
গেল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ছিল বেশ রমরমা। দুই বাংলার শিল্পীদের দুই দেশে আনাগোনা এবং কাজে শোভা বাড়িয়েছেন। কিন্তু গত আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সাংস্কৃতিক যোগাযোগে এখন ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। এর পরপরই বাংলাদেশিদের জন্য ভারত ভিসা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এদিকে আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হামলার পর বাংলাদেশও এই ইস্যুতে কঠোর হতে পারে।
ভিসা নিয়ে এই জটিলতায় এক দেশের শিল্পীদের অন্য দেশে কাজ করার ক্ষেত্রে এমনিতেই সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের শিল্পীদের বয়কটের ডাক দিয়ে পরিস্থিতি আরও বেগতিক করলেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সল্টলেক বিজেপি অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শমীক ভট্টাচার্য দাবি করেন, বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার’ চললেও অভিনয়শিল্পীরা নিরব। প্রতিবাদ না করলে তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের কাজ থেকে বয়কট করতে হবে।
এসময় এই বিজেপি নেতা বলেন, ‘কোনো ধর্মের মোড়কে বা উপাসনার পদ্ধতির মোড়কে আমরা কারো অভিনয় সত্তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাই না। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের শিল্পীদের বয়কট করতে হবে। সেখানকার যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী অভিনয়শিল্পী আছেন, তারা বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করুন। হিন্দু অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলুক তারপর তাদের শুটিংয়ে নামান। ওপার বাংলায় অত্যাচার চলছে, আর তারা এখানে সিনেমা করবেন, কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করবেন না, এটা তো হতে পারে না।’
এসময় বাংলাদেশের তারকা অভিনেত্রী জয়া আহসানের নাম উল্লেখ করে এই বিজেপি নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে জয়া আহসানের তো হিন্দু দর্শকও আছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিবাদ করছেন না। জয়া আহসান না হয়ে যদি উনি জয়া ভাদুড়ি হতেন, তাহলে একটা প্রশ্ন ছিল। উনার ছবি মুসলমানেরা যেমন দেখেন, তেমনি হিন্দুরাও দেখেন। উনাকে প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা এই ভিন্ন রাজনীতি চাই না।’
এরপর চঞ্চল চৌধুরীর প্রসঙ্গ তুলে শমীক বলেন, ‘চঞ্চল চৌধুরী বিখ্যাত নাম। এখন তিনি গৃহবন্দি। বাংলাদেশের অন্যান্য নায়ক নায়িকাদের নাম বলে আমি আর তাদের ব্যস্ত করতে চাই না। যারা এদিকে আশ্রয় নিয়ে আছে তারা ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক।’
পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদেরও একহাত নিয়েছেন শমীক। হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার শিল্পীদেরও প্রতিবাদ চোখে পড়ছে না। গৌতম ঘোষের প্রতিবাদ কোথায় গেল? তিনি তো বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা করেছেন। তাকেও কোনো কথা বলতে দেখছি না। প্রসেনজিতের মতো অভিনেতার কাছ থেকেও সমাজ এটা আশা করে।’