8.1 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

ভিডিওকলে নববধূ ও প্রবাসী প্রেমিকের আত্মহত্যা, জানালেন শেষ ইচ্ছা

ভিডিওকলে নববধূ ও প্রবাসী প্রেমিকের আত্মহত্যা, জানালেন শেষ ইচ্ছা
প্রেমিক প্রেমিকার আত্মহত্যা

বিয়ের ১২ দিন পর কুমিল্লার লালমাইয়ে স্বামীর বাড়িতে আত্মহত্যা করেছেন কিশোরী নববধূ। অপরদিকে একই সময় ওই কিশোরী নববধূকে ভিডিওকলে রেখে আত্মহত্যা করেছেন প্রবাসী প্রেমিক। শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার বেতুয়ায় এই ঘটনা ঘটে। স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ ও চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। চিরকুটে একসঙ্গে দাফনের আকুতি জানানো হয়।

নিহত গৃহবধূ খাদিজা আক্তার ঊর্মি (১৬) ভর্তি পার্শ্ববর্তী সদর দক্ষিণ থানাধীন মাটিয়ারা গ্রামের জামাল হোসেনের মেয়ে। সে চৌয়ারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ১৪ অক্টোবর লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বেতুয়া (কৃষ্ণপুর) গ্রামের রংমিস্ত্রি আরিফুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এদিকে নিহত ওমানপ্রবাসী প্রেমিক সাফায়েত হোসেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড়কানন ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।

- Advertisement -

ঊর্মি চিরকুটে লিখেছে, চাইছিলাম দুজনে একসঙ্গে বেঁচে থাকতে। বাঁচতে দিল না। এটা সত্যি, ও আমার প্রথম সাথি। ওরে আমি বিয়ে করছি। কিন্তু ওর জায়গায় আমি অন্য কাউরে দিতে পারি নাই, পারবও না। তোমরা সুখে থেকো। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও বেঁচে থাকলেও তোমরা ওকে খুন করতে এবং ওর ফ্যামিলিকে জেলের ভাত খাওয়াইতে। তাই নিজেও দুনিয়া ছাড়লাম। ওরে আমার সঙ্গে নিয়ে গেলাম। আপনাদের কাছে একটা শেষ ইচ্ছা থাকবে। বাবা-মা ও ভাই-বোনের কাছে একটা আবদার, দুনিয়াতে যেহেতু একসঙ্গে থাকতে দেও নাই, আমাদের দাফনটা যেন একসঙ্গে হয়। এক দিন আগে-পরে হলেও একই কবরস্থানে যেন দাফন করে। সে চাওয়াটা যেন পূরণ করেন আপনারা।

এদিকে প্রবাসী সাফায়াত মৃত্যুর আগে চিরকুটে লিখেছেন, শেষ ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব আপনাদের। আমার মৃত্যুর কারণ একমাত্র ওর ফ্যামিলি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড করা আছে। সব কিছু ভিডিও করা আছে। আমার মৃত্যুর জন্য কে কে দায়ী সব কিছু আমার মোবাইলে রেকর্ড করা আছে আর ভিডিও করা আছে। আমার মোবাইল তার প্রমাণ। আমার মোবাইল চেক করলে সব পাবেন। রেকর্ড অপশনে আর গ্যালারিতে সব আছে। গ্যালারিতে আমার আটটা ভিডিও আছে। সবগুলো দেখবেন। লক খুলে রেকর্ড অপশনে ঢুকবেন, ইমোতে দুইটা আর বাকিগুলো গ্যালারিতে পাবেন। তার দেওয়া চিঠি আছে আরিফ নামের আইডিতে। আমাদের মৃত্যুর কারণ তারা। কোনো দিন ক্ষমা করব না।

এ বিষয়ে ঊর্মির মা নুরুন্নাহার বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে সাফায়াত নামের একজন প্রবাসী ছেলের সম্পর্ক ছিল। ১৪ অক্টোবর সম্মতি নিয়েই মেয়েকে বিয়ে দিই। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে হাসি-খুশিতেই ছিল। শনিবার রাতে হঠাৎ শুনি ঊর্মি ও তার প্রেমিক সাফায়াত ভিডিওকলে আত্মহত্যা করেছে। মেয়ের স্বামীর বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্রবাসী ছেলেটাই আমার মেয়ের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।

এ বিষয়ে সাফায়াতের বাবা আবদুল খালেক বলেন, এক বছর আগে ছেলেকে ওমান পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে ছেলে হঠাৎ বিদেশে কর্মস্থলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। খবর নিয়ে শুনলাম, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে আমার ছেলের সঙ্গে ঊর্মি নামের এক মেয়ের পরিচয় হয়েছিল। হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে অসুস্থ হয়ে গেছে। শনিবার রাতে সেই মেয়ে আমার ছেলের সঙ্গে ভিডিওকলে চিরকুট লিখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে শুনেছি।

এ বিষয়ে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, বিয়ের ১৩তম দিনে নববধূ প্রবাসী প্রেমিককে ভিডিওকলে রেখে ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। শুনেছি, প্রবাসী প্রেমিকও একইভাবে আত্মহত্যা করেছে। শনিবার রাত অনুমান ১১টায় নববধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মরদেহের পাশে হাতে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যার আগে মেয়েটি তার মা-বাবার উদ্দেশে এটি লিখেছিল। এ ঘটনায় নববধূর ভাই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles