9.7 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

দেহ সুস্থ না থাকলে কি সত্যিই মন ভালো থাকে না?

দেহ সুস্থ না থাকলে কি সত্যিই মন ভালো থাকে না?
সংগৃহীত ছবি

শরীর এবং মনের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। দেহ যদি অসুস্থ হয়, মন স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব অনুভব করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেহ সুস্থ না থাকলে কি সত্যিই মন ভালো থাকে না? আজকাল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একমত যে দেহের সুস্থতা ও মনের সুস্থতার মধ্যে এমন এক সম্পর্ক রয়েছে, যা উপেক্ষা করা যায় না।

দেহ এবং মনের সম্পর্ক
মেডিক্যাল এবং মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, দেহ এবং মন আলাদা কোনো সত্তা নয়।

- Advertisement -

যখন আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন মনের ওপরও এর প্রভাব পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, শারীরিক অসুস্থতা যেমন ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর, বা দীর্ঘস্থায়ী কোনো ব্যাধি আমাদের মেজাজ নষ্ট করে দিতে পারে, ক্লান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে মনের কোনো অস্থিরতা, যেমন বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ, শারীরিক অসুস্থতা যেমন মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা বা হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণ হতে পারে।
কেন দেহ সুস্থ না থাকলে মন ভালো থাকে না?
ফিজিক্যাল স্ট্রেস ও মানসিক চাপ : শরীর যখন অসুস্থ থাকে, তখন এটি অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয় নিজেকে সুস্থ করার জন্য।

এই অতিরিক্ত কাজ শরীরকে স্ট্রেসের মধ্যে ফেলে দেয়। ফিজিক্যাল স্ট্রেস মনকেও ক্লান্ত করে তোলে, যার ফলে মানুষ উদ্বেগ বা হতাশায় ভুগতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা : শরীর সুস্থ না থাকলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, শরীরের ব্যথা বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ‘কোর্টিসল’ নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে।

এটি মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ফলে মেজাজ খারাপ হতে শুরু করে এবং মন ভালো থাকে না।

ঘুমের অভাব : শারীরিক অসুস্থতা প্রায়ই ঘুমের সমস্যার সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ঠিকমতো কাজ করতে পারে না এবং এর ফলে মনও ভালো থাকে না। এটি মানুষকে ক্লান্ত, বিরক্ত বা হতাশ করে তুলতে পারে।

শারীরিক সীমাবদ্ধতা এবং হতাশা : যখন দেহ অসুস্থ থাকে, তখন মানুষ সাধারণত শারীরিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা অনুভব করে।

চলাফেরা, কাজ করা বা দৈনন্দিন জীবনযাপন সহজে করা যায় না, যা হতাশা ও মানসিক ক্লান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মন ভালো রাখতে দেহ সুস্থ রাখা কেন জরুরি?
শরীর সুস্থ থাকলে মনও প্রায়ই সুস্থ থাকে। কিছু উপায়ে এটি সত্য :

অক্সিজেন এবং সেরোটোনিনের প্রভাব : শরীর সুস্থ থাকলে শরীরের কার্যক্রম সচল থাকে। এ ক্ষেত্রে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সঞ্চালন হয় এবং ‘সেরোটোনিন’ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মনের স্থিতিশীলতা এবং সুখের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।

মানসিক শক্তি বৃদ্ধি : শরীর সুস্থ থাকলে মানুষ শারীরিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে যেমন ব্যায়াম, হাঁটা, বা যোগব্যায়াম। এগুলোর মাধ্যমে মন চাঙ্গা হয়, উদ্বেগ কমে, এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি : সুস্থ শরীর মানে ভালোভাবে কাজ করা মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো থাকলে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং মানসিক চাপ কম অনুভব করে।

হাসিখুশি জীবনযাপন : দেহ সুস্থ থাকলে মানুষ হাসিখুশি জীবন যাপন করতে পারে। ফলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং মন প্রফুল্ল থাকে।

মনের সুস্থতাও গুরুত্বপূর্ণ
যদিও দেহ সুস্থ না থাকলে মন ভালো থাকে না, তার উল্টোটাও সত্য। মনের অসুস্থতাও দেহের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক চাপ বা হতাশা শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই শরীর ও মনের মধ্যে সুষম ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই জরুরি।

শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, দেহ ও মন একে অন্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। দেহ সুস্থ থাকলে মনও ভালো থাকে, আর মন ভালো থাকলে দেহও ভালো থাকে। তাই দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা এবং মানসিক প্রশান্তি রক্ষা করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা চর্চা করা উচিত।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles