
আজ পহেলা নভেম্বর।
ছোট একটা সাফল্যের বছর।
লেখাটি লেখা এ মাসের শুরুতে কিন্তু গত এক সপ্তাহে যেহেতু এফবি ব্যবহার বন্ধ ছিল তাই পোস্ট করা হয়নি।
গত বছর বাংলাদেশের সাইফুর একাডেমির সাইফুর ভাইয়ের সাথে ব্রাম্পটনে দেখা হওয়া এবং বাংলাদেশের পড়াশুনা নিয়ে কিছু কথা হওয়ার পর আমি বাংলাদেশে অবস্থানররত আমাদের কিছু ভাগ্নে/ভাগ্নি, ভাতিজা/ভাতিজিদের পড়াশুনার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতে থাকি। এই বাচ্চাগুলি সবাই ক্লাস ৩/৪ থেকে এসএসসির নিচে অর্থ্যাৎ প্রাইমারি বা হাইস্কুল লেভেলের।
প্রথম প্রথম যদিও ওদের ইংরেজি ভাষার ব্যাপারে আলাপ হচ্ছিলো, কিন্তু পরে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বুঝতে পারলাম দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কি বেহাল অবস্থা। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে কখনো আহামরি ছিলো তা ঠিক না, তবে বিগত ২০ বছরে অবস্থা ১২টা নয় ১৪টা বেজে গেছে। কেউ হয়তো বলবেন আমাদের দেশের পড়াশুনা নিয়ে কেউ কি ভালো করছেন না, হাঁ করছেন কিন্তু সেই পার্সেন্টেজ হাতে গোনা, তাছাড়া যারা করছে ,বরং তারা তাদের নিজেদের চেষ্টায়, ওই শিক্ষাব্যবস্থার দৌলতে নয়।
আমাদের দেশের বাচ্চাগুলি ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে গ্রামে বা ছোট শহরের স্কুলে পড়াশুনা করে। এই স্কুলগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমানে বৈসম্মতো আছেই, তারপরে আবার একটার থেকে আর একটার কোয়ালিটি একেবারেই নিম্ন, এই বৈষম্য নিয়ে কেউ কথা বলে না। সব জায়গাতেই বাচ্চাদের স্কুলের পাশাপাশি কোচিং এবং প্রাইভেট পড়ানো হোচ্ছে, তারপরেও তারা তেমন কিছু শিখছে না। সেই, “”The cow is a domestic animal” টাইপের পড়াশুনা এখনো চলছে।
Cow এর জায়গায় যদি Goat বা ছাগল দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা স্ট্যাক। অংকের ক্ষেত্রেও ৬ জায়গায় ১০ দিলেই হলো। তাদের যারা শিক্ষা দেন তাদের কোয়ালিটিও প্রশ্নবিদ্ধ, অল্পকিছু বেতিক্রম ছাড়া। খুবই দুঃখজনক।
আমার যদি ইলোন মাস্কের মতো টাকা থাকতো তাহলে নিজেই উনার মত নিজেদের বাচ্চার জন্য স্কুল বানিয়ে সেখানে তাদের পড়াতাম। যাহোক, চিন্তা করলাম কিছু একটা বা কি করা যায়, ক্ষুদ্র সামর্থে।
তখন বাচ্চাদের সাথে আলাপ করে আমরা ঠিক করলাম আমরা প্রতি শনিবার ২ ঘন্টা Zoom এর মাধ্যমে সবাই মিলে তাদের বাংলা এবং ইংরেজি কমুনিকেশন নিয়ে আলোচনা করবো এবং তাদের শেখা কিছু কিছু বিষয়ের বাস্তব ব্যবহার বা Practical Application নিয়ে কথা বলবো।
আমরা শুরু করেছিলাম গত বছর নভেম্বর থেকে, শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময় বাদে মোটামুটি এক এক বছর রেগুলার ছিল।
মাঝে মাঝে আমি এই কানাডার বাচ্চাদের সাথে ওদের কানেক্ট করিয়ে দেই, যাতে করে তারা ওদের আইডিয়া এবং দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে পারে। যে বিষয়গুলি Unfortunately স্কুলে শেখায় না সেগুলি নিয়েও আমরা আলোচনা করি।
যাহোক, এই ১০/১১০০০ কিঃমিঃ দূর থেকে মাত্র সপ্তাহে ২/১ ঘন্টায় যে আহামরি কিছু সম্ভব না সেটি আমি জানি, তবে আল্লাহর রহমতে এই এক বছরে বাচ্চাদের বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে।
ওরা এখন দেশের অনেক শিক্ষিত এডাল্টদের থেকে নিজের Introductionটা ভালো করে দিতে পারে। Teamwork জিনিষটা ভালো করে বুঝে ফেলেছে, অন্যের মতামতকে সম্মান করা এবং মতের মিল না হলে ভদ্রতার সাথে বিরোধিতা করা, reliable হওয়া এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ওরা ওদের নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠেছে এবং আগ্রহটা বেড়েছে।
এই ব্যাপারে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এখানে আমাদের ক্যাম্পিং পরিবারের বাচ্চাদের, যেমন ড্যানিকা, রাজ, জাইয়ান, সারাহ, ছামি, নেহলা মুন্নিকে। এদের কেউ কেউ আমাদের আলোচনায় সরাসরি যুক্ত থেকেছে এবং অন্যরা তাদের আইডিয়া এবং দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছে।
বাংলাদেশে ওদের বাবা-মা টাকা পয়সা ঠিকই খরচ করছেন কিন্তু যে ধরণের শিক্ষা পাওয়া দরকার সেটি তারা পাচ্ছে না, খুবই দুঃখজনক।
জানিনা ভালো কিছুর আশা শুধু আশাই হয়তো থেকে যাবে। যাহোক ওদের এই এক বছর পূর্তিতে অভিনন্দন !!
সবাই ওদের জন্য দোয়া করবেন।