
চুমকি আপার প্রেম হয়েছে বিশাল মেদ ভুড়িওয়ালা উস্তার ভাইয়ের সাথে। মেদ ভুঁড়ি পর্যন্ত হলে ও ঠিক ছিল মাথায় ও বিশাল খেলার মাঠ।
তাও ঠিকঠাক ছিল উস্তার ভাইয়ের বয়স ৪১বিয়ে ২টা। আগের বউয়ের কি হয়েছে বলতে পারছি না। আব্বা লোক নিয়োগ করেছেন খবর নেয়ার জন্য।
গঞ্জে দুইটা রাইস মিল আছে,চালের আড়ৎ আছে এক কথায় মফস্বলিয় শিল্পপতি।
ছোট বেলায় আমরা যখন পাঁচ-দশ টাকা জমিয়ে কোন এক শুক্রবারে আচার,আইসক্রিম, চুইংগাম খেয়ে টাকা শেষ করে ফেলতাম, চুমকি আপা সেই টাকা বছরের পর বছর জমিয়ে সোনার আংটি গড়িয়েছে।
আপার খুব গহনাপত্রের শখ।
বুঝতে পারি না এমন একটা লোক কে, কেন আপা বিয়ে করতে চাচ্ছে।
মাঝেমধ্যে মনে হয় সম্পদ-ই হয়তো আপা কে টানে। মাঝেমধ্যে মনে হয় চুমকি আপা এমন না।
দাদি হামান দিস্তায় বসে পান সুপারি ছেঁচছে। চুমকি আপা কে বললো-
– বইন উস্তার রে তোর কি দইখ্যা মনে ধরলো? বিয়্যাত্ব্যা বেডা যে বাউটার বাউটা হইব লো বইন। আমার কথা ডা শুন। তুই না কইরা দে।
যুঁথি আপা একটা বাটিতে করে কাঁচা আম ফালিফালি করে বিট নুন আর শুকনো লংকার গুঁড়া মাখিয়ে এনেছে। এক ফালি কাঁচা আম দুই দাঁতের মাঝে রেখে কুট্টুস করে কামড় বসিয়ে এক চোখ বুজে আছে।
আমের টকে হয়তো চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। সেই বন্ধ চোখ নিয়ে ই বললো-
-উস্তার ভাইয়ের মুখের ভিতর আছে পান খাওয়া লাল টুকটুকে জিভ। কথা বলার সময় মুখ দিয়ে বের হয় বাবা জর্দার সু ঘ্রাণ। আচ্ছা চুমকি’পা উস্তার ভাইয়ের বাবা জর্দার ঘ্রাণের প্রেমে পরেছিস না কি তার সম্পদের?
চুমকি আপা খাটের কোনায় সাদা চামড়ায় কালো প্রিন্টের নরম তুলতুলে পেন্সিল কে আদর করছিল। এই বিড়াল টা বকুল ভাই যুঁথি আপা কে দিয়েছিল। পেন্সিল নাম টা রেখেছি আমি। বিড়াল খু্ব একটা পছন্দ করি না তাই পেন্সিলের মাথায় হাত বুলাই না।
আরেক টা বিষয় হচ্ছে মায়া অত্যন্ত কঠিন একটা জিনিস । আমি চাই না মায়ার সংখ্যা বাড়াতে। একদিন সকালে উঠে দেখবো পেন্সিল টা মরে পরে আছে। আমি কেঁদে-কেটে নাওয়াখাওয়া ছেড়ে বসে থাকবো ছয় মাস। তবে পেন্সিল কে একটু একটু পছন্দ করি বকুল ভাইয়ের জন্য।
বকুল ভাই মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়ি আসে। যুঁথি আপার সাথেই পড়াশোনা করেছে। ক্লাসমেট হলে ও বকুল ভাই আপার বয়সে বড়।
আমি মুগ্ধ হয়ে লম্বা এক হাড়া গড়নের ফর্সা ছেলে টা কে আড়ালে আবডালে দেখি আর চিন্তা করি-
তুই ছেলে তুই হইবি শ্যামলা। সে যাই হোক এই লম্বা ছেলে টা সুন্দর, চমৎকার সুন্দর!
হাসলে ঠোঁটের এক পাশে ছোট্ট একটা টোল পরে। সমস্যা হচ্ছে এই ছেলে হাসে বারো মাসে এক-দুই বার।
আমার যে দিন অনেক টাকা হবে,বকুল ভাই কে হাসির বিনিময়ে টাকা দিব।
অনেকটা কা বি খা প্রকল্পের মতো কাজের বিনিময়ে খাদ্য। আমার একচেটিয়া প্রকল্পের নাম হবে, টা বি হা।
টাকার বিনিময়ে হাসি।
আমার সব কাজে,সব কথায় আজকাল বকুল ভাই কুট্টুস করে ঢোকে পরো কি করে বুঝতে পারি না।
যাইহোক চুমকি আপা আজ একটা সবুজ আটপৌর শাড়ি পরেছে। শাড়ির কুচি বাঁ হাতে সামলে খাট থেকে নেমে যুঁথি আপার গালে ঠাস করে চড় দিয়ে খাটের কোনায় গিয়ে আবার বসে পরলো।
পেন্সিল টা এই দৃশ্য দেখে দাদির জায়নামাজে দুই পা দিয়ে আঁচড় দিতে শুরু করলো।
যুঁথি আপা চড় খাওয়া গালে হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আপার দিকে তাকিয়ে বললো-
– এক কলমের লেখা পড়া দুই কলমের কালি, চুমকি তুমি স্বীকার করো উস্তার তোমার স্বামী। মেদ ভুঁড়ি কি করি?
আর নয় হতাশন আর নয় টেনশন। এসে গেছে চুমকি কোম্পানির আয়োর্বেদিক,এক ফাইল -ই যথেষ্ট।
যুঁথি আপার খুব ইচ্ছে সে উপস্থাপিকা হবে তাই সুযোগ পেলেই নিজেকে ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
এখন বেশিক্ষন ঝালাতে পারলো না,তার আগেই চুমকি আপা বললো-
– এখন যদি আসি রে যুঁথি,তোর একদিন কি আমার একদিন।
বুঝতে পারছি,এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না।
চুমকি আপা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বাংলা বিভাগে অনার্স পড়ছে । ক্লাসে যাবার সময় উস্তার ভাই আপা কে দেখে লোক মারফত বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে। আব্বা বেশ খুশি মনে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
চুমকি আপা কিন্তু আমাদের আপন বোন না। বড় চাচার মেয়ে। চাচা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছিল,সেই ঘরের মেয়ে চুমকি আপা।
এক প্রকার জোড় করে নাকি চাচা কে ডিভোর্স টা করানো হয়েছিল। এই ঘটনা আমরা খুব একটা পরিষ্কার জানি না। আসলে জানতে দেয়া হয় না। আব্বা এই বিষয়ে কথা বলা পছন্দ করে না।
তারপর থেকে চাচা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন একটা রুমে তালা বন্ধ অবস্থায় থাকে। ছাড়া পেলে ট্রেনে উঠে এখানে সেখানে চলে যায়। একবার চাচা কে কমলাপুর স্টেশনে পাওয়া গিয়েছিল।
বড় চাচার সাথে খুব একটা দেখা করি না।
এই মানুষ টা কে দেখলে আমার বুকের কোথায় জানি ব্যাথা হয়। মনে হয় এই হলুদ রংয়ের দু’তলা বাড়ির পশ্চিম পাশে চাচার ও একটা সংসার থাকতে পারতো। সেই সংসারে বড় চাচি ও আম্মার মতো প্রভাব বিস্তার করতো । চুমকি আপার নিজের মা থাকতো। চুমকি আপা উস্তার ভাই কে বিয়ে না করার প্রতিবাদে নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিয়ে কেঁদেকেটে চোখ ফোলাতে পারতো।
আব্বার মতো বাড়ির উঠানে আরেকটা গদি চেয়ার পাতানো থাকতো। বড় চাচা ও বসে বসে হুকুম দিত,সবাই চাচার ভয়ে কাঁপত।
আমাদের হলুদ রংয়ের চুন কামের বাড়ির লাল রংয়ের খাড়া খাড়া সিঁড়ি বেয়ে এক রকম দৌড়ে নিচে নামলাম। আম্মা ডাকছে। আচারের কাচের বয়াম গুলো ছাদে দিতে হবে।
সিঁড়ির পাশে প্রকান্ড সুনালু গাছ। গাছ বেয়ে নেমেছে হলুদ ফুলের ঝুড়ি। একটা ফুল ছিঁড়ে কানে গুঁজে দিলাম।
বকুল ভাই এসেছে। এই সময় অবশ্য সে আসে না। আজ কেন এসেছে বলতে পারবো না। তবে আমার মন উচাটন করছে তার সাথে অপ্রয়োজনীয় টুকটাক গল্প করার জন্য। এমন প্রায়-ই হয় তার জন্য আমার মনে যখন খুব টান পরে ঠিক তখনই সে এসে হাজির হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় মনের টান অত্যন্ত কঠিন এক চুম্বকীয় পদার্থ।
যদিও দীর্ঘ সময় এই মানুষের সাথে কথা হয় না। আমার মধ্যে একরকম ইগো কাজ করে। আমি কেন তার সাথে কথা বলবো, সে ও তো আমার সাথে কথা বলতে পারে।
যাইহোক আজ দুনিয়ার সব ইগো এক পাশে রেখে তার সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবো। মাঝেমধ্যে নিয়মের বাহিরে গেলে তেমন কিছু ক্ষতি হয় না। সবচেয়ে বড় কথা তার জন্য এতো অপ্রয়োজনীয় কথা জমিয়ে ফেলেছি তাকে না বলা পর্যন্ত আর রেহাই নাই। কারো জন্য কথা জমানোর মতো বাজে অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় টি আর নাই।
– কেমন আছেন বকুল ভাই? আপনার পেন্সিল টা যা দুষ্ট হয়েছে আর বলবেন না। একটু আগে দাদির জায়নামাজ টা আঁচড়ে-টাচড়ে একাকার করে ফেলেছে।
বকুল ভাই অবাক হয়ে নিজের দুই হাত দেখে বললো-
– পেন্সিল কোথায়?
– হুম,আপনার বিড়ালের নাম আমি পেন্সিল রেখেছি।
– ‘পেন্সিল ‘নামটা সুন্দর রেখেছো।
– জানেন বকুল ভাই চুমকি আপা উস্তার ভাই কে বিয়ে করতে রাজি। উস্তার ভাইয়ের আগে একটা বউ আছে। আপা কে বিয়ে করলে দুই বউ হবে। কি একটা ঝামেলা হলো বলেন তো?
– ঝামেলা বলছো কেন? ভালোই তো হলো। বউয়ের সংখ্যা যত বেশি স্বামীর আহলাদ ততোধিক। এক বউ রান্নাবান্না করলো আরেক বউ রোজকার করলো।
ধরো খুব মন খারাপ হলো, এক বউ মজার মজার কৌতুক বই থেকে কৌতুক পড়ে শোনাবে। আরেক বউ মনখারাপের কারন খুঁজে বের করবে। জীবনে আর কি লাগে!
– জ্বি, দুই বিবি নিয়ে আপনার একটা চমৎকার জীবন হোক।
– চন্দ্র, তোমার কানে হলুদ রঙের ফুলের নাম কি?
– ঐ যে সিঁড়ির পাশে সুনালো গাছের ফুল।
– সুনালো ফুল কানে গুঁজে দেয়া যায়! জানতাম না তো? তোমার প্রিয় ফুল কি?
ছোট্ট করে বললাম –
– বকুল।
বকুল ভাই কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছি। প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য কি না জানিনা বকুল ভাই বললো-
– চন্দ্র, তোমার কি জ্বর এসেছে? তোমার জ্বর আসলে তোমার কথার পরিমাণ বেড়ে যায়।
– না তো। আম্মা আচার ছাদে নিয়ে যেতে বলেছে।
বলে কোন রকম ভাবে তার সামনে থেকে আসল। সে যতটা না অপ্রস্তুত হয়েছে আমি হয়ে গেছি কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
কারন বকুল কোন কালেই আমার প্রিয় ফুল না।
বকুল কেন বললাম একদমই বুঝতে পারলাম না। আমার প্রিয় ফুল বেলি।
ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা! লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে গেছে। ধ্যাত কেন যে কথা বলতে গেলাম।
——-
#পর্ব২
আচারের বয়ম দুই হাতে তিন টা নিয়ে ছাদে উঠলাম। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম আসলেই আমার জ্বর। মাথা ঘুরাচ্ছে,চোখ জ্বালা করছে।
আচ্ছা বকুল ভাইয়ের তো আমার সাথে তেমন কোন যোগাযোগ নাই,সে জানলো কি করে আমার জ্বর আসলে কথার পরিমাণ বেড়ে যায়।
মানুষ টা কি আমার খবর রাখে?
রাখে বোধ করি। যদি আমার খবর রাখে তবে আমার মতো আমার জন্য সেও কথা জমায় না কেনো?
ছাদে একটা তিন পায়ারটেবিল আছে। এই টেবিল টা যুঁথি আপার পড়ার টেবিল ছিল। টেবিল টা ভাঙার একটা ঘটনা আছে।
টেবিলের একটা পা ঘোণ পোকায় ধরেছিল। তবু ও মুটামুটি ভালোই চলছিল, একদিন যুঁথি আপা কি কারনে জানি না টেবিলের সব বই নিচে রেখে, টেবিলে দাঁড়িয়ে হাতে স্কেল নিয়ে মাইক্রোফোন বানিয়ে বলছিলো –
– আমার প্রাণ প্রিয় ভাই ও বোনেরা প্রথমে…।
বলে আরো কিছু বলার আগেই ধিরিম করে টেবিলের পা ভেঙে নিচে পরে গেল।
আমরা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। যুঁথি আপা হাত পা ঝেড়ে উঠে বসতে বসতে বললো। সফলতার বিষয় টা এমনই উঠতে গেলে পরতে হবে।
আব্বা বিষয় টা দূর থেকে বসে বসে দেখছিলো। আমাকে হাত ইশারায় ডেকে বললেন চা দিয়ে যেতে। আব্বা কে চা দিয়ে ফিরার পথে আব্বা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বলেছিন-
– যুঁথি টেবিলে উঠে দাঁড়িয়েছিল কেন?
– জানি না আব্বা। তবে সে প্রায়-ই খাটের উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়,উপস্থাপনা করে। আজ হঠাৎ কিসের বিশেষ ইশারায় সাফল্যের উচ্চ শিখরে উঠে গেছিল বলতে পারবো না।
আব্বা চায়ে চুমুক দিতে দিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন-
– এই মেয়ে আসলে কি চায়?
টেবিল টা ছাদে আম্মা উঠিয়ে সিঁড়ি ঘরের দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রেখেছে আচার রোদ দেয়ার জন্য। মাঝেমধ্যে নিম পাতা,সজনে পাতা ও টেবিলে বিছিয়ে শুকাতে দেয়া হয়।
ছাদের রেলিংয়ে দুই চড়ুই বসে আছে। মাঝে মধ্যে ফুড়ুৎ ফাড়ুৎ উড়ে খবার আগের জায়গায় এসে বসে। সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য পূবের দিকে। তাল গাছ গুলোর পাতায় বড় বড় কলসের ন্যায় বাসা বানিয়ে রেখেছে বাবুই । সবচেয়ে সুন্দর পাখি হচ্ছে টিয়া। দূর থেকে মনে হয় কাঁচা পাকা আম ঘাপটি মেরে বসে আছে। ক্যাচ ক্যাচ শব্দে ডাকে।
এখনো কয়েক টা বাবুই বাসা বুনেই যাচ্ছে। পাশেই আছে লাল শাপলা পুকুর, পুকুরের পাশে কৃঞ্চচূড়া গাছ লাল হয়ে আছে ফুলে ফুলে।
পুকুর টা আমার খুব পছন্দের। আব্বা কে বলে কিছু পদ্মের ব্যাবস্থা করতে হবে।
ছাদ থেকে বারান্দার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম, মন্তু ভাই এক জোড়া রাজহাঁস এনে আম গাছের নিচে জবেহ করতে নিয়েছে।
পুকুরে রাজহাঁসেরা ঘুরে বেড়ালে চমৎকার লাগতো। সমস্যা হচ্ছে রাজহাঁসের কোন ঠিকঠিকানা নেই। কখন যে দৌড়ানো দেয়। দেখা গেলো আমি কলেজ থেকে ফিরছি,বকুল ভাইয়ের সামনে গলা উঁচিয়ে আমার দিকে আসছে।
আমি আল্লাহ গো, আব্বা গো বলে দৌড়াচ্ছি।
ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা ভাবতেই গা কাঁটা দিয়ে উঠে।
মন্তু ভাই কে বাঁধা দিলাম না।
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় এমন সুন্দরের কি প্রয়োজন।
দুপুরের দিকে দেখলাম জমেলার মা শীল পাটা নিয়ে বসেছে। ছোট ছোট মটির বাটিতে ভিজানো আছে গোটা মরিচ,হলুদ,ধনে,জিড়া,সরষে,পুস্ত,জায়ফল,জয়ত্রী, এলাচ,দারুচিনি,লবঙ,আঁদা আর নারকেল কুঁড়া।
আব্বা রাজহাঁস মাংস হাতে বাটা মসলা দিয়ে রান্না করতে পছন্দ করেন।
আজকের রান্না টা আব্বা করবে।
মাঝ উঠানে পাড় বাঁধানো পেয়ারা গাছের নিচে মাটির চলতি চুলা টা বের করা হয়েছে।
মন্তু ভাই,খড়ি নিয়ে এসেছে আমাদে জঙ্গল বাড়ি থেকে।
আমাদের ধানি জমির লাগোয়া একটা জঙ্গল বাড়ি আছে। সেখানে আব্বা দুনিয়ার এমন কোন গাছ নেই যে রোপণ করেনি। আমাদের জঙ্গল বাড়ি টা খুব সুন্দর। সুনশান নিরবতায় ঘেরা দু’চালা তিন রুমের ঘর।
কত রকমের যে পাখির কলরব দিন দুপুরে শোনতে পাওয়া যায়।
কাঠ ঠোকড়া পাখি দেখার জন্য মাঝে মধ্যে যাই।
সুপারিগাছ বেয়ে তড়তড় করে বেয়ে উঠেছে পান গাছ। আবার সুপারি গাছে বাসা বানাচ্ছে কাঠ ঠোকরা। মাছ রাঙাদের অবাধ আনাগোনা। বকুল ফুল গাছটার কথা খুব মনেপরলো। আজকের রান্নার আয়োজন টা জঙ্গল বাড়িতে হলে বেশ হতো।
অবশ্য আব্বার অনুমতি ছাড়া এখানে আসা যায় না।
হঠাৎ করে জঙ্গল বাড়িতে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিছুক্ষণ একা থাকতে পারলে ভালোলাগতো।
সবাই বলে আমি হয়েছি আব্বার মতো। একা থাকতে পছন্দ করি। একা সবাই থাকতে পারে না আমি বলি এক থাকতে পারা এক ধরনের আর্ট। একা থাকা মানে একাকিত্ব নয়,একা থাকা মানে নিজেকে সংযত রাখার এক অন্যন কৌশল।
আব্বা কে বলে জঙ্গল বাড়ির ঘরের চাবি চাইতে-ই দিয়ে দিল কোন রকম প্রশ্ন করা ছাড়াই। এখন পর্যন্ত যতবার চাবি চেয়েছি ততবারই প্রশ্ন ছাড়া-ই দিয়েছে। অন্যরা চাবি চাইলে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এই বিষয় টা আজকে খেয়াল করলাম।
জঙ্গল বাড়িতে কিছুক্ষণ নিরব বসে থাকবো। আসার আগে প্যারাসিটামল খেয়ে এসেছি,জ্বর অনেক আগেই ছেড়ে গেছে। চা খেতে পারলে ভালোলাগতো।
এখানে আব্বার চায়ের ফ্লাক্সে চাপ দিতেই দেখলাম গরম ধোঁয়া উঠা রং চা আছে দেখে কি যে শান্তি লাগছে বলে প্রকাশ করা যাবে না।
এক কাপ চা নিয়ে দুচালা ঘরের ছোট্ট বারান্দায় আব্বার চেয়ারে আধ শোয়া হয়ে বসে রইলাম।
বুঝতে পারছি না এই চেয়ার টা দাম্ভিকতার চেয়ার কি না! এখানে বসতেই নিজের মধ্যে দাম্ভিকতা চেপে বসেছে।
নাহ্ এখানে বসা যাবে না।
অহংকার একমাত্র আল্লাহর চাদর। দাম্ভিকতা স্রষ্টার সৃষ্টির স্বভাব হবে নম্র।
বারান্দার সিঁড়িতে বসে আছি। কৃঞ্চচূড়া ফুলে লাল হয়ে আছে বাড়ির বারান্দা।
বেলা কয়টা বাজে বুঝতে পারছি না,তবে অনেক সময় হয়েছে অনুভব করতে পারছি। বাড়ি ফিরতে হবে ফেরার পথে বকুল ফুল কুঁড়িয়ে নিলাম।
বাড়ি ফিরে দেখি এলাহি কান্ড, বাড়ি ভর্তি মানুষ হৈচৈ। দ্রুত পায়ে আম্মার রুমে গেলাম দেখলাম আম্মা নেই। বসার ঘরে আম্মা কত গুলো মহিলার সাথে কথা বলছে। আব্বা ও ব্যাস্ত কিছু লোকের সাথে উচ্চবাচ্য হচ্ছে।
চুমকি আপা কে জিজ্ঞেস করলাম-
– কি হয়েছে, আপা? বাড়ির পরিবেশ এমন কেন?
– উস্তারে ভাইয়ের বউ এসেছে অনেক মানুষ নিয়ে।
– হুম,অস্বাভাবিক কিছু না। নিশ্চয়ই বিয়ে ভাঙাতে।
– হুম।
– তুমি কি বলো,আপা?
– আমি কি বলবো,প্রথম থেকে যা বলছি ঠিক তাই এখনো বলছি। তার মধ্যে কথা বার্তা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন কি বিয়ে ভাঙা সম্ভব?
এবার বাহিরে হৈচৈ আরো বেড়ে গেছে। উস্তার ভাই এসেছে আরো কিছু লোকজন নিয়ে।
তার বড় বউয়ের কথা শুনা যাচ্ছে –
– আমার এতো বছরের সংসার টা এলোমেলো কইরেন না। আমাকে আরো একটা দুইটা বছর সময় দেন। আমি মা হইতে পারবো। আমার কোলে সন্তান আসবে।
উস্তার ভাই তার সাথে আসা লোকদের তার বউ কে সামলাতে বাঁধা দিচ্ছে। সে নিজেই বউয়ের হাত ধরে টেনে মাইক্রতে টেনে তুলতে তুলতে বলছে-
– এখানে আসার পথ কে দেখাইছে? বাড়ি আসো সব সমাধান করছি। শান্ত হও আমি অশান্ত হওয়ার আগে।
চুমকি আপা ডলার দাদা কে বললো-
– গাড়ি থামাতে বলো,আমি উস্তার ভাইয়ের বউয়ের সাথে কথা বলবো।
ডলার দাদা এতো দ্রুত গেল কি করে কে জানে। উস্তার ভাই কোন ভাবেই তার বউরে সাথে আপা কে কথা বলতে দিচ্ছে না।