5.6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

প্রথম বিড়ম্বনা

প্রথম বিড়ম্বনা
প্রথম বিড়ম্বনা

বাঙালিদের ‘প্রথম’ শব্দটার ওপর প্রচন্ড আসক্তি। তাদের স্কুলে পরীক্ষায় হতে হয় প্রথম। বাসর রাতে একে অপর কে জিজ্ঞেশ করবে- “হ্যাঁ গো, তুমিই কি আমার প্রথম গো?”। দুজনই কোলকাতা স্টাইলে উত্তর দেবে- “তবে আর বলচি কী!”..
তারপর তারা জীবনে প্রথম একে অপরকে হাগ করবে..

যাহ, ওসব থাক..!

- Advertisement -

তারপর বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ডাইনিং এ প্রথম ব্যাচে বসা চাইই চাই; তা না হলে সিনার মাংসগ খুঁজে পাওয়া যায় না, ডালে গিলা কলিজা হারিয়ে যায়।

সবচাইতে বেশি ভালবাসাও প্রথম সন্তানের উপর। বড়ো মুরগির পিসটা দেবে প্রথম সন্তানের পাতে। কোনো মা আবার দরজা বন্ধ করে, প্রবেশ নিষেধ নোটিশ দিয়ে একা একা খাওয়াবে বড় সন্তান কে।

ভুমিকম্প হলে কে আগে ঝাঁকুনি টের পাইছে, সেটা নিয়ে চলবে বড়াই। মেলায় মামার সাথে দেখা হলে পরে মা জিজ্ঞেস করবে- কে আগে দেখছে? তুই না ও? আর কমলাপুর রেইল ষ্টেশনে ঈদের টিকিট কিনতে সবার আগে দাঁড়ানো চাই..

বাজারে গিয়ে দেখবেন এক কোনায় মুখ ভাঁড় করে মাছআলা বসা, সামনে একগাদা সুস্বাদু ভেদা/মেনি মাছ নিয়ে। আপনি দরাদরি করলে সে দিয়ে বলল- আপনি আমার প্রথম কাস্টমার, তাই লসে দিয়ে দিলাম। আরও এক কেজি দেই?
আপনি নাচতে নাচতে অর্ধেক দামে দুই কেজি ভেদা মাছ নিয়ে বাসায় আসার পর কাজের বেটি রিজাইন দেবে, বউ পালাবে বাপের বাড়ি। পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি পচা গন্ধে সন্দীহান হয়ে পুলিশে খবর দিচ্ছে…

ঢাকা যাবার সময় আব্বা সবসময় বাসের টিকেট কেটে দিতো প্রথম সারির প্রথমটা। মালিক সমিতির সাথে ছিল সুসম্পর্ক। কিন্তু ঐ টিকিট ছিল আমার কাছে আতংকের। বিদ্রোহ করার সাহস পেতাম না। আব্বা বলতো- ভালো তো, দেখতে দেখতে যাবা..। আমি পরে এসে লুকিয়ে টিকিট চেঞ্জ করে মাঝের সারিতে নিতাম। না পেলে শেষের সারিতে মাথায় বাড়ি খেতে খেতে যেতাম। তবুও ঢের ভালো। দরকার নাই ভাই রিস্ক নিয়ে, মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে সবার আগে পটল তুলবো আমি।
বাসের সামনে বামের সিংগেল প্রথম সিট সবচাইতে বাজে। মুরুব্বিরা বাসে উঠার সময় হাটুঁ ধরে উঠতো, লোকজন উঠতো পায়ে পাড়া দিয়ে, সুইটিরা উঠতো ঘষা দিতে দিতে উঠে। কোনো কোনো জলহস্তি উঠতে গিয়ে কোলের উপর ঢপাস করে বসে পড়তো সযত্নে হাতে ধরা খিলিপান…
আর রাজ্যের ধুলা ভাইরে ভাই…

ছোটকালে বাংলা সিনেমায় দেখতাম সোহেল নামের নায়ক [জসিম] বই বগলদাবা করে বাসায় এসে তার মা [আনোয়ারা] এর পা ধরে কদমবুচি করে পেট ধরে তুলে উঁচু করে শুন্যে ঘুরাতো। পা দোলাতে দোলাতে মা “ছাড় দুষ্টু ছেলে কোথাকার” বলে বকা দিতো। দুষ্টুৃমি শেষ হলে সোহেল বলতো- মা আমি বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি! বিধবা মা গর্বে ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে চোখের পানি ফেলে বলতো- আজ যদি তোর বাবা বেঁচে থাকতো!..

‘প্রথম’ এর প্রতি আমার পার্মানেন্ট ভয়ের কারন হলো- কলেজে থাকতে দোস্তরা বিনা দাওয়াতে না বলে লেডিস ক্লাসমেটের বাসায় গিয়ে প্রথমে আমাকেই ঠেলতো- জাভেদ তুই আগে যা!..

আর পাঠকগণ, ভুলেও কাউকে প্রথমে I LOVE YOU বলতে যাবেন না। সত্যি সত্যি বিয়ে হয়ে গেলে আজীবন পস্তাতে হবে…

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles