9.6 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

জমি বিক্রি করে ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়েছেন ‘কোটিপতি’ বৈভবের বাবা

জমি বিক্রি করে ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়েছেন ‘কোটিপতি’ বৈভবের বাবা
বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীর সঙ্গে বৈভব সূর্যবংশী ছবি সংগৃহীত

বাবা একসময় ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বড় কোনো মঞ্চে যেতে পারেননি। পারিবারিক কৃষি জমি থাকায় পেশা হিসেবে সেটাকেই বেছে নেন। কিন্তু ক্রিকেটের স্বপ্নটা ঠিকই পুষে রেখেছিলেন, যেটা তিনি ছড়িয়ে দেন ছেলে বৈভব সূর্যবংশীর মাঝে। মাত্র ৪ বছর বয়সে বাড়ির উঠোনে বাবার হাতেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় বৈভবের। গতকাল সোমবার আইপিএল নিলামে তাকে ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে কিনেছে রাজস্থান রয়্যালস।

বিহারের পাটনা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের ছোট শহর সামস্তিপুরে বৈভবের জন্ম। গ্রামের নাম তাজপুর। বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী বাড়ির পিছনে ছোট একটু জায়গা পরিষ্কার করে ছেলে ক্রিকেট শেখাতে শুরু করেছিলেন। বাবার কাছে প্রাথমিক ক্রিকেট পাঠের পর ৯ বছর বয়সে সমস্তিপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয় বৈভব। সেখানে আড়াই বছর শেখার পর বিজয় মার্চেন্ট ট্রফির জন্য ট্রায়ালে যায়।

- Advertisement -

ট্রায়ালে ভালো পারফর্ম করলেও কম বয়সের কথা ভেবে তাকে স্ট্যান্ড বাই রেখেছিলেন বিহারের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের নির্বাচকেরা। সেখানেই চোখে পড়ে যান সাবেক রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার। তার পর থেকে তিনিই বৈভবের কোচ। ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়। এর আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ভালো পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ভিনু মানকড় ট্রফিতে ৫ ম্যাচে চারশর বেশি রান করেছিলেন বৈভব।

গত বছর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ম্যাচের সময় ওয়াসিম জাফরের সঙ্গে পরিচয় হয় বৈভবের বাবা সঞ্জীবের। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ পেয়ে তিনি আরও উৎসাহী হয়ে ওঠেন। গত ১ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে আলোচনায় উঠে আসে বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম সেঞ্চুরি। ১৬৭.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ১৪ চার এবং ৪ ছক্কায় তিনি ইনিংসটি খেলেছিলেন।

আইপিএল নিলামে কোটিপতি ১৩ বছরের বিস্ময়বালকআইপিএল নিলামে কোটিপতি ১৩ বছরের বিস্ময়বালক
এক সাক্ষাৎকারে বৈভব বলেছিলেন, নানা পর্যায়ের ক্রিকেটে ৪০টি সেঞ্চুরি ও দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। পরে বিহারের অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের আসর রনধির ভার্মা টুর্নামেন্টে খেলেন ৩৩২ রানের ইনিংস। গত বছর চার দলের অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে বাংলদেশের বিপক্ষে ৭৫ রানের একটি ইনিংসও তিনি খেলেন। আইপিএলের নিলামে সোমবার ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে দল পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন বৈভব। তার ভিত্তিমূল্য ছিল ৩০ লাখ রুপি।

গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে বৈভব নিজেই বলেছেন, তার সত্যিকারের জন্মদিন ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। সেই অনুযায়ী তার বয়স এখন ১৫। তবে বয়স যদি সত্যি ১৫ হয় তার, তারপরও আইপিএলে কোটি টাকায় দল পাওয়া কম বিস্ময়কর নয়। যদিও তার বাবা সঞ্জীব দাবি করেছেন, ছেলের বয়স বেশি নয়। তার ভাষায়, ‘সে সাড়ে ৪ বছর বয়সে বিসিসিআইয়ের বোন টেস্টে (বয়স পরীক্ষা) অংশ নিয়েছিল। বোর্ড চাইলে সে আবার বয়সের পরীক্ষা দিতে পারে। এখানে ভয়ের কিছু নেই।’

ছেলের বয়স যাই হোক না কেন, আইপিএল নিলামে বৈভব দল পাওয়ার পর তার গর্বিত বাবা সঞ্জীব আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন। বার্তা সংস্থা পিটিআইকে তিনি জানিয়েছেন নিজের অনুভূতি এবং ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর সংগ্রামের কথা, ‘বৈভব এখন শুধু আমার সন্তান নয়, পুরো বিহারের সন্তান। আমার ছেলে কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমিও অনেক অর্থ ব্যয় করেছি। ওর খরচ জোটাতে নিজের শেষ সম্বল জমিও বিক্রি করেছি। এখনও আমাদের অর্থকষ্ট আছে।’

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles