
১৯৬৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। পশ্চিম নরওয়ের হেরি পৌরসভার একটি হাসপাতালে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন কারেন রাফসেথ ডকেন। প্রথমবার মা হওয়া কারেন কয়েক দিন পর সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পরম মততায় বড় করতে থাকেন মেয়েটিকে।
তবে ৫৭ বছর পর জানা গেল, কারেন যাকে নিজের মেয়ে বলে লালন-পালন করেছেন সে তাঁর সন্তান নয়। হাসপাতালের ভুলে অন্যের সন্তানকে নিজের মনে করে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। আর কারেনের মেয়ে বেড়ে উঠছিল আরেক নারীর সন্তান হিসেবে। হাসপাতাল থেকেই শিশু দুটি বদলে যায়।
নরওয়ের টেলিভিশন এনআরকে এক প্রতিবেদনে এই চমকপ্রদ ঘটনা জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৮১ সালে বদলে যাওয়া শিশু দুটি যখন ১৬ বছরের কিশোরী, তখন কারেনের নিজের মেয়ে যে নারীর কাছে বেড়ে উঠছিল, তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি ডিএনএ টেস্ট করেন। দেখা যায়, মেয়েটির জন্মদাত্রী তিনি নন।
ওই নারী নিজের মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে সবাই তাঁকে খোঁজাখুঁজি বন্ধ করার পরামর্শ দেয়। একসময় হালও ছেড়ে দেন ওই নারী।
তবে সত্য সব সময় তার নিজের গতিতে ও পথে চলে—এই কথাটি সঠিক প্রমাণ করে অত্যন্ত নাটকীয় ও বিস্ময়করভাবে ৫৭ বছর আগের শিশুবিভ্রাটের ঘটনারও একটা সুরাহা হয়। কারেনের কাছে বড় হওয়া মেয়েটি নিজের ডিএনএ টেস্ট করে সেটি বংশবৃত্তান্ত বিষয়ক গবেষণা করে এমন একটি ওয়েবসাইটে দেয়।
সেখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তার ডিএনএ মিলে যায়। সেই সূত্র ধরেই নিজের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটে তার।
এদিকে চমকপ্রদ এই ঘটনার পর দুই পরিবারই ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের জন্য এখন তুমুল আইনি লড়াই অপেক্ষা করছে। ১১ নভেম্বর অসলো জেলা আদালতে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছে। রাষ্ট্র ও পৌরসভা উভয় পক্ষের আইনজীবীদেরই দাবি, কে বা কোন পক্ষ ভুল করেছে, তা প্রমাণ করা অসম্ভব। মামলাটি এখনো চলছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া উচিত বলে উভয় পক্ষই মনে করছে।