
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আবারও ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নিবে না। একবার ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। আবারও ওই পথে যাওয়ার কথা কেউ চিন্তাও করবেন না। এই দেশের মানুষের রাজনীতিকে নিয়ে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শত প্রতিকূলতার মুখে বিএনপি বার বার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছে। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ এতো চেষ্টা করেও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি। আমরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে এক আছি।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।
এ উপলক্ষে বিএনপি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মিলাদসহ নানা কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিশিষ্ট একজন ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা তাকে খুবই শ্রদ্ধা করি, আপনার অনেক সুনাম। সেই সুনামকে রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় কাজ। যে দায়িত্ব আপনার ওপর পড়েছে, সে দায়িত্ব হচ্ছে-আপনি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন। অর্থাৎ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। আমি ক্ষমতার কথা বলি না, বলি দায়িত্ব দিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন উপদেষ্টা বলেছেন- রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যেতে উসখুস করছেন। এমন মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এমন বক্তব্য আশা করি না। আমরা রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করি না। আমরা বাংলাদেশকে হাসিনামুক্ত করার জন্য কাজ করেছি। জীবন দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা যুদ্ধ করছি।’
দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যত দেরি করবেন, তত হাসিনারা আবার ফিরে আসবে, সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখনো বলছি, আবারও বলছি-অতি দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করু। জঞ্জাল যা আছে, সাফ করে ফেলুন। দায়িত্বটা আপনাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় সহযোগিতা করছি, আপনারাও সহযোগিতা করেন। পদে-পদে আমরা উসখুস করছি, ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছি, এই সমস্ত কথা বলে মানুষের মনকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আমরা তো ক্ষমতায় যেতেই চাই। রাজনৈতিক দল তো করিই সেজন্য। নির্বাচন করব, ক্ষমতায় যাব। এটার জন্যই তো আমরা রাজনীতি করছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আমরা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। আপনাদের সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই বলতাম আমাদের বুকে পাথর হয়ে বসে আছে। পাথর গেলেও এখনো স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকা আছি। আটকা আছি, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন সরকার আছে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রে এসেছে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। একেবারে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে মানবিকতাকে। যেখানে যাবেন আওয়ামী লীগের চোরেরা বসে আছে। এখনো বসে আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সব দলের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ঢাকা শহরের সব সড়কের নামগুলো বিশিষ্ট মানুষের নামে করে দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
তরুণদের উদ্দেশ তিনি বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের যুগ। যখন আব্বাস ও খোকা ভাই ছিলেন তখন ঢাকা শহর কাঁপতো। তোমাদেরও কাঁপাতে হবে। শেখ হাসিনা খোকা ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কখন পরাজিত হন? যখন মানুষটিকে মানুষ নিজের কাছের মানুষ হিসেবে বেছে নেয়। আমি তাকে কখনো উত্তেজিত হতে দেখিনি, অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তার মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মতো ভারি হয়েছিল।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না, হাসিনা তো চলে গেল। কিন্তু তার দোসররা তো রয়ে গেল এখনো। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংস্থায় হাসিনার লোকজন পাকাপোক্তভাবে বসে গেছেন। একজন বিশেষ ব্যক্তি আছেন, যিনি এই দেশটাকে ধ্বংসের শেষ দিকে নিয়ে যাবেন, যদি ড. ইউনূস সাহেব ওনার প্রতি কোনো ব্যবস্থা না নেন। তিনি খুব কাছাকাছি থাকেন শ্রদ্ধেয় ইউনূস সাহেবের। সেই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ ধ্বংসের জন্য যা কিছু করার দরকার, তা করে যাচ্ছেন অবলীলায়।’ তবে ওই ব্যক্তির নাম বলেননি মির্জা আব্বাস।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
এর আগে রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব। এসময় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মাহবুবে রহমান শামীমসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।