9.6 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

সেই নারীর মামলা নিল পুলিশ

সেই নারীর মামলা নিল পুলিশ
ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর রমনা মডেল থানায় ওসির চেয়ারে বসে আছেন রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি)। পাশে এক নারী চিৎকার করে বলছেন, ‘আর কত সময় নেবেন। আমার লাশ পরলে আপনারা মামলা নেবেন।’ এমন এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

জানা গেছে, সাবেক স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে টানা ১৬ ঘন্টা রমনা মডেল থানায় অবস্থান করেও মামলা করতে না পারা মোছা. নীলা ইসরাফিল নামের এক নারীর ভিডিও এটি। তার সাবেক স্বামী মুয়াজ আরিফ রাজধানী ঢাকা ক্লাবে তাকে ডেকে নিয়ে মারপিট করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনায় সব ডকুমেন্ট নিয়ে মামলা করতে গেলেও আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় থানা রমনা থানার পুলিশ ভুক্তভোগী নারীর মামলা নিতে টালবাহানা শুরু করে। পরে চাপের মুখে মামলা নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।

- Advertisement -

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, ওসির রুমে ভুক্তভোগী নারী নীলা রমনা বিভাগের ডিসি মো. মাসুদ আলমকে বলছেন, এই হচ্ছে আমার ঢাকা মেডিকেলের সার্টিফিকেট, এই হচ্ছে প্রেসক্রিপশন, এই হচ্ছে আমার বিল’। এসময় তার মাথার চুল সরিয়ে ক্ষত দেখাতে গেলে, নিষেধ করছেন ডিসি।

ওই নারী তখন বলছেন, ‘আপনাকে দেখতে হবে। আমি কাল থেকে থানায় আছি।’ কপালের মাঝখানে ক্ষত ও সেখানে সেলাই থাকা দেখিয়ে বলছেন, ‘দেখেন ৬টি সেলাই। প্লিজ আপনি (ডিসি) দেখেন। ডিসি বলেন, ‘আমি দেখেছি।’

এসময় ডিসিকে ভুক্তভোগী নারীর স্বজন ও উপস্থিত জনতা প্রশ্ন করেন ১৬ ঘন্টার উপরে থানায় রয়েছে ভুক্তভোগী তবুও মামলা নিচ্ছেন না কেন? তখন ডিসি বলেন, ‘মামলা নিচ্ছি। আইন অনুযায়ি আমরা এটা দেখছি। রাতে কিভাবে যাচাই বাছাই করব।’ এসময় ভুক্তভোগী নারী তার এক্স-রে রিপোর্ট এর ফিল্ম তুলে ধরে বলেন, ‘আর কি কি আনতে হবে আমাকে প্রমাণ করতে। আর কত সময় নেবেন। আমার লাশ পরলে আপনি মামলা নেবেন। আমার মা ক্যান্সারের পেসেন্ট। মা গতকাল (রোববার) রাত ১২টা পর্যন্ত থানায় থেকেছেন। আমার বোন সকাল ৮ টায় থানায় এসেছে।’

মোছা. নীলা অভিযোগ করে বলেন, ‘সারা রাত থানায় ছিলাম। ওসি গোলাম ফারুক কোনো খোঁজ নেয়নি। একটু খাওয়ার পানিও দেওয়া হয়নি।’ তাকে থানায় হয়রানি করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন।

পরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলা নম্বর ২। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।

ভুক্তভোগী নারী নীলা যুগান্তরকে বলেন, রোববার রাত থেকে মামলা করতে চাইলে থানা-পুলিশ মামলা নিচ্ছিল না। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ যখন দেখে অভিযুক্ত ব্যক্তি মুয়াজ আরিফ উপদেষ্টা হাসান আরিফের ছেলে, তখন সবাই উঠে চলে যায়। মামলা নেয়নি। তাই মামলা নিতে পুলিশকে আমার বিষয়ে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে নীলা ইসরাফিলের সঙ্গে মোয়াজ আরিফের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। ২০২১ সালে আদলতের মাধ্যমে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে পুনরায় বিয়ের জন্য বললে সন্তানদের কথা চিন্তা করে রাজি হন এবং মোয়াজের ডাকে সাড়া দিয়ে চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর ঢাকা ক্লাবে দেখা করতে যান। সেখানে দীর্ঘসময় কাটানোর এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী নীলার সঙ্গে মোয়াজের তর্ক-বিতর্ক হয়। সেখানে শ্লীলতাহানী, ধারাল ছোড়া দিয়ে মাথায় আঘাত ও প্রাণে মেরে ফেলতে গলা চেপে ধরে। এছাড়াও ওইদিন রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালীন সময়ে নীলার বাসায় প্রবেশ করে ল্যাপটপ, মোবাইল, সার্টিফিকেট ও কয়েকটি ডিভাইস নিয়ে যায়। সেই ডিভাইস থেকে মোয়াজের বর্তমান স্ত্রী প্রিতি সাইদ তার ফেইজবুকে ছেড়ে ভাইরাল করেন।

থানায় ভুক্তভোগী নারীর হয়রানি ও মামলা নিতে টালবাহানার বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের ডিসি মো. মাসুদ আলম যুগান্তরকে বলেন, ওই নারীদেরকে বলা হয়েছিল বাসায় যেতে। আমরা তদন্ত করে সকালে মামলা রেকর্ড করব। কিন্তু তিনি থানায় অবস্থান করেন। তার চিল্লাচিল্লিতে ওসি থানা থেকে বের হয়ে যান। পরে সকালে প্রথম আলো অফিসে যারা হামলা করেছিল তাদের সঙ্গে করে এনে আমাদেরকে চাপে ফেলে। রাতে ভুক্তভোগীকে খাওয়ানো হয়েছে বলেও দাবি করেন ডিসি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles