
গত মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে শহিদ মিনারসংলগ্ন সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে সাভারের এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন, পার্শ্ববর্তী প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন ফটকের সব সিসিটিভি বিকল থাকায় রিকশাচালককে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি রিকশাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের নিবন্ধিত না হওয়ায় কোনোভাবেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
দুর্ঘটনার সময় পথচারী নাঈম এবং রিকশায় যাত্রী হিসেবে থাকা আবু হায়াত ও নাহিদের মাধ্যমে রিকশাটি শনাক্ত করার চেষ্টা চালান নিরাপত্তাকর্মীরা। এদের মধ্যে নাঈম নির্মাণাধীন লাইব্রেরি ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর। অপর দুইজন আবু হায়াত ও নাহিদ সমাজবিজ্ঞান এক্সটেনশন ভবনের নির্মাণ শ্রমিক।
অনিক এন্টারপ্রাইজের অপারেটর নাঈম বলেন, আমি তখন শহিদ মিনারের পাশ দিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ছাত্রীকে ৭টা ৫২ মিনিটে মেডিকেলে নিয়ে আসি। আমি রিকশাওয়ালাকে অনেকটা শনাক্ত করতে পেরেছি।
নির্মাণ শ্রমিক নাহিদ ও হায়াত বলেন, আমরা ওই সময় টারজান থেকে এই রিকশায় উঠি। আমরা নিশ্চিত রিকশা এটাই। সেই রিকশায় সিট চেঞ্জ করেছে। এটার সামনের দিকে লাইট ভেঙে গিয়েছিল; সেগুলো এখনো আছে। গাড়ির নিচের দিকে নতুন রঙ করা হয়েছে। হাত দিয়ে দেখলাম, রিকশায় নতুন রঙ করেছে।
দুর্ঘটনার সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আরেক অটোরিকশাচালক নুরুজ্জামান। এ সময় নাঈম গুরুতর আহত আফসানাকে কোলে তুলে রিকশায় উঠলে কুলফি মালাই বিক্রেতা তবারক পানি নিয়ে ছুটে আসেন। পরে তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে নুরুজ্জামানও তাদের পেছন পেছন রিকশা চালিয়ে যান। পরে তাদের সূত্র ধরেই রিকশাওয়ালা আরজুর গেরুয়ার বাসা খুঁজে বের করে পুলিশ।
এদিকে ১৯ নভেম্বর দুর্ঘটনার পর রিকশা বিক্রির চেষ্টা করে রিকশাচালক আরজু। ক্ষতিগ্রস্ত সেই রিকশার সামনের দিকে পলিথিন বদলে গ্লাস লাগানো হয়। লাল রঙের বসার সিট বদলে নীল রঙের সিট লাগানো হয়। তবে দুর্ঘটনায় ভেঙে যাওয়া হেডলাইট বদলাতে ভুলে যান আরজু।
রিকশার যাত্রী আবু হায়াত ও নাহিদের বক্তব্য শুনে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া রিকশায় নতুন রঙের গন্ধ ও নতুন হুড লাগানোর আলামত পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে রিকশাটি নিয়ে আসা হলে সেটি পরীক্ষা করে দেখেন পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা।
সন্দেহভাজন আরজুর বক্তব্যের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার দুপুরের আগেই তিনি রিকশাটি সাভারের ছায়াবিথী এলাকার ‘মাসুদ অটো পার্টস’-এর মালিক মাসুদ নামের একজনের কাছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় রিকশাটি বিক্রি করে দেন। এমনকি সন্দেহ থেকে বাঁচতে বিক্রির দলিলে দুর্ঘটনার আগের দিন ১৮ নভেম্বরের তারিখ উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিকশাচালক আরজু বলেন, আমি আসলে রিকশা চালাই না। ১৫ দিন আগে থেকেই আমার হাতে ব্যথা ছিল। আমি ১৮ তারিখেই বিক্রি করেছি। রিকশার ব্যাটারি একটু খারাপ ছিল দেখে কম দামে বেচে দিছি। আমি ওই দিন জাহাঙ্গীরনগরে ছিলাম না।
আরজুর জামাতা হোসাইন দাবি করেন, তিনি রিকশার পুরাতন বডি কিনে মেরামত করেন, রঙ করে বিক্রি করেন। তিনি ঘটনার দিন জাহাঙ্গীরনগরে একবারও যান নাই।