পোল্ট্রি মিট প্রিপারেশন” স্কিল্ড ক্যাটাগরীতে লোক আনবো, রান্নার বুয়া আনবো
– জাস্টিন ট্রুডো কে দিয়ে দোকান উদ্বোধন করবি, তাই তো?
– ইয়েস! আর দোস্ত, আসল বিজনেস অন্য জায়গায়!
– মানে? এতক্ষন কী বললি তাইলে!
– পাশেই থাকবে ভাতের হোটেল। মোরগ রান্না সেল করবো কম দামে। হোটেলের নাম হবে “জামাই আদর হোটেল”। নতুন আলুর ঝোলে এলাচ আর দারুচিনির গন্ধে মৌ মৌ করবে। সাথে থাকবে গলা, গীলা, কলিজা, বুকের হাড়, মাথা, চামড়া সব! দেশি ইরি ধানের চালও আমদানি করবো। মাড় গালা ভাত, লাল শাক, ডুমুর ভাজি, কাগজী লেবু, দেশি পটল ভাজি দিয়ে সার্ভ করবো
– রিপন থামবি? আমার মুখে এখনই পানি এসে যাচ্ছে রে!
– আর দোস্ত, তাদের বৌদেরও নামায়ে দিবো কামে। লাল শাড়ি পরে, পায়ে আলতা দিয়ে, নাকে নোলক পরে, ঘোমটা দিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে খাবার সার্ভ করবে। কিছু শাশুড়ী গোছের মুরব্বিও আনবো। তাদের কাজ হবে টেবিলে টেবিলে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বলা- বাবারা তো কিছুই খাচ্ছো না, তুলে দেই?
– চলবে রিপন! তুই বিজনেসে নাম, সব লজিস্টিক সাপোর্ট আমার!
– হোটেলের স্ট্রাকচার হবে বিরাট এক কুঁড়েঘরের মতো!
– পারলে টরন্টো আসিস তো? প্ল্যান করা যাবে।
ওদিকে বন্ধু হাবিবের ফোন নরওয়ে থেকে- ও কাহা, কী করো?
– বিজনেস প্ল্যান করতেছি
– কিসির?
– মুরগির। দেশি মুরগি আনবো দেশ থেকে। টরন্টো তে দোকান দিবো। জবাই করে গরম গরম বেচবো
– কাহা, ওতা কইরো না
– কেন?
– তোর নাম হয়য়া যাবি মুরগি জাভেদ। এমনিতেই তোমারে সবাই খাদক কয়া ডাকে। তোমারেও ভয়ে কেউ বিয়াই বানাবি না! মাইয়া বড় হচ্ছে, বিয়ি দিবা ক্যাম্বা? প্রেস্টিজ বইলি কিচ্ছু থাকবি নানে.. আর টরন্টো তে কিডা দেখবি তোমার ব্যবসা? চিশতী?
– হু
– তাইলে আর হয়েছ.. ওই শালা কিচ্ছু করবি নানে। তুমি লোক চিনলা না!
– বলিস কি রে!
– আর একুন বিজনিস করাও লস
– কেন?
– তিতীয় মহাযুদ্দু বাইধি গেলো বইলি। ইজরাইল আগে বোমা ফেলাবি লেবাননের উপর। হেজবুল্লাহ মাইরে সাফ কইরি তাপর ইরানেও ফেলাবি। সব মাইরি গা প্যালেস্টাইনীদের ঠেইলি ফাঁকা ইরানে পাঠাবি। পুরা প্যালেস্টাইন হবি ইজরাইল!
– কস কি!
– অম্বা না হোলি আমার কান কাইটি কুত্তার গলায় ঝুলাবা। আর শুনো কাহা, তুমি মস্ত ভুল তো আগেই কইরি রাকিছো!
– কী ভুল?
– রাজধানীতে কেউ থাহে? একুন যদি রাশিয়া আমেরিকায় বোম মারে, তকুন কুন শহরে আগি ফেলবি কও তো?
– ওয়াশিংটন এ?
– এইতো মামা, সাইজে আইছো! তুমি অটোয়া ছাইড়ি পালাও। সময় থাকতি থাকতি। তা না হলি তোমার টাকের যে কয়টা চুল বাকি আছ, সেইগুলাও ব্রিটিশ কলম্বিয়ার আগুনের মতো পুইড়ি ছাই হবিন কলাম!
– এ বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবো?
– বাংলাদেশ যাও। জীবন বাঁচাতি চালি দ্যাশে যাও। কানাডায় বোমা পড়লি সবার আগে মরবা তুমি
– বিজনেস বাদ?
– হারাম! এখন বেশি টাকা ইনভেস্ট কইরি যদি বোমা খাও তাইলে পুরা লস! আর যদি তুমাক যুদ্দে পাটায় গো কাহা.. না খায়া মরবা! খিদি লাগলি টুনা মাছের ক্যান আর শুকনা পাউরুটি আর চুইংগাম চিবাতি দিবিন খাতি। ওতা খাইয়ি তিনদিনও বাঁচবা না..
– ও আল্লাহ! দেশে ফিরে কী করবো বুড়া বয়সে? না খেয়ে মরবো তো!
– ক্যা? মুরগি পালবা?
অটোয়া, কানাডা