-0.8 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

নতুনদের আনাগোনা চলে রান্নাঘরে

নতুনদের আনাগোনা চলে রান্নাঘরে
ঐ দূরে অটোয়া নদী তার ঐপারে আরেক প্রভিন্স কুইবেক এর পাহাড়

দেশে চাদর মুড়ি দেয়া শীতের সকাল শুরু হয় রান্নাঘরের খুটখাট শব্দে। আটা মাখানো প্যাচপ্যাচে শব্দে, আঠালো আটায় হাত আটকে যাওয়ায় এলুমিনিয়াম গামলা বাড়ি খেতে থাকবে ঠক ঠক শব্দে। ভাত ভাজির পটপট শব্দ। পেঁয়াজ, আলু কুচি করার খসখসে শব্দ। আলু-ফুলকপি ভাজি কড়াইয়ের ঢাকনা খুললেই শ শ শব্দে ভরে ওঠে সারা রান্নাঘর; ঠিক যেন বৃষ্টির দিনে হঠাৎ জানালা খোলার মতো। খুন্তি দিয়ে তরকারি উল্টানোর শব্দ। রুটি ছ্যাঁকা শেষে আটা ঝাড়তে হাতের তালু দিয়ে বাড়ি দেবার ঠাস ঠাস শব্দ। সবশেষে ডিম গোলানোর টকটক..।

দুপুরের বাজার আসার পর শুরু হবে মুরগি, মাছ কাটার ঘ্যাঁচাং ঘ্যাঁচাং শব্দ। টাকি, কোই কিংবা বেলে মাছ কাটার সময় ছাই মাখিয়ে মাথা আর লেজ ধরে বটির সাথে আগ-পিছ করে ঘষাঘষি করে আঁশ তোলার শব্দ।

- Advertisement -

মুলা কিংবা কলমি শাক সাফ করে বড়সড় আঁটি বানিয়ে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে বটিতে কাটবে; অনেকটা কাস্তে দিয়ে গরুর খড় কাটার মতো। চিচিঙ্গা বা পটলের গায়ের শক্ত চামড়া বটি দিয়ে ঘষে তোলার ভোঁতা শব্দ; যেন গাঁট থেকে ছুরি/তলোয়ার বের করার আওয়াজ। আর কিছু মিষ্টি আওয়াজ, তবে ক্ষীণ; সজনে ডাঁটা ছিলবার কিংবা লাউ বা মিষ্টিকুমড়া কাটবার।

যারা ভোজন রসিক, তারা খাবার তৈরিতে বেশ  সময় ব্যয় করে। শিলপাটায় বাটাবাটি করবে আদা, রসুন, হলুদ, জিরা, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, ধনে।

বাটা পেঁয়াজ-রসুনের ফ্লেভার ভালো। তারচাইতে ভালো শুকনা মরিচের। আরও ভালো আদা বা ধনিয়ার। সবচাইতে সেরা জিরা বাটার মিষ্টি সুবাস। মসলাগুলেো যখন চিতই পিঠার খোলার মতো প্লাস্টিকের পাত্রে (নাম জানি না) রাখা হয় ভাই রে ভাই.. যেন শীতের ফুলের বাগান; গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, শিউলি ফুলের সাজানো সাক্ষাৎ ফুলদানি।

বাটা মসলা দিয়ে যদি বোয়াল মাছের ভুনা কিংবা বেগুন-সিম দিয়ে ফলই মাছের ঝোল রান্না করে ফেলতে পারেন, তবে টেবিল ছেড়ে উঠতে বেশ কষ্ট হবে। মোটা করে ডিম ভেজে কষানো বাটা মশলার ঝোলের মধ্যে ছেড়ে দিলে? সাথে ঘন ডাল?

ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ করে বেগুন চাকাগুলো গরম তেলে পড়বে। ভাতের বলক ধাক্কাধাক্কি করে এলুমিনিয়ামের ঢাকনা সশব্দে মেঝেতে ফেলে ঝনঝন আওয়াজ তুলবে; মা-বউদের দৌড়াদৌড়ি করিয়ে মিছেই টেনশনে ফেলবে। সবাই ভাববে বিড়াল এসেছে।

ভাতের হাঁড়িগুলো এতোই দুষ্টু!

শুরু হবে টেবিলে খাবার গোছানোর শব্দ। ভারী  ভাতের গামলা রাখার ভোঁতা শব্দ। পাতলা থালা, চামচ, খালি পিরিচ রাখার ঠুনকো শব্দ। শুরু হবে গলাধঃকরণ। চেয়ারে পা তুলে হাপুস-হুপুস শব্দ।

বাংলাদেশের সব রান্না কথা বলে।

সব রান্নার ঘ্রাণের মতোই নিজস্ব ভাষা আছে।

একেক মানুষের রান্না একেক রকম। একসময় পুরানা মানুষগুলো ছাড়াই নতুনদের আনাগোনা চলে রান্নাঘরে। পুরানা ডাইনিং টেবিলেই বসতে হয় নতুনদের। তখন বুকের মাঝে নিস্তব্ধতা, হাহাকার পেয়ে বসে। টেবিল-চেয়ার, হাঁড়ি-পাতিল সবকিছুই থাকে; থাকে না শুধু সেই টুংটাং শব্দ, ডাক, ছোঁয়া..

তবে নিঃশব্দে ঠকই চলবে তাঁদের আনাগোনা; কখনও হারিয়ে যাবে না..

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles