
সন্ধ্যেবেলা বাস উঠে চলে গেলাম সুন্দরের দেশ জার্মানি। ব্যাস্ত নগরী ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌছতে পৌছতে বেজে গেল রাত একটা। ভাগ্য ভালো হোটেল ছিল ১৫ মিনিট হাঁটার দূরত্বেই। ভারতীয় এক ভদ্রলোকের হোটেল। তোমাদের মধ্যে যারা নাক উঁচু আছো এবং যাঁদের চব্বিশ ঘন্টা কনসিয়ার্জ এবং রুম সার্ভিস না হলেই নয়, তাদের জন্য এই হোটেল নয়। এটি হল আমাদের মত দিন আনে দিন খায় লোকেদের হোটেল। এক ঘুমে রাত শেষ। উঠলাম শুক্রবার সকালে। মসজিদ খুঁজে নামায পড়ার প্ল্যান করলাম।
তপ্পি তপ্পা গুটিয়ে, হোটেলের জঘন্য কফি খেয়ে বের হলাম। গাড়ী ভাড়া করব। বিশ মিনিটের মত হাঁটা। যেতে যেতে ভালোই লাগল।হার্টজ কম্পানি থেকে ভাড়া করলাম গাড়ী।চমতকার এক জার্মান ভদ্রমহিলার সাথে কথা হল।নাম মেলেনিয়া, কথার এক পর্যায়ে তিনি তার মায়ের কথা বলতে বলতে কান্না করে ফেলেন।আমি নিজে কান্না করতে পারি না, কিন্তু ওকে খুব আপন মনে হল। জড়িয়ে ধরলাম।
মেলেনিয়ার সাথে কাজ শেষ করে দেখি খিদে পেয়ে গেছে আর চারদিকে এত মজার মজার খাবার।ঢুকে পড়লাম এক ক্যাফেতে। দারুন সব হালাল খাবার পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার এক কাপ কফি আর মাংশাসী দুপুরের খাবার। ভরপেট খেয়ে ঘুরতে বের হলাম শহর।
এই ফ্রান্কফুর্ট শহর নিয়ে কিছু তথ্য দেওয়া যাক:
১. ফ্রাঙ্কফুর্ট জার্মানির আর্থিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল।
২. এই শহরকে তার চিত্তাকর্ষক স্কাইলাইনের কারণে প্রায়শই “মেইনহাটান” হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যেখানে অনেকগুলি আকাশচুম্বী এবং উঁচু ভবন রয়েছে।
৩. বিখ্যাত জার্মান লেখক জোহান উলফগ্যাং ফন গোয়েথে 1749 সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান এখন একটি যাদুঘর গোয়েথে হাউস নামে পরিচিত।
৪. ফ্রাঙ্কফুর্টের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে যা রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে চলে আসছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি ব্যবসা, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।
৫. শহরটি বিশ্বের বৃহত্তম বই মেলার আয়োজন করে, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা, যা 15 শতক থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
৬. সংস্কৃতি এবং বৈচিত্রের মিলনস্থল হল ফ্র্যাঙ্কফুর্ট, যেখানে একটি সমৃদ্ধ শিল্প ও সাংস্কৃতিক দৃশ্য রয়েছে। এটি অসংখ্য জাদুঘর, গ্যালারী, থিয়েটার এবং সঙ্গীত স্থানগুলির আবাসস্থল।
৭. পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে ফ্রাঙ্কফুর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং এটি ছিল অসংখ্য সম্রাটের নির্বাচন ও রাজ্যাভিষেকের স্থান।
৮. ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, ইউরোপ মহাদেশের জন্য একটি প্রধান পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
৯. ব্যস্ত নগর কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও, ফ্রাঙ্কফুর্ট তার অনেক পার্ক এবং সবুজ স্থানের জন্য পরিচিত, যা বাসিন্দাদের এবং দর্শনার্থীদের বিশ্রাম ও বিনোদনের সুযোগ প্রদান করে।
১০. ফ্রাঙ্কফুর্ট তার ঐতিহ্যবাহী ক্রিসমাস মার্কেটের জন্য বিখ্যাত, যেখানে দর্শকরা ছুটির মরসুমে উৎসবের সাজসজ্জা, সুস্বাদু খাবার এবং হস্তশিল্পের উপহার উপভোগ করতে পারেন।
১১. ফ্রাঙ্কফুর্টের বৈচিত্র্যময় এবং গতিশীল চরিত্র, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিকতাকে এক অনন্য এবং চিত্তাকর্ষক উপায়ে মিশ্রিত করে।
ফ্রাঙ্কফুর্টে অনেক আনন্দ হয়েছে তাই ছবি তোলা হয়েছে সবচেয়ে কম।
স্কারবোরো, কানাডা