
বেশ আগে প্রাায় ২০-২৫ দিন হবে হয়তো। তখন ডেনফোর্থ ফার্নচারের নিচে স্টুডিওর ছবি আঁকার সরঞ্জাম মুভ করছি বলে সরাতে হচ্ছিল সব কিছু। সারাদিন দৌঁড়ঝোপ করে সন্ধধ্যায় ক্লান্ত হয়ে টরন্টো বাংলা টাউনের সুইস বেকারীতে নুরু ভাইয়ের গরম ডালপুরি,পায়াজু আর চা নিয়ে মাথা ঝুকিয়ে বসে খাচ্ছি।
হঠাৎ নাকে চমৎকার সুগন্ধীর ঝাপটা লাগলো। বুঝলাম নারী এবং স্বাস্থবতী নারীর সুভাস। গরম ডালপুরি নিতে আগমন হয়তো। ভাবলাম নাহ!ঘুরে তাকাবোনা। গরম ডালপুরি ভক্ষণে ডুবে থাকি। চমকে উঠলাম স্বাস্থবতী সুন্দর নারী কন্ঠ যখন বলে উঠলেন – আরে ইকবাল ভাই,একা একা ডালপুরী খাচ্ছেন! সঙ্গে কেউ যে নেই। আসলে সঙ্গে তেমন কেউ কখনো থাকেনা সঙ্গে। তবে একটা ধারণা তৈরী হয় যেন আমার সঙ্গী কেউ থকলেই মানানসই। ঘাঢ় তুলে দেখি এ শহরের বংলা কবিতা আবৃতি করে ধন্য পরিচিতি পাওয়া দিলারা নাহার বাবু হাতে বিশাল গরম ডালপুরির ঠোঙ্গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
বাবু বলেন- এবার আসতেই হবে! কবি শামসুর রাহমান যেমনটি স্বাাধীনতাকে ডেকে ছিলেন তেমনি করে ডাকছি-আসতেই হবে! আমার একক আবৃতি সন্ধ্যায়! জানতে চাইলাম – টিকেট ব্যবস্থা থাকলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। বাবু তক্ষনাৎ হাতের বড় ব্যাগ হাতড়ে বল্লেন – আহা নেই!টিকেট থাকলে এখনি দিয়ে দিতাম। বল্লাম – এখনো অনেকদিন বাকি,আবার দেখা হবে।তখন দিয়েন।
বাবু আচ্ছা বলে বেরিয়ে যেতে বেশ কিছুটা এগিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে ফিরে এসে ব্যাগ থেকে বের করলেন একখানি ভিআইপি টিকেট,বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। বার বার না না করলাম, ভিআইপি না হয়ে অযথা এই মূল্যবান টিকেট নেয়া ভালো দেখায়না! বাবু আর কোনো কথাই শুনলেন না,শুধু বল্লেন – আসতেই হবে! বেচারী দামী টিকেট নষ্ট করা ঠিক হবেনা।
এদিকে ঢাকা থেকে আমার ছোটকালের প্রিয়বন্ধু শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তর প্রফেসর মোহম্মদ হানিফ মন্ট্রিয়লে নামবে ২ নভেম্বর দুইদিনের কাজ সারলে পরে টরন্টো আসবে ঘুরবো দু’জন প্রানন্দে। মন্ট্রিয়ল গিয়ে এক সাথে টরন্টো ফিরবো ভেবে রেখেছি। কি করি! বাবুর অনুষ্ঠান শষে মধ্যরাতে কিংবা পরের দিন সকালে মন্ট্রিয়ল মুখি হতে হবে। এমনিতে টরন্টো পত্র পত্রিকায় সোসাল মিডিয়ায় বাবু নিজে ও বন্ধু বান্ধবেরা অনুষ্ঠানটি নিয়ে নানা আমন্ত্রণ পোস্ট করছেন।
নভেম্বরতো এসে গেলো প্রায়,আমারও কিছু লেখা উচিত। কবিতা নিয়ে কিছু ভাবতে গেলেই আমার চারদশকের প্রিয় কবিবন্ধু ইকবাল হাসানের কথা মনে চলে আসে বারবার। সে নেই তবু সে আছে। ২০১০-১১র দিকে ঢাকার রয়েল পাবলিশার্সের কর্ণধার জামাল আহমেদকে প্রায় জোর করে শহিদুল ইসলামা মিন্টুর উৎসাহে পুরটা চার রঙা অফসেটে ছাপা ব্যয়বহুল ‘যুগলবন্দি’ নাম একটি বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে ছিলো ইকবাল।যতে পাতায়-পাতায় আমার পেইন্টিং এর ছবি আর ইকবাল হাসানের কবিতা ছিলো।
ভাবলাম বইটি থেকে তার একটি কবিতা বেছেনি বাবুর পোস্টের জন্যে। বইটি হাতে নিয়ে খুলতেই চোখে পড়লো তার ‘ জলরঙে মৃত্যুদৃশ্য’ কবিতাটি। মৃত্যু ছাড়া কবিতা হয়না / উষ্ণতা কারো কারো কাম্য হ’তে পারে। স্বাভাবিক। / আশ্চর্য শীতল বলে কেউ কেউ এড়িয়ে যায় মৃত্যৃ দৃশ্যগুলো। / যদিও এই প্রবণতা গদ্যে যতটা সচল,কবিতায় নয়। / কবিমাত্র মৃত্যু কামুক। / তার কামভাব মূলত মৃত্যুতাড়িত। এতএব / মৃত্যুর ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হয় / অন্ধকার গুহার ভেতর। / লাইন ও হাফটোনে আসলে সে যা লেখে / মৃত্যু তার নাম। / তার রেখাচিত্র থেকে রাতভর জলরঙে মৃত্যু ঝরে পড়ে।(আজ অবাক লাগে নিজের মৃত্যুর আট-নয় বছর আগে নিজের মৃত্যু নিয়ে কি ভাবে এমন মৃত্যুবিষয়ক কবিতা বন্ধু লিখে রেখে যেতে পারে!
স্কারবোরো, কানাডা