ফরিদপুরের নগরকান্দায় যৌন নির্যাতনের শিকার ১২ বছর বয়সী কিশোরীর জবানবন্দি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কথিত এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। এতে লোকলজ্জায় নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে নির্যাতিত ওই কিশোরীর পরিবার। কথিত ওই সাংবাদিকের নাম নজরুল। তিনি নিজেকে ‘সত্য নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম’ নামে একটি ভুঁইফোড় অনলাইনের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার পর বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ইউএনওর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গত সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ওই কিশোরী তার বোনের বাড়ি থেকে নিজের বাড়ি ফেরার জন্য নগরকান্দার তালমা মোড় থেকে ইজিবাইকে ওঠে। তবে ইজিবাইকচালক ইমান আলী (২৬) ও তার বন্ধু ফজলু শেখ (২৫) তাকে গন্তব্যে না নিয়ে স্থানীয় আটাইল গ্রামের ফাঁকা মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। তবে মেয়েটির চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে তাকে উদ্ধার করে। এ সময় অভিযুক্ত দুই বখাটে যুবক পালিয়ে যায়।
অভিযুক্ত ইমান আলী নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের আটাইল গ্রামের সাদেক হোসেনের ছেলে এবং ফজলু শেখ একই গ্রামের নাসির শেখের ছেলে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর নজরুল নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক যৌন নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর জবানবন্দি ভিডিও করেন।
পরে তিনি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন, যা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি ভাইরাল হলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে লোকলজ্জায় মঙ্গলবার সকালে ওই কিশোরীর পরিবার নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অভিযুক্ত ইমান আলীর স্ত্রী বলেন, ঘটনার পর থেকে আমার স্বামী পলাতক।
তার ফোন নম্বরও বন্ধ।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে কথিত সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণচেষ্টার শিকার ওই কিশোরীর ভিডিও জবানবন্দি অন্য একজন নিয়েছিলেন। পরে তিনি আমাকে ফেসবুকে ছাড়তে বলেন। আমি না বুঝে ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করি। পরে পুলিশের এক কর্মকর্তা ও ইউএনও আমাকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে ফোন করেছিলেন। আমি তাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি এবং ভিডিওটি ডিলিট করে দিয়েছি।
ফরিদপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান শাকিল বলেন, ঘটনাটি তদন্তে আজকে সকালে ওই কিশোরীর বাড়িতে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য। ভিডিও প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা ছোট মেয়ে ভিকটিমের সরাসরি চেহারাসহ ভিডিও বর্ণনা প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এতে ভিকটিমের পরিবার সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিষয়টি আমি জানতে পেরে ওই ব্যক্তিকে ভিডিওটি ডিলিট করে দিতে বলি। পরে তিনি ডিলিট করে দেন।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাফী বিন কবির বলেন, ভিডিও প্রকাশের পর মেয়েটিসহ তার পরিবার বাড়ি ছেড়ে ঢাকা চলে গেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এমন ভিডিও প্রকাশ করা মোটেও ঠিক হয়নি। তবে ওই ব্যক্তি ভিডিও প্রকাশ করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।