
আজকের দিনটা যেন ছিল একান্তই কবিতার মতো—ঘন মেঘে ঢাকা আকাশ, বৃষ্টির মৃদু ঝাপটা, আর বাতাসে এক ধরনের নীরব সুর। বের হওয়ার সময় বৃষ্টি হবে, তা ভাবিনি; কিন্তু হঠাৎ করেই আকাশ ভেঙে পড়ল। আশ্চর্যের বিষয়, সেই অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিটাও যেন একপ্রকারের আনন্দ নিয়ে এলো। প্রতিটি ফোঁটায় যেন ছিল সৃষ্টির এক নতুন আহ্বান, এক ধরনের নির্মল প্রশান্তি। মন্দ লাগেনি, বরং সেই বৃষ্টি আমার মনকে আরও গভীর এক ভাবনায় ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
এই মেঘলা দিনের মুগ্ধতা সাথে নিয়ে রওনা হলাম নীলক্ষেতের দিকে। নীলক্ষেত—যেখানে বইয়ের এক রাজ্য অপেক্ষা করছিল আমার জন্য। মাটিতে জল জমা রাস্তায় পা ফেলে এগোলাম রং তুলি আর ক্যানভাসের খোঁজে। যদিও আমি নিজে তেমন আঁকতে পারি না, তবুও শিল্পের প্রতি এক অদ্ভুত শখ কাজ করে, তাই সেসব সামগ্রী সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই আজকের যাত্রা।
নীলক্ষেতে পৌঁছে মনে হলো, বইয়ের সমুদ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে সাজানো নানা রকমের বই—গল্প, কবিতা, সাইন্স ফিকশন, উপন্যাস—প্রতিটি বই যেন নতুন কোনো দিগন্তের পথ খুলে দিচ্ছে। আমি এক এক করে সেগুলোর সাথে পরিচিত হলাম, যেন প্রতিটি বই আমাকে নিজের গল্প শোনাতে চাইছিল। মনে হলো, এই বইয়ের রাজ্য থেকে কিছু নিয়ে ফেরার ইচ্ছে থাকলেও আজ ছিল আমার শিল্পসামগ্রী কেনার দিন।
রং, তুলি, ক্যানভাস—এইসব শিল্পের উপকরণগুলো হাতে নিয়ে ভাবলাম, হয়তো নিজেকে প্রকাশ করার এক নতুন মাধ্যম পেয়ে গেলাম। শিল্প তো শুধু রং বা রেখায় সীমাবদ্ধ নয়, তা হতে পারে অনুভবেরও প্রকাশ। বৃষ্টিভেজা এই দিনের মায়াবী অনুভূতিতে আজকের কেনাকাটা যেন হয়ে রইল আমার সৃষ্টিশীলতার নতুন শুরু।
কিন্তু ফেরার পথে আবারও বৃষ্টির সাথে যোগ হলো ঢাকার ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে লেগে থাকা জ্যাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, তাতে ভিজতে ভিজতে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। আশেপাশে জ্যামের দীর্ঘ সারি, কেবল গাড়ির হর্ন আর ট্রাফিকের নির্লিপ্ত কোলাহল। তবুও মনে হলো, এই অপেক্ষাটাও যেন দিনটিকে আরও বিশেষ করে তুলল—প্রকৃতির সুর আর শহরের কোলাহল মিলেমিশে তৈরি হলো এক অন্যরকম সংগীত। সৃষ্টির প্রতি আমার এই অদম্য আকর্ষণকে আজকের এই বৃষ্টিভেজা দিন যেন আরও গভীর করে দিল।